বিজেন্দ্র সিংহ, দীপক ঘোষ ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, এবিপি আনন্দ: কংগ্রেস দলটির মধ্যে কিছু পারিবারিক সমস্যা থাকতে পারে, কিন্তু সেই সমস্যা যেন বিরোধীদের ঐক্যে বাধা না হয়। জাতীয়স্তরে মোদি বিরোধী জোট প্রসঙ্গে শিবসেনার নিশানায় মহারাষ্ট্রের জোটসঙ্গী কংগ্রেস। দলের মুখপত্র সামনায় কংগ্রেসের সমালোচনা শিবসেনার। শুধু তাই নয়, ইউপিএ (UPA)-কে শক্তিশালী করার পক্ষে সওয়ালের পাশাপাশি বিজেপির বিরোধিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকার প্রশংসাও করা হয়েছে শিবসেনার মুখপত্রে।


৪ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে একচেটিয়া জয় পেয়েছে বিজেপি (BJP)। তারপরেই বিরোধীদের দিকে কটাক্ষ ছুড়েছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের প্রশ্ন, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির চ্যালেঞ্জার কে? এই প্রেক্ষাপটেই সুর চড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ব্যবহারের অভিযোগ তুলে অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি দিয়ে, ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তাঁর এই ভূমিকাকেই স্বাগত জানিয়েছে শিবসেনা (Shiv Sena)। তাদের মুখপত্র সামনায় একদিকে তৃণমূল নেত্রীর প্রশংসা করা হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের (Congress) এখন কী গুরুত্ব, সেটাও মনে করিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে!


কী বলেছে শিবসেনা:
মহারাষ্ট্রে, কংগ্রেস আর এনসিপি’(NCP) কে সঙ্গে নিয়ে জোট সরকার চালানো শিবসেনার মুখপত্র সামনার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, কংগ্রেস দলের মধ্যে কিছু পারিবারিক সমস্যা থাকতে পারে, কিন্তু এই সমস্যা যেন বিরোধীদের ঐক্যে বাধা না হয়। শরদ পাওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কেজরিওয়াল, কে চন্দ্রশেখর রাও, এম কে. স্ট্যালিন - প্রত্যেকেই প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব। নতুন বিরোধী জোটের প্রেক্ষাপটে তাঁদের নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। কংগ্রেস এর জন্য কোনও প্রচেষ্টা শুরু করেনি। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এগিয়ে আসতে হয়েছিল। 


শিবসেনার পরামর্শ, বিরোধীদের ঐক্যের জন্য পদক্ষেপ করতে হলে UPA-কে সংস্কার করতে হবে। UPA এখন কংগ্রেসের নামে রয়েছে। তাতে কিছু পরিবর্তন করা ছাড়া বিরোধীদের একজোট হওয়া সম্ভব মনে হয় না। 


শিবসেনার (Shiv Sena) সাংসদ ও মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত বলেন, 'ইউপিএ-কে মজবুত করতেই হয়, তাহলে এগিয়ে আসতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু আপনাদের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। সেটা আমাদের চিন্তার কারণ। তাহলে বিপক্ষের অন্য কোনও বড় নেতা, এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করেন, তাহলে আমাদের তো ভাবতেই হবে।' কংগ্রেসের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছে তৃণমূলও (TMC)। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ, 'কংগ্রেস দুর্বল হয়েছে নিজে, তাদের দায়।' গত বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে হারানোর পরে জাতীয়স্তরে বিরোধীদের একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 


কংগ্রেসের পাল্টা:
তৃণমূলের মনোভাব নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেসও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, 'আমরা সব সময় চাই বিজেপি বিরোধী শক্তিকে একজোট করতে, মমতা একসময় চিঠি দেন, এরপর কংগ্রেস বিরোধী অবস্থান নিলেন।' মুখ খুলেছে সিপিএমও (CPM)। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শমীক লাহিড়ি বলেন, 'বিজেপিকে রুখতে হবে, সমস্ত বিজেপি বিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।'


বিরোধী জোট নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, 'জোট বা ঘোঁট যা খুশি গড়ুক। আমরা দেখেছি লোকসভায় শিবসেনার পক্ষ থেকে পরিষ্কার বলা হয়েছে, আমাদের বলেছেন হিন্দুত্ব আমাদের শেখাতে আসবেন না। আমরা এই স্কুলের হেডমাস্টার। সেই রকম দলের সঙ্গে কী তৃণমূল যাবে? বা তারা কি যাবে? গেলে হিন্দুত্বের দাগ মমতার গায়ে লাগবে না তো? সেটা ঠিক করতে হবে।'


আরও পড়ুন: রাজ্যসভায় সেঞ্চুরি, নয়া রেকর্ডের পথে বিজেপি