নয়াদিল্লি: কাটমানি বিতর্কে উত্তপ্ত ছিল ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেও নতুন করে ফিরছে অভিযোগ। দলে থেকে ঠিকেদারি চলবে না বলে হলদিয়ার সভায় বলতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে। আরও একবার তা নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), এবিপি নিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে । 


এবিপি নিউজের প্রতিনিধি মনোজ্ঞা লোইওয়ালের সঙ্গে কথোপকথনে কাটমানির প্রসঙ্গ উঠে আসে। এই কাটমানি (Cut-Money) আসলে কী, প্রশ্ন করা হয় অভিষেককে। জবাবে তিনি বলেন, "কাটমানির অভিযোগ তুলছেন যাঁরা, তাঁরাই ভাল ব্যাখ্যা করতে পারবেন। ওঁদের সঙ্গে সব তদন্তকারী সংস্থাগুলি রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ করে দেখান ওঁরা! কেউ যুক্ত থাকলে, সোজা জেলে ঢুকিয়ে দিন। উপর থেকে নিচে পর্যন্ত, জেলে ভরে দিন!" তৃণমূলের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবহার করে ধমকানো-চমকানোর অভিযোগ করেন বিরোধীরা। সেই নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে অভিষেক বলেন, "ইডি-সিবিআই-এর চেয়ে বেশি ভয় দেখানো, হুমকির কাজ বাংলার পুলিশ করে থাকে বলে যদি দাবি করেন ওঁরা, তাহলে বলব, এটাই বাংলার মডেল, গোটা দেশের এই মডেল অনুসরণ করা উচিত।"


নিয়োগ থেকে কয়লা, গরুপাচার দুর্নীতি নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে উত্তাল বাংলার রাজনীতি। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে রয়েছেন। এত টাকার নয়ছয়, অথচ কিছুই জানতে পারল না তৃণমূল, নাকি তাদের বুঝতে দেরি হয়েছিল, প্রশ্ন করা হয় অভিষেককে। তাতেো অকপট জবাব দেন অভিষেক। বলেন, "বিজেপি-ও ধোয়া তুলসিপাতা নয়। মানছি আমি। দলের কিছু লোকের কাজে দলের সমর্থন নেই। প্রকাশ্যে সে কথা বলেছি একাধিক বার। মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় বলেছেন, আমি নিজেও বলেছি। অন্যায় করলে অবশ্যই সাজা হওয়া দরকার। তবে আমার মনে হয়, তৃণমূলই একমাত্র দল, ধরা পড়লে হয় সাসপেন্ড  করেছে, নয় সরিয়ে গিয়েছে পদ থেকে, জেলে আছেন অনেকে। মামলা বিচারাধীন। আইন আইনের পথেই চলবে।" (BJP)


আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee Exclusive: তিনিই মমতার উত্তরাধিকারী, আগামীর মুখ্যমন্ত্রী! একান্ত সাক্ষাৎকারে জবাব দিলেন অভিষেক


দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে যেমন কড়া অবস্থানের কথা জানিয়েছেন, তেমনই বিজেপি-কেও তীব্র কটাক্ষ করেন অভিষেক। তৃণমূলে থাকাকালীন যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল, বিজেপি-তে গিয়ে কোন মন্ত্রবলে তাঁরা ধোয়া তুলসি পাতা হয়ে গেলেন প্রশ্ন তোলেন। অভিষেকের বক্তব্য, "অপরাধ করে বিজেপি-তে গেলেই সব ধোয়া তুলসিপাতা, মোমের পুতুল হয়ে যায়। ওয়াশিং মেশিন বিজেপি, সেখানে সব নোংরা ধুয়ে যায়। যে সব নেতাদের ক্যামেরায় টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, হাত বাড়িয়ে টাকা নিচ্ছেন নেতা, সে ঘুষ হোক বা অনুদানের টাকা, মানুষ তে দেখেছেন! আজ বিজেপি-তে গিয়ে ওই নেতা পরিষ্কার! অসমের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কত অভিযোগ, কিন্তু বিজেপি-তে গিয়ে শুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন। একসময় মুকুল রায়ের বিরুদ্ধেও বলা হত। তিনি যতদিন বিজেপি-তে ছিলেন, পরিষ্কার ছিলেন, এখন ফের তৃণমূলে এসেছেন বলে আক্রমণ শুরু হয়েছে।"


তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী লাগাতার প্রায়শই তীব্র আক্রমণ করেন অভিষেককে। কিন্তু সচরাচর তাঁকে নিয়ে মুখ খুলতে শোনা যায় না অভিষেক। এ ক্ষেত্রে যদিও কোনও রাখঢাক করেননি অভিষেক। বলেন, "শুভেন্দু অধিকারী বিজেপি-তে গিয়েছেন বলে পরিষ্কার! ইডি তাঁকে ডাকে না। সব দলেই দুর্নীতির উপাদান রয়েছে বলে মানি আমি। সমাজ পুরোপুরি, ১০০ শতাংশ সৎ হবে বলে আমরা চাইতেই পারি। কিন্তু তা হয় না, সে দুর্ভাগ্যজনকই হোক বা অনুশোচনামূলক। সবার বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ করা উচিত।"