নয়াদিল্লি: বিগত কিছু দিন ধরেই তেতে রয়েছে পশ্চিম এশিয়া। তার মধ্যেই পড়শি দেশ পাকিস্তানে আছড়ে পড়ল রকেট। বালুচিস্তানে জইশ আল-আদল জঙ্গি সংগঠনের ঘাঁটি নিশানা করে হামলা চালিয়েছে ইরান, একদিন আগেই যাদের লক্ষ্য করে সিরিয়া এবং ইরাকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে তারা। এযাবৎ লস্কর-ই-তৈবা থেকে জইশ-ই-মহম্মদ, পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠনের নাম একাধিক বার শোনা গেলেও, সেই তুলনায় অখ্যাত জইশ আল-আদল। কিন্তু ইরানের শত্রু এই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে ভারতের গভীর সংযোগ রয়েছে। (Iran Attacks Pakistan)


পাকিস্তানে হামলা ইরানের, ভারতের সঙ্গে কী যোগ?


ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রাক্তন কমান্ডার কুলভূষণ সুধীর যাদবই ভারত এবং জইশ আল-আদলের মধ্যে যোগসূত্র। নাশকতার ষড়যন্ত্র এবং চরবৃত্তির অভিযোগে পাকিস্তানের জেলে এই মুহূর্তে বন্দি রয়েছেন কুলভূষণ। আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে বিষয়টি। পাকিস্তানের আদালত কুলভূষণকে ফাঁসির সাজা শোনালেও আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত সেই সাজার উপর স্থগিতাদেশ দেয়। তবে ভারতে কুলভূষণকে ফিরিয়ে আনার আর্জি গৃহীত হয়নি। (Jaish Al-Adl)


চরবৃত্তির অভিযোগ যদিও অস্বীকার করেছেন কুলভূষণ। ভারত সরকারও পাকিস্তানের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দিল্লির দাবি, ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ইরান থেকে কুলভূষণকে অপহরণ করা হয়। ব্যবসার কাজে চাবাহার এবং বন্দর আব্বাসে ছিলেন কুলভূষণ। সেখান থেকেই তাঁকে অপহরণ করে পাক জঙ্গিরা। ওই জঙ্গিরা জইশ আল-আদল সংগঠনের সদস্য বলে দাবি দিল্লির। টাকার বিনিময়ে কুলভূষণকে অপহরণ করে তারা পাক গুপ্তচর সংস্থা Inter Services Intelligence (ISI)-এর হাতে তুলে দেয় বলে অভিযোগ।


আরও পড়ুন: Iran Strike Pakistan: পাকিস্তানে মিসাইল হামলা ইরানের, প্রাণ গেল ২ শিশুর, 'ফল ভাল হবে না' পাল্টা হুঁশিয়ারি


জইশ আল-আদল, কে বা কারা


ইংরেজিতে জইশ আল-আদল কথার অর্থ 'Army of Justice'. এটি একটি সুন্নি জঙ্গি সংগঠন, যাদের সদস্যসংখ্যা ৫০০-৬০০, সকলেই অস্ত্র চালানোয় পারদর্শী। ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ইরানে পর পর যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে, তার নেপথ্যে ছিল Jundallah নামের একটি সংগঠন, যারা নিজেদের 'Soldiers of God' বলেও দাবি করত। ২০১০ সালে সংগঠনের নেতা আব্দোমালেক রিগির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ইরান। সেই সংগঠন ভেঙেই জইশ আল-আদলের জন্ম।  সালাউদ্দিন ফারুকি এবং মোল্লা ওমর সংগঠনটি চালাতেন, বাইরে থেকে সমর্থন জোগাতো আল-কায়দা।


পাকিস্তানের বালুচিস্তানেই মূলত ঘাঁটি তাদের। ইরানের সীমান্ত এলাকা সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশেও তাদের ঘাঁটি রয়েছে। ২০১২ নাগাদ সংগঠনটি সক্রিয় হয়ে ওঠে আচমকা। সীমান্তের দুই দিকেই নাশকতামূলক কাজকর্ম চালায় তারা। ২০১৩ সালে ইরান সীমান্ত পুলিশের উপর হামলা চালায় জইশ আল-আদল। অক্টোবর মাসে ১৪ জন ইরানীয় সীমান্ত পুলিশকে হত্যা করে তারা। সীমান্ত এলাকায় হত্যা, অপহরণ, লুঠের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে জাহিদানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় তারা, যাতে ২৭ জন মারা যান। ওই বছরই ১৪ জন ইরানীয় সেনাকে অপহরণ করা হয়। পাকিস্তানের হস্তক্ষেপে অপহৃতদের মধ্যে পাঁচজনকে মুক্তি দেয় জইশ আল-আদল। ইরানের পাশাপাশি, আমেরিকাও জইশ আল-আদল সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে। 


কেন পাকিস্তানে হামলা ইরানের?


এতদিন পর সেই জইশ আল-আদলই খবরের শিরোনামে। তাদের ঘাঁটি নিশানা করেই পাকিস্তানের বালুচিস্তানে ইরান হামলা চালিয়েছে বলে খবর। এই হামলায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পাক সরকার। কোনও রকম প্ররোচনা ছাডা় ইরানের এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে পাকিস্তান। চরম পদক্ষেপেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ইতিমধ্যেই ইসলামাবাদে মোতায়েন ইরানীয় রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে পাক সরকার। তেহরানে থাকা নিজেদের কূটনীতিকদেরও দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 


কিন্তু আচমকা ইরান পাকিস্তানে হামলা চালাতে গেল কেন, ঘুরে ফিরে উঠে আসছে এই প্রশ্ন। এখনও পর্যন্ত যে তথ্য মিলেছে, সেই অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে ইরানের দক্ষিণে একটি থানায় হামলা চালায় জঙ্গিরা, যাতে ১১ জন ইরানীয় পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়। সেই সময় হামলার জন্য জইশ আল-আদলকেই কাঠগড়ায় তুলেছিলেন ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ ওয়াহিদি। জইশ আল-আদলও হামলার দায় স্বীকার করে। 


তবে পাকিস্তানের সঙ্গেও ইরানের সম্পর্ক ভাল নয়। দুই দেশের মধ্যে মোট ৯৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তে অবস্থিত সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশের সুন্নি মুসলিম নাগরিকরা ইরান সরকারের উপর ক্ষিপ্ত। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরান সরকার তাঁদের উপর শোষণ চালায় বলে অভিযোগ। আবার উপদ্রবকারী এবং সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের দিকে লাগাতার আঙুল তুলে আসছে ইরান। তবে সরাসরি হামলার ঘটনায় দীর্ঘদিনের সংঘাত আরও চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।