দীপক ঘোষ ও অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: দলবদলের জল্পনা উড়িয়ে দিলেন বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ি। বললেন, বিজেপিতেই থাকবেন। অন্যদিকে, আচমকাই বিজেপির সাংস্কৃতিক আহ্বায়কের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন অভিনেতা সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়।
কয়েকদিন ধরেই তাঁর দলবদল ঘিরে জল্পনা তৈরি হচ্ছিল। আজ দলবদলের জল্পনা ওড়ালেন বালুরঘাটের বিজেপির বিধায়ক অশোক লাহিড়ি। বললেন, আমার নামে যে রটনা চলছে, সেটা মিথ্যে। আমি বিজেপির বিধায়ক। বালুরঘাট থেকে জিতেছি। বিজেপিরই এমএলএ আছি।
বিধানসভা ভোটে হারের পর থেকেই রাজ্য বিজেপিতে শুরু হয়েছে ভাঙন। কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায় থেকে শুরু করে বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ। বাগদার বিশ্বজিৎ দাস থেকে শুরু করে কালিয়াগঞ্জের সৌমেন রায়-- একে একে চারজনই তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়েছেন।
গেরুয়া শিবির ছেড়ে ঘাসফুল শিবিরে গিয়েছেন মোদি মন্ত্রিসভার প্রাক্তন সদস্য আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ও। এই পরিস্থিতিতে, বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ির দলবদলের সম্ভাবনা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়।
উত্তরবঙ্গে বিজেপি বিধায়কদের সম্মেলন অশোক লাহিড়ি উপস্থিত না থাকায় সেই জল্পনা আরও জোরদার হয়। কিন্তু, মঙ্গলবার যাবতীয় জল্পনা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক।
তিনি বললেন, আমার কাছে কোনও রাজনৈতিক দল অফার নিয়ে আসেনি। কোনও নেতাও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তবে ওরাও আমাদের শত্রু নয়। পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের স্বার্থে মমতা সাহায্য চাইলে তা করতে রাজি। কিন্তু আমি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গিয়ে কিছু করব না। আমি ঝরা মুকুল নই, তৃণমূলে যাব না, বিজেপিতেই থাকব।
২০০২ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ভারত সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন অশোক লাহিড়ি। একসময় ছিলেন অর্থমন্ত্রকের অর্থনৈতিক উপদেষ্টাও। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টরের পদও সামলেছেন দক্ষ হাতে। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের (IMF) সিনিয়র ইকনমিস্টও ছিলেন একসময়। এহেন অশোক লাহিড়িই ২০২১ সালে বালুরঘাট বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জয়লাভ করেন।
অশোক লাহিড়ি জল্পনায় জল ঢাললেও, বিজেপির আরেক নেতা তথা অভিনেতা সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় আচমকা এদিনই বিজেপির সাংস্কৃতিক আহ্বায়কের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন। মঙ্গলবার দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে তাঁর ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি।
প্রায় বছর পাঁচেক আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে রাজ্য কমিটির আমন্ত্রিত সদস্যপদ দেওয়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সেলের আহ্বায়কও করে দল।
কিন্তু, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে পায়েল সরকার, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, তনুশ্রী চক্রবর্তী, যশ দাশগুপ্তর মতো সদ্য দলে আসা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রার্থী করলেও, ব্রাত্য থেকে যান সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়।
এরপর ভোটে বিজেপির পরাজয়ের পর থেকেই তাঁকে আর সেভাবে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছিল না। আর এদিন হঠাত্ই বিজেপির সাংস্কৃতিক আহ্বায়কের পদ থেকে ইস্তফা।
ইঙ্গিতপূর্ণভাবেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গে জল্পনা জিইয়ে রাখলেন অভিনেতা। বললেন, আমি আপাতত বিজেপিতে আছি। আগামীকাল কী হবে, বলতে পারছি না।
অভিমানের সুরে এদিন সুমন বলেন, যখন এসি থাকে, তখন কি আর হাতপাখা লাগে? প্রচারে কাজে লাগানো হয়নি কেন? ভুলে গিয়েছিল হয়ত। সম্মান না পাওয়ায় পদত্যাগ করলাম।
সম্প্রতি বিজেপি ছেড়েছেন অভিনয় জগতের দু’ই পরিচিত মুখ অনিন্দ্যপুলক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রূপা ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন: এবার তৃণমূলে যোগদান কালিয়াগঞ্জের বিজেপি বিধায়কের
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গেও বিজেপির দুর্গে ফাটল? দলীয় কর্মসূচিতে ৫ বিধায়কের গরহাজিরা নিয়ে জল্পনা