নয়াদিল্লি: পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগে ফের বিদ্ধ National Council for Educational Research and Training (NCERT). ভারতীয় সমাজে বর্ণ ও জাতি ব্যবস্থার সমীকরণই বাদ দেওয়া হল এবার। পাশাপাশি, হরপ্পা সভ্যতার নাম পাল্টে 'সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতা' করা হয়েছে পাঠ্যবইয়ে। ভারতের নিজস্ব মূল মধ্যরেখাও ছিল বলে দাবি করা হয়েছে নয়া পাঠ্যবইয়ে। (NCERT Books)


প্রথম পরিবর্তনটি ঘটানো হয়েছে NCERT-র ষষ্ঠ শ্রেণির সমাজ বিজ্ঞান বইয়ে। অতিমারির সময় পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে এর আগে পাঠ্যক্রমে বদল ঘটিয়েছিল তারা। কিন্তু শুক্রবার NCERT যে বই প্রকাশ করেছে, তাতে পাকাপাকি ভাবেই পাঠ্যক্রম বদলে গিয়েছে। ভারতীয় সমাজের বর্ণনায় বেদের উল্লেখ থাকলেও বর্ণ ও জাতিবাদের কোনও উল্লেখ নেই।  নারীসমাজ এবং শূদ্রদের যে বেদ চর্চার অধিকারও ছিল না, বই থেকে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। (NCERT Row) 
'India's Cultural Roots' শীর্ষক অধ্যায়ে বেদের বর্ণনা রয়েছে। বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের কথাও রয়েছে বইয়ে। বলা হয়েছে, ভারতীয় সমাজে সেই সময় ভরত, পুরু, কুরু, যদু এবং তুর্বাশা গোষ্ঠীর মানুষজনের বাস ছিল। কিন্তু বেদে উল্লেখিত বর্ণ ও জাতিপ্রথার কোনও উল্লেখ নেই। যদিও আগের বইয়ের আগের সংস্করণে ভারতীয় সমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র জাতির বিভাজন ছিল বলে উল্লেখ ছিল। ভারতের বৈচিত্র্যময় সমাজের ব্যাখ্যায় কোথাও জাতি বৈষম্যের উল্লেখ নেই নয়া সংস্করণে। আগের সংস্করণে যেখানে দলিত কথাটির উল্লেখ ছিল, বিআর অম্বেডকরের লড়াইয়ের বর্ণনা ছিল, নয়া সংস্করণে বৈচিত্র্যের নামে ভিন্ন প্রকারের খাবার, পরিধান, উৎসব এবং সাহিত্যের উল্লেখ রয়েছে। 


আগের বইয়ে যেখানে প্রাচীন ভারতের সমাজব্যবস্থা, রাজবংশ সম্পর্কে বিশদ তথ্য ছিল, নয়া বই থেকে বাদ গিয়েছে অশোকের রাজত্ব, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, চাণক্য, অর্থশাস্ত্র, গুপ্তবংশ, পল্লব এবং চালুক্যদের কথাও। কুতুব মিনারের উল্লেখ নেই বইয়ে।  চতুর্থ অধ্যায়ে একবার মাত্র উল্লেখ রয়েছে অশোকের। কেন এত কাটছাঁট করা হল, তা নিয়ে NCERT-র যুক্তি, ২০২০-র জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নয়া বই তৈরি করা হয়েছে। পাঠ্যক্রমে যেমন পরিবর্তন ঘটেছে, তেমনই পাঠ্য বিষয়বস্তুও পাল্টেছে। শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলির উপরই জোর দেওয়া হয়েছে। 


এর পাশাপাশি, সমাজ বিজ্ঞানের বইয়ে হরপ্পা সভ্যতার নাম পাল্টে 'সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতা' করে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও উল্লেখ করা হয়েছে সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতা হিসেবেও। ভারতীয় সভ্যতার সূচনা কোথা থেকে, তার ব্যাখ্যায় বার বার সরস্বতী নদীর কথা উঠে এসেছে বইয়ে। আগের সংস্করণে ঋগ্বেদ নিয়ে লেখায় একবারই সরস্বতীর উল্লেখ ছিল। লেখা ছিল আরও অন্য নদীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা। নয়া বইয়ে লেখা হয়েছে, সরস্বতী সভ্যতায় রাখীগঢ়ি, গানওয়ারিওয়ালা নামের শহরের উল্লেখ। বর্তমানে সরস্বতী নদী ভারতে Ghaggar এবং পাকিস্তানে Hakra নামে বইছে বলে লেখা রয়েছে।


পাঠ্যবইয়ের ভূগোল বিভাগে কালীদাসের 'কুমারসম্ভব'-এর কবিতার রয়েছে। হিমালয়ের বর্ণনা করতে গিয়ে ওই কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন অংশের বর্ণনায় ব্যবহার করা হয়েছে তামিল সঙ্গম কবিতা। পৃথিবীর ভৌগলিক স্থানাঙ্ক পরিচয়ের যে অধ্যায় রয়েছে, তাতে লেখা হয়েছে, গ্রিনিচ মূল মধ্যরেখার ঢের আগে, ভারতের নিজস্ব মধ্যরেখা ছিল, যার অবস্থান ছিল উজ্জ্বয়ন শহরের ঠিক উপরে। ওই রেখার উপর ভিত্তি করেই ভারতের জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত যাবতীয় লেখালেখি হয়েছে।


National Institute of Educational Planning and Administration-এর চ্যান্সেলর এমসি পন্থের নেতৃত্বাধীন ১৯ সদস্যের কমিটি এই নয়া পাঠ্যবইয়ের দায়িত্বে ছিল। ওই কমিটিতে ছিসেন সমাজসেবী তথা লেখিকা সুধা মূর্তি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারপার্সন বিবেক দেবরায়, বিজেপি-র অভিভাবক সংস্থা রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘের শাখা সংগঠন 'সংস্কৃত ভারতী'র প্রতিষ্ঠাতা চামু কৃষ্ণ শাস্ত্রী, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মঞ্জুল ভার্গব এবং সঙ্গীত শিল্পী শঙ্কর মহাদেবন।


আরও পড়ুন: Bangladesh Supreme Court: শতাধিক মৃত্যুর পর সংরক্ষণ নিয়ে বড় রায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের, কোটা ব্যবস্থায় সংস্কারের নির্দেশ


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI