কলকাতা: রাজা রামমোহন রায়কে ইংরেজদের দালাল বলে তুমুল বিতর্কের মুখে পড়লেন বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিং পারমার। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাংলার মনীষীদের অপমান করছে বিজেপি। সুর চড়াল তৃণমূল। দেশজুড়ে বিতর্কের জেরে শেষমেশ নিজের মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী।
মধ্যপ্রদেশ বিজেপি নেতা ও শিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিংহ পারমার বলেন, যেখানে দেশের বেশকিছু মানুষকে ইংরেজরা হাতে রেখেছিল। যার মধ্যে রাজা রামমোহন রায়ও ছিলেন। উনিও ইংরেজদের দালাল হিসেবে দেশে কাজ করে গেছেন। বিহারে বিপুল ভোটে জয়ের পর, আগামী বছর বাংলা দখলের ডাক দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী...আর এরই মধ্যে রাজা রামমোহন রায়কে ব্রিটিশদের দালাল বলে, তুমুল বিতর্কের মুখে পড়লেন বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিং পারমার। মধ্যপ্রদেশ বিজেপি নেতা ও শিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিংহ পারমার বলেন, ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে দেশের মানুষের আস্থাকে বদলে দেওয়ার কাজ চলছিল। যেখানে দেশের বেশকিছু মানুষকে ইংরেজরা হাতে রেখেছিল। যার মধ্যে রাজা রামমোহন রায়ও ছিলেন। উনিও ইংরেজদের দালাল হিসেবে দেশে কাজ করে গেছেন। উনি ধর্মান্তরণের যে চক্র চালিয়েছিলেন সেটাকে আটকানোর সাহস যদি কেউ দেখিয়েছিলেন সেটা বীরসা মুণ্ডা করেছিলেন। ...বাঁচানোর কাজ, আদিবাসী সমাজকে বাঁচানোর কাজ যদি কেউ করে থাকেন, সেটা বীরসা মুণ্ডা করেছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, রাজা রামমোহন রায় নাকি ব্রিটিশের দালাল ছিলেন! কারা বলছে, যারা ব্রিটিশের দালালি করেছে। কারা বলছে, যারা ব্রিটিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে বলেছে ব্রিটিশের অনুগত্য থাকব আর কাকে বলছে? বাঙালির অন্যতম সেরা সমাজ সংস্কারকে। বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। এই আবহে ৭ নভেম্বর, শুক্রবার দেশ জুড়ে পালিত হয়েছে বঙ্গিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'বন্দে মাতরম' গানের সার্ধশতবর্ষ। দিল্লির অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।আর শুক্রবার বিহারের জয়ের পর তো পরিষ্কার বুঝিয়েই দিয়েছেন যে, বিজেপির পরবর্তী টার্গেট পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসা। কিন্তু, সে সবে যেন জল ঢেলে দিলেন মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর এহেন মন্তব্যের সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিশিষ্টজনরাও। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, বালখিল্যর মতো কথা। ওরা ভাল করে জানে না। না জেনেশুনেই এইসমস্ত মন্তব্য করছেন। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কারণ রাজা রামমোহন রায় শুধু বাংলার নয়, সমস্ত ভারতবর্ষের একজন কী বলব! মস্ত বড় চিন্তাবিদ ছিলেন। ওই মাপের একটা মানুষ। তার সম্পর্কে এরকম কথা বলা এটা একদম বালকোচিত, হাস্যকর।
এদিকে রামমোহনকে নিয়ে মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে তৃণমূল। অতীত মনে করিয়ে দলের এক্স হ্যান্ডলে লেখা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে অমিত শাহর সমাবেশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের (প্রাক্তন) রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার স্বামী বিবেকানন্দকে 'confused leftist' বলেছেন। জে পি নাড্ডা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান ভুল বলেছেন। এবং উত্তরপ্রদেশে স্কুলের পাঠ্যবই থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম সরিয়ে দিয়েছে বিজেপি। তৃণমূল রাজ্য় সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, রামমোহন রায়কে যেভাবে ব্রিটিশের দালাল বলেছেন, আমরা তীব্র প্রতিবাদ করছি। আসলে ব্রিটিশ বিরোধী লড়াই, বাংলার নবজাগরণ, ভারতবর্ষের জেগে ওঠা, এগুলোর সঙ্গে এই বিজেপির ঘরানার লোকদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। সেই কারণেই তারা এই ধরনের কথাবার্তা বলতে পারেন অথবা তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাংলার মনীষীদের অপমান করছেন, বাংলার মাটিকে অপমান করছেন। রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা রদ করেছিলেন। তাহলে কি বিজেপি সতীদাহ প্রথা সমর্থন করে? সম্প্রতি বন্দে মাতরমের প্রশংসা করতে গিয়ে বিশ্বকবির লেখা জনগণমন সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য় করেন কর্ণাটকের বিজেপি সাংসদ বিশ্বেশ্বর হেগড়ে কাগেরি।আর এবার রামমোহন সম্পর্কে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেন মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী।