নয়াদিল্লি: তিনি অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন যদি প্রধানমন্ত্রী ‘ডিমোনেটাইজেশন’ নিয়ে চাপ দিতেন, তাহলে পদত্যাগ করতেন। নাম না করে অরুণ জেটলিকে আক্রমণ করে এমনটাই জানালেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম।


দিল্লি সাহিত্য উৎসবে যোগ দিতে এসেছিলেন চিদম্বরম। সেখানেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে জানাতেন যে তিনি ১০০০ ও ৫০০ টাকার নোটকে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাহলে আমি তাঁকে পরামর্শ দিতাম এমনটা না করতে।


প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের অধীনস্থ ইউপিএ জমানার অর্থমন্ত্রী যোগ করেন, আমি তাঁকে তথ্য ও পরিসংখ্যান দিতাম। তা সত্ত্বেও যদি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলতেন, দুঃখিত, এটা আমার সিদ্ধান্ত আর আমি এটা করবই—তাহলে আমি ইস্তফা দিতাম।


চিদম্বরমের কথাতেই স্পষ্ট, তাঁর লক্ষ্য ছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তবে, শুধু জেটলি নন, নোট বাতিল নিয়ে মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন চিদম্বরম। তাঁর দাবি, প্রধামনন্ত্রী (মোদী) যেমনটা বললেও, এই পদক্ষেপের ফলে দুর্নীতি, কালো বাজারি এবং জালনোটের রমরমা একেবারেই কমবে না। যদিও তিনি যোগ করেন, এই নোট বাতিলের পরে অবশ্য ডিজিটাল লেনদেনের ফলে সাময়িকভাবে লাভবান হবেন শহরাঞ্চলে বসবাসকারীরা।


কেন্দ্রকে আক্রমণ করে চিদম্বরম আরও দাবি করেন, নোট বাতিলের ফলে কী কী প্রভাব পড়তে পারে, সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকেও সঠিক তথ্য দেওযা হয়নি। তিনি মনে করেন, এমনকী, মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টার কাছেও কোনও খবর ছিল না।


তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত জানতেন না তাঁর সিদ্ধান্তের ফলে, বাজার থেকে প্রায় ৮৬ শতাংশ নোট বাতিল হবে। এক ধাক্কায় ২৩০০ কোটি নোটের পিস উধাও হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত জানতেন না, দেশের টাঁকশালের নোট ছাপার ঊর্ধ্বসীমা মাসে ৩০০ কোটি। ফলে, ২৩০০ কোটি নোট ছাপতে সময় সাত মাস সময় লাগার কথা।


চিদম্বরম জানান, তিনি অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন নবার কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্ট ট্যাক্স (সিবিডিটি) বা প্রত্যক্ষ কর সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় পরিচালন সমিতিও তাদের রিপোর্টে নোট বাতিলের বিরুদ্ধে মত দিয়েছিল।


প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেন, কেন্দ্রের বর্তমান সরকার এই সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত গোপনে নিয়েছে। তাঁর মতে, হতে পারে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনায় রাজি ছিল না কেন্দ্র। কিন্তু, এত বড় সিদ্ধান্ত নেওযার আগে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা বা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে আলোচনা করাই যেত বলে জানান তিনি।


মোদীর কথাকে হাতিয়ার করেই প্রধানমন্ত্রীকে তীব্র কটাক্ষ করেন চিদম্বরম। বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ৫০ দিন সময় চেয়েছেন। কিন্তু, চিদম্বরমের মতে, গরিবদের কাছে এই ৫০ দিন যন্ত্রণার দিন। তিনি বলেন, কোনও সিদ্ধান্তের ফলে যদি গরিব মানুষকে টাকা ধার করতে হয়, তাহলে সেটা অনৈতিক এবং অমানবিক।