নয়াদিল্লি: অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ, তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুন। তার পরও ভাল আচরণের জন্য স্বাধীনতা দিবসে মেয়াদ শেষের আগেই মুক্তি ধর্ষকদের (Bilkis Bano Case)। মালা পরিয়ে জেলের বাইরে সম্বর্ধনা, ব্রাহ্মণসন্তান হওয়ার সার্টিফিকেট। গুজরাত এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সেই সিদ্ধান্তে সমোলাচনার ঝড় হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশে। এ বার বিলকিসের ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আদৌ সঠিক কিনা, বিশেষ বেঞ্চ গড়ে তা পর্যালোচনা করে দেখতে রাজি হল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। 


ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বিলকিস। তাতেই বিলকিসের আবেদনের শুনানিতে রাজি হল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার সর্বোচ্চ আদালত এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। এ আগে, গত মাসেই প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বিশেষ বেঞ্চ গঠনের কথা জানিয়েছিলেন। বিলকিসের আইনজীবী শোভা গুপ্ত জানিয়েছেন, প্রথমে বিচারপতি অজয় রাস্তোগি এবং বিচারপতি বেলা এ ত্রিবেদীর বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। বিচারপতি রাস্তোগিই আগের বার ধর্ষকদের সাজা মকুবের বিষয়টি ভেবে দেখতে অনুমতি দিয়েছিলেন গুজরাত সরকারকে। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালে গুজরাত সরকারের আইন বিভাগের সচিব ছিলেন বিচারপতি ত্রিবেদী। তিনি বিলকিসের আবেদনের শুনানি থেকে সরে দাঁড়ান। 


সব মিলিয়ে চার বার বিষয়টি ধাক্কা খেয়েছে। তবে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, আজই বিষয়টি নিয়ে বসবেন। বিশেষ বেঞ্চ গড়বেন শুনানির জন্য। বিলকিসের আবেদনের শুনানিতে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার বিশেষ বেঞ্চ গড়তে রাজি হল সুপ্রিম কোর্ট।


আরও পড়ুন: Dia Mirza: বিচ্ছেদ আতঙ্ক! 'ভিড়'-এ অভিনয় করতে গিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন দিয়া!


গুজরাত দাঙ্গায় পাশবিক অত্যাচারের শিকার হন বিলকিস। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বিলকিস, কোলের সন্তান এবং পরিবারের মোট ১৫ জন সদস্যের সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। ধূ ধূ জমি ঘিরে গজিয়ে ওঠা ঝোপের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই সময় কাস্তে, তলোয়ার, লাঠি নিয়ে ২০-৩০ জনের দল তাঁদের উপর চড়াও হয়। গণধর্ষণের শিকার হন বিলকিস। বিলকিসের চোখের সামনে পরিবারের সাত সদস্যকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। কোনও রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে পালান ছ’জন।


তার পরেও দীর্ঘ দিন এ নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সমাজকর্মীদের তৎপরতায় বিষয়টি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হলে, ২০০৪ সালে ওই ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। আমদাবাদে শুরু হয় শুনানি। কিন্তু সেখানে তদন্ত হলে, প্রমাণ লোপাট করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিলকিস। তাতে আমদাবাদ থেকে মুম্বইয়ে মামলাটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তার পর সিবিআই আদালত ওই ১১ জনকে যাবজ্জীবনের সাজা শোনায়। গর্ভবতী মহিলাকে ধর্ষণের ষড়যন্ত্র, খুন এবং বেআইনি জমায়েত ধারায় তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। প্রমাণের অভাবে ছেড়ে দেওয়া হয় অন্য সাত জনকে। শুনানি চলাকালীনই মৃত্যু হয় এক জনের।


এর পর, ২০১৮ সালে বম্বে হাইকোর্ট সেই সাজা বহাল রাখে। অন্য সাত জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তও খারিজ করে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ক্ষতিপূরণবাবদ বিলকিসকে ৫০ লক্ষ টাকা, চাকরি এবং বাড়ি দিতে হবে বলে গুজরাত সরকারকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।  কিন্তু দোষী সাব্যস্ত হয়েও প্রত্যেকে প্যারোলে অন্তত ১ হাজার দিন করে জেলের বাইরে থেকেছে। তার পর তাদের মধ্যে একজন সুপ্রিম কোর্টে সাজা মকুবের আবেদন জানায়। গুজরাত সরকারকে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে বলে শীর্ষ আদালত। সেই মতো একটি কমিটি গঠন করে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত সরকার। তাতেই ওই ১১ জনের সাজা মকুবের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়গত বছর। সেই মতো ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন জেল থেকে বেরিয়ে আসে বিলকিসের ধর্ষকরা।