নয়াদিল্লি:  এক বছরের মাথায় লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha Elections 2024)। চলতি বছরে বিধানসভা নির্বাচনও রয়েছে একাধিক রাজ্যে। তার আগে একাধিক রাজ্যে সাংবিধানিক প্রধানের রদবদল ঘটাল কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যস্তরে দলের অন্দরে কোন্দল মেটাতেও এই রদবদল ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল, যার মধ্যে পড়ছে ভোটমুখী রাজস্থান (New Governors Appointment)।


একাধিক রাজ্যে সাংবিধানিক প্রধানের রদবদল ঘটাল কেন্দ্রীয় সরকার


রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্যপাল মোতায়েন থাকেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক প্রধান, নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসীন হন তিনি। সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাজ্যপালকে সেখানে পাঠায় কেন্দ্র। সাম্প্রতিক কালে একাধিক অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যে স্থানীয় সরকাররে সঙ্গে রাজ্য়পালে বিবাদ লক্ষ্য করা গিয়েছে। সাংবিধানিক পদে থেকে তাঁরা প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ করছেন বলে উঠেছে অভিযোগ।


সেই আবহেই একাধিক রাজ্যে রদবদল ঘটাল কেন্দ্রে। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এস আবদুল নাজিরকে অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল নিযুক্ত করা হল। অন্ধ্রপ্রদেশে এতদিন রাজ্যপাল পদে থাকা বিশ্বভূষণ হরিচন্দন ছত্তীসগঢ়ের রাজ্যপাল নিযুক্ত হলেন। ছত্তীসগঢ় থেকে সরিয়ে অনুসূয়া উইক্যে মণিপুরের নয়া রাজ্যপাল হলেন।


একই ভাবে মণিপুর থেকে সরিয়ে লা গণেশনকে নাগাল্যান্ডের রাজ্যপাল নিয়োগ করা হল। বিহার থেকে মেঘালয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল ফাগু চৌহানকে। হিমাচল প্রদেশ থেকে বিহারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল রাজেন্দ্র বিশ্বনাথ আরলেকরকে।


রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর রাধাকৃষ্ণ মাথুরের পদত্যাগপত্রও গ্রহণ করেছেন। তাঁর জায়গায় অবসরপ্রাপ্ত বিতারপরি বিডি মিশ্রকে তাঁর জায়গায় রাজ্যপাল নিযুক্ত করা হয়েছে। এত দিন অরুণাচল প্রদেশের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেখানে লেফটেন্যান্ট জেনারেল কৈবল্য ত্রিবিক্রমকে নিযুক্ত করা হয়েছে। লক্ষ্মণপ্রসাদ আচার্য সিকিমের রাজ্যপাল হলেন। ঝাড়খণ্ডে সিপি রাধাকৃষ্ণণ, অসমে গুলাবচাঁদ কাটারিয়া এবং হিমাচলপ্রদেশে শিবপ্রতাপ শুক্লকে নিয়োগ করল কেন্দ্র। মহারাষ্ট্রের নতুন রাজ্যপাল হলেন রমেশ বইস। সেখান থেকে পদত্যাগ করলেন ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি।


আরও পড়ুন: PM Modi: দোরগড়ায় ভোট, ত্রিপুরায় ঝড় তুলতে জোড়া নির্বাচনী সভা মোদির


এর মধ্যে গুলাবচাঁদ কাটারিয়া, যিনি অসমের রাজ্যপাল হলেন, এতদিন রাজস্থান বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা ছিলেন। এ বছর বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার দৌড়েও নাম শোনা যাচ্ছিল তাঁর। সেই নিয়ে দলের অন্দরে ফাটল চওড়া হচ্ছিল। কারণ গুলাবচাঁদকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা নিয়ে আপত্তি ছিল রাজস্থান বিজেপি-র একাংশের। তাই তাঁকে সরিয়ে ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।


আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি বিধানসভা নির্বাচন মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডে।  সেখানে রাজভবনে অভিজ্ঞ লোককে চাইছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। কারণ দুই রাজ্যেই অশান্তির নজির রয়েছে। তাই ভোটপরবর্তী সময়ে অভিজ্ঞ কারও প্রয়োজন পড়তে পারে বলে মত দলীয় নেতৃত্বের। তাই বিহার থেকে ফাগুকে সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। নাগাল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে গণেশনকে।


এর আগে, তামিলনাড়ুতে বিজেপি-র দায়িত্ব ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন চন্দ্রকৃষ্ণণ। তাতে রাজ্য সভাপতি পদে কে আন্নামালাইয়ের মেয়াদ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা যায়। চন্দ্রকৃষ্ণণকে  সরিয়ে এনে আন্নামালাইয়য়ের জায়গা পাকা করে দেওয়ার প্রচেষ্টা দেখা গেল বলে মত রাজনৈতিক মহলের। কোয়েমাত্তুর থেতে আন্নামালাইকে কোয়েম্বাত্তুর থেকে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী করাও হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে, যা এতদিন রাধাকৃষ্ণণের আসন ছিল একসময়।


একসঙ্গে এত জন রাজ্যপাল বদলের সিদ্ধান্ত কেন, উঠছে প্রশ্ন


আজীবন সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শিবপ্রতাপ। বর্তমানে রাজ্যসভায় বিজেপি-র চিফ হুইপও তিনি। তাঁকে দলের প্রতি আনুগত্যের পুরস্কার স্বরূপই হিমাচলের দায়িত্ব দেওয়া হল বলে শোনা যাচ্ছে বিজেপি-র অন্দরে। ঝাড়খণ্ড থেকে রমেশকে মহারাষ্ট্র নিয়ে যাওয়ার পিছনেও রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে বলে মত রাজনীতিকদের । ছত্তীসগঢ় থেকে সাত-সাত বার বিজয়ী রমেশ নির্বাচনী রাজনীতিতে অভিজ্ঞ। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বিরুদ্ধে ওঠা স্বার্থের সংঘাত মামলার নেপথ্যেও তাঁর ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও ঘনিষ্ঠ রমেশ। ঝাড়খণ্ডে তিনি বিধায়ক কেনাবেচার জন্য বিজেপি-কে সময় দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। মহারাষ্ট্রে শিবাজি-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে বিজেপি-র অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ভগৎসিংহ। তাই রমেশকে তাঁর জায়গায় এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হল বলে জল্পনা।