নয়া দিল্লি: এখনও সমাজে ঋতুস্রাব (Menstruation) নিয়ে শুভ-অশুভ, অস্পৃশ্যতার নানা ধারণা, ট্যাবু (Taboo) রয়েছে। কিন্তু এটি যে মহিলাদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, কোনও অসুখ নয়, তা উদযাপন করে বিশেষ বার্তা দিল উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand) উধমসিংহ নগরের কাশীপুর সিটি এলাকার একটি পরিবার। 


পিরিয়ড হলে লজ্জার কিছু নেই। সেই বার্তাই যেন দিলেন উত্তরাখণ্ডের এক দম্পত্তি। সম্প্রতি ভট্ট পরিবারের কন্যার প্রথম ঋতুস্রাব হয়েছে। সেই দিনটিকেই আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করলেন তাঁরা। কেক কেটে, বন্ধুদের ডেকে দিনটি সেলিব্রেট করলেন। ঋতুমতী কন্যাকে উপহারে ভরিয়ে দিলেন সকলেই। 


কন্যার বাবা জীতেন্দ্র ভট্ট জানান, ছোট থেকেই তিনি দেখে এসেছেন অল্পবয়সি মেয়েদের কিংবা মা-জেঠিমার ঋতুস্রাব হলেই তাঁদের 'অশুভ' হিসেবে দেখা হয়। ঠাকুরঘর থেকে রান্নাঘরে পর্যন্ত যেতে বাধা থাকত তাঁদের। সমাজের এই ধারণাকে ভাঙতেই তাঁর ১৩ বছর মেয়েটি যখন প্রথমবার ঋতুমতী হয়, তখন জন্মদিনের মতোই উদযাপন করলেন সেই দিনটিকে। 


তিনি বলেন, 'আজকের দিনে কেন আমরা এই ধরনের মানসিকতা রাখব? এটি তো সাধারণ একটি শারীরবৃত্তীয় ঘটনা। আমার মনে হয় এই ঘটনাকে লুকিয়ে না রেখে বরং সকলের সঙ্গে উদযাপন করা উচিত।' 


মেয়ের বন্ধুদেরও চিঠি পাঠিয়ে নিমন্ত্রণ করেছিলেন তিনি। কিশোরী মেয়েরা তো সেই চিঠি পেয়ে অবাক। আজকের সমাজে যে এমনটা হতে পারে তা ভাবনারও অতীত ছিল তাঁদের কাছে। এই আমন্ত্রণ পত্র পেয়ে তাঁরাও খুশি। জীতেন্দ্র ভট্টর এই ভাবনাকে সম্মান জানাতেই অতিথিরাও স্যানিটারি প্যাড এবং চকলেট উপহার হিসেবে নিয়ে আসেন। 



এই গোটা ঘটনাটি জীতেন্দ্র ভট্ট তাঁর সোশাল মিডিয়ায় জানান। তাঁর মেয়ে রাগিণী জানান তিনি তাঁর বাবা-মায়ের এমন কাজে গর্বিত বোধ করছেন। রাগিণী বলেন, 'মেয়ের ঋতুস্রাবকে সমাজের কাছে এমনভাবে তুলে ধরা সব বাবা-মায়েরই উচিত। এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। আমি আমার বন্ধু এবং সহপাঠীদের অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছি।' 


স্বামীর এই সাহসী পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন জীতেন্দ্র ভট্টর স্ত্রী ভাবনা ভট্টও। তিনি জানিয়েছেন, এই সামাজিক ভাবনাকে ভেঙে এমন পদক্ষেপ গ্রহণে তিনিও আগ্রহী হয়েছেন। স্থানীয় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ নবপ্রীত কৌর বলেছেন যে মাসিক উদযাপন একটি ভাল ধারণা এবং ঋতুস্রাবজনিত অস্পৃশ্যতার বহু পুরনো বিশ্বাসকে ভেঙে ফেলবে এই ধরনের মানসিকতা। 


 


আরও পড়ুন, গাড়িতে যাত্রীর দামি ফোন, হোটেলে গিয়ে তা ফেরত দিয়ে সততার নজির গড়লেন চালক