নয়াদিল্লি: বিক্ষোভের আগুন খানিকটা প্রশমিত হলেও, চরম সঙ্কট থেকে এখনও বেরোতে পারেনি শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka)। তার মধ্যেই বিপদের খাঁড়া ঝুলছে ভারতের আরও এক পড়শি দেশ ভুটানে (Bhutan Economic Crisi)। সে দেশের ভাঁড়ারেও সঞ্চিত বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ তলানিতে এসে ঠেকেছে। আসন্ন বিপদের আঁচ পেয়ে আপাতত অতিপ্রয়োজনীয় যান, কৃষিকার্যে ব্যবহৃত ট্র্যাক্টর, তার যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা ছাড়া অন্য সব গাড়ির আমদানি (Import ban) বন্ধ করতে চলেছে তারা।
চরম অর্থনৈতিক সঙ্কট ভুটানে, তলানিতে বিদেশি মুদ্রা
শুক্রবার ভুটান সরকারের তরফে এ নিয়ে নোটিস জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। তাদের খবর অনুযায়ী, এখনও করোনার প্রকোপ থেকে মুক্ত হয়নি বিশ্ব। তার জেরে ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে গত দু’বছরে ভুটানের পর্যটন শিল্প কার্যত ধসে গিয়ে। তার উপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে, দাম বেড়েছে তেলের, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের। তার জেরেই ধুঁকছে ভুটানের অর্থনীতি।
ভারত এবং চিনে মধ্যে অবস্থিত ছোট্ট, সাজানো দেশ ভুটান। দেশের জনসংখ্যা ৮ লক্ষেরও কম। কিন্তু চরম অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে দেশে। ২০২১-এর ডিসেম্বর মাসে সে দেশের ভাঁড়ারে সঞ্চিত বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ কমতে কমতে ৯৭ কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকে। অথচ ২০২১-এর এপ্রিল মাসেই সে দেশের সঞ্চিত বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ ছিল ১৪৬ কোটি ডলার। জুলাই মাসে ভুটানের রয়্যাল মনেটারি অথরিটি প্রকাশিত তথ্য থেকে অন্তত তেমনই জানা যায়।
তবে পরিস্থিতি যে জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে, তাতেই সাবধানী পদক্ষেপ করতে চলেছে ভুটান সরকার। দেশের অর্থ মন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত নোটিসে জানানো হয়েছে কৃষিকার্যে ব্যবহৃত ট্র্যাক্টর-সহ ‘ইউটিলিটি ভেহিকল’, যাদের দাম ২০ হাজার ডলারের কম, আপাতত শুধু তা-ই আমদানি করা যাবে। পর্যটন শিল্পে ব্যবহৃত যানবাহনকেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। সরকারি নোটিসে বলা হয়, ‘যথেষ্ট পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা সঞ্চিত রেখে, সামগ্রিক ভাবে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেই এমন পদক্ষেপ করা হচ্ছে’।
সে দেশের একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর জুন মাসেই শুধু ৮ হাজার গাড়ি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে দেশে, যা ভাঁড়ারে সঞ্চিত বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ তলানিতে গিয়ে ঠেকার অন্যতম কারণ।
সঞ্চিত বিদেশি মুদ্রা নিয়ে কড়া বিধান রয়েছে ভুটানের সংবিধানে। বলা হয়েছে, চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে যাতে কমপক্ষে ১২ মাস আমদানি চালু রাখা যায়, কমপক্ষে সেই পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা সর্ব ক্ষণ সঞ্চিত রাখতে হবে ভাঁড়ারে। কিন্তু এই মুহূ্র্তে যা পরিস্থিতি, তাতে সেই বিধান আদৌ পালন করা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তবে এই মুহূর্তে ভুটানের হাতে যা সঞ্চিত বিদেশি মুদ্রা রয়েছে, তা দিয়ে ১৪ মাস চালানো যাবে। তাই আপাতত গাড়ির আমদানি বন্ধ রেখে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভুটান সরকার।
তবে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-এশিয়া বিভাগের অধ্যাপিকা সঙ্গীতা থাপলিয়ালের মতে, এখনই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভুটানের তুলনা করা উচিত নয়। মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক সঙ্কট, বেকারত্বের সমস্যায় ভুটানও জর্জরিত। তবে শ্রীলঙ্কায় যেমন খাদ্যপণ্যের টাকা মেটানোর সামর্থ্য নেই, ভুটানের পরিস্থিতি তেমন নয়।
ভারত গম রফতানি বন্ধ করায় দাম বাড়ছে খাদ্যপণ্যের!
অন্য দিকে, ভুটানের চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন ভারত গম রফতানিতে বন্ধ করে দেওয়ায় খাদ্যপণ্যের দাম আরও বেড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যপণ্যেক জোগান দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি দেশের অর্থমন্ত্রী লিওনপো নামগে শেরিং জানান, সরকার আমদানি বন্ধের পক্ষপাতী নয়। কিন্তু বিদেশি মুদ্রা সঞ্চিত রাখতে চেষ্টায় ত্রুটি রাখবে না। তবে সাম্প্রতিক কালে রেকর্ড বাজেট ঘাটতির সাক্ষী থেকেছে ভুটান, প্রায় ২৮ কোটি ডলার। অতিমারিতে সবমিলিয়ে তাদের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণও বেড়ে ২৭০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৩২০ ডলার হয়েছে।