কলকাতা: শোভন চট্টোপাধ্যায় এখন রাজনীতি থেকে কার্যত দূরে। এবার শোভনের ছেড়ে যাওয়া ওয়ার্ড থেকে ভোটে জিতে কাউন্সিলর হলেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। একসময়ে স্রেফ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘরণী, রত্না চট্টোপাধ্যায়ের নেমপ্লেটে যোগ হল আরও একটি পরিচিতি। বিধায়ক হওয়ার সাত মাসের মধ্যে কাউন্সিলর হলেন রত্না। গত ২০১৫ সালের কলকাতা পুরভোটে এই ওয়ার্ড থেকে ছ’হাজার ২৯৫ ভোটে জিতেছিলেন শোভন। এ বারের পুরভোটে প্রার্থী পছন্দ হয়নি বলে দাবি করে রবিবার ভোটদানও করেননি কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র শোভন। মঙ্গলবার ভোটে জয়ের পর যা নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন রত্না। এবার তার পাল্টা দিলেন শোভন।


সাফ জানিয়ে দিলেন, "মিথ্যা, কল্পনাপ্রবণ, স্বভাববশত মিথ্যেবাদীর মতো কথা বলে আজ বাজার গরম করছেন। নির্বাচন হয়ে গেছে। ফার্স্ট পোল প্রকাশিত হয়ে গেছে। বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেছি। অনুগ্রহ করে ঘাড় থেকে নামুন।"


বিপুল জয়ের পর রত্না বলেছিলেন, "আমি ১০ হাজার ২০৬ ভোটে জিতেছি। এই জয় মানুষের জয়। ১৩১ ওয়ার্ডের জয়। উনি (শোভন চট্টোপাধ্যায়) বলেছেন প্রার্থী পছন্দ হয়নি। ওঁর প্রার্থী পছন্দ না হলেও এই ওয়ার্ডের সকলের পছন্দ হয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক ভোটে কেউ জেতেনি এর আগে। বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সময় আমার মেয়েকে বলেছিলেন, আমি দেখে নেব তোমার মা আমাকে ছাড়া কীভাবে স্ট্যান্ড করে। আমি দেখিয়ে দিলাম আমি স্ট্যান্ড করেছি।"  



আরও পড়ুন, জয়ের আনন্দ, নাতনিকে কাঁধে নিয়ে নাচলেন 'দাদু' ফিরহাদ


রত্নার এই মন্তব্যেরই পাল্টা দেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। এই বেহালা একসময় পরিচতি ছিল মেয়রের এলাকা বলে। কিন্তু, বেহালার সেই গর্বের দিন গেছে। শোভন চট্টোপাধ্যায় মেয়রের পদ ছেড়েছেন। ছেড়েছেন বেহালাও। তাঁর ছেড়ে যাওয়া ওয়ার্ডে এবার তৃণমূলের টিকিটে লড়ছেন শোভনের ঘরনী রত্না। যাই হোক, প্রাক্তন মেয়রের এলাকার এই  তকমাটা ছাড়াও, কলকাতার চোদ্দ নম্বর বরোর আরও বেশ কিছু আকর্ষণ রয়েছে। যেমন, বেহালা ফ্লাইং ক্লাব, শতাব্দী প্রাচীন সোনার দুর্গা কিংবা সুসজ্জিত পর্ণশ্রী লেক। এই বরোতে সাতটি ওয়ার্ড রয়েছে। বিধানসভা ভোটের ওয়ার্ডভিত্তিক ফলের নিরিখে সবক’টায় লিড পেয়েছিল তৃণমূল। 


প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে শোভন বেহালা থেকেও দূরে। এখন তাঁর ঠিকানা  বেহালা থেকে প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার দূরে গোলপার্কের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। কলকাতা পুরসভার মেয়র পদে ইস্তফা দেন শোভন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি এরাজ্যে ভাল ফল করার পর, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান তিনি।  যদিও, তারপর নতুন দলের কোনও কর্মসূচিতেই দেখা যায়নি এই জুটিকে। 
বিধানসভা ভোটের আগে, আবার নতুন পদ পেয়ে তেড়েফুঁড়ে প্রচারে নামেন তাঁরা। কিন্তু, বিজেপির প্রার্থীতালিকায় সামনে আসতেই দেখা যায়, শোভন বা বৈশাখী কারও নাম সেখানে নেই। এরপরই বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দলকে চিঠি দেন তাঁরা।


অন্যদিকে, তাঁর ছেড়ে যাওয়া জায়গায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে, রত্না চট্টোপাধ্যায় আজ পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ছেড়ে যাওয়া, বেহালা পূর্ব বিধাসভা কেন্দ্র থেকে জিতে তিনি বিধায়ক হয়েছেন।এবার শোভনের ১৩১  নম্বর  ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও তিনি।