মাপুটো: অতিমারির প্রকোপ থিতিয়ে আসামাত্রই থাবা বসিয়েছে মাঙ্কি পক্স। ইউরোপের বেশ কিছু দেশ যুঝছে তার সঙ্গে। আমেরিকা, কানাডাতেও মিলেছে সংক্রমণ। তার মধ্যেই এ বার আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পোলিও ভাইরাস। আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত মোজাম্বিকে (Mozambique Poliovirus) সম্প্রতি এক শিশুর শরীরে মিলেছে ওয়াইল্ড পোলিওভাইরাস টাইপ ওয়ান। ১৯৯২ সালের পর, গত তিন দশকে এই প্রথম পোলিওর হদিশ মিলল সে দেশে। গোটা আফ্রিকার দক্ষিণ অংশে ২০২২ সালেই এই নিয়ে দ্বিতীয় আক্রান্তের হদিশ মিলল। এ বছরের শুরুতে পূর্ব আফ্রিকার মালাবিতে মহামারির আকার ধারণ করে পোলিও (Poliovirus)।
আফ্রিকায় নিযুক্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) প্রধান মাৎশিদিশো মোয়েতি বলেন, "আরও এক পোলিও আক্রান্তের হদিশ মেলার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তবে মালাবির সাম্প্রতিক মহামারির কথা মাথায় রাখলে, বিষয়টি একেবারেই আশ্চর্যজনক নয়। এতেই বোঝা যায়, এই ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক এবং কত দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়তে পারে।" বর্তমান দিনে শুধুমাত্র আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানেই সর্বজনিক রোগ হিসেবে নথিভুক্ত রয়েছে। তাই আফ্রিকা মহাদেশের একের পর এক দেশে পোলাও ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
পোলিও আসলে কী?
আমেরিকার সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC)-র সংজ্ঞা অনুযায়ী, পোলিও পক্ষাঘাত সৃষ্টিকারী একটি রোগ। এ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত হলে সরাসরি স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আক্রান্ত রোগীর মলে পোলিও ভাইরাসের বাস। আক্রান্ত ব্যক্তি মলত্যাগের পর সঠিক ভাবে হাত পরিষ্কার না করলে, অন্যদের মধ্যেও তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির মল দ্বারা কলুষিত জল এবং খাবার মুখে দিলেও ছড়িয়ে অন্যদেরে মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে সংক্রমণ।
তবে পোলিওয় আক্রান্ত ব্যক্তি অসুস্থ বোধ করবে, এমনটা অবশ্যম্ভাবী নয়। আক্রান্তদের একাংশের মধ্যে মৃদু উপসর্গ দেখা যায়, যেমন, জ্বর ক্লান্তি, মাথার যন্ত্রাণা, নাকবন্ধ হয়ে যাওয়া, গলাব্যথা, কাশি, ঘাড় এবং পিঠের যন্ত্রণা। পোলিওয় আক্রান্ত হলে হাত এবং পায়ের যন্ত্রণাও দেখা দেয়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে আবার চিরকালের জন্য অকেজো হয়ে যায় পেশি। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন রোগী, নড়াচড়াও করতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে রোগ গুরুতর হলে শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখার পেশিও অকেজো হয়ে পড়ে। অবশ হয়ে যায় মস্তিষ্কও।
অন্ত্রে ভাইরাস দ্বিগুণ হারে ছড়ালে. সেখান থেকে স্নায়ুতন্ত্রেও প্রবেশ ঘটে। তা থেকেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন রোগী। এর ফলে সারা জীবনের জন্য শয্য়াশায়ী হয়ে যান রোগী। এর কোনও চিকিৎসাও নেই। তাতেই পোলিও নিয়ে যাবতীয় ভয়-ভীতি। তবে পোলিওর টিকা নেওয়া থাকলে, সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব। তার জন্যই বিশ্বের সব দেশে পোলিও টিকাকরণে বিশেষ জোর দেওয়া হয়। টাইপ ১ থেকে ৩ পর্যন্ত পোলিও ভাইরাসের তিন রূপের টিকা রয়েছে। এই তিন রূপকে প্রতিহত করা গেলেই কোনও দেশকে পোলিওমুক্ত করা সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
ভারতে পোলিওর হাল-হকিকত
২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ভারত পোলিওমুক্ত দেশের তালিকায় ঠাঁই পায়। পর পর তিন বছর কোনও সংক্রমণ ধরা পড়াতেই এই কৃতিত্ব অর্জন করা সম্ভব হয় ভারতের পক্ষে। ২০১১-র ১৩ জানুয়ারি ভারতে শেষ বার ওয়াইল্ড পোলিও-র হদিশ মেলে। সর্বজনিক রোগ হিসেবে নথিভুক্ত দেশের তালিকা থেকে ২০১২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতকে বাদ দেয় WHO। ১৯৮৮ সালে ওয়র্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে সঙ্কল্প গ্রহণের পর ১৯৯৫ সালে পালস পোলিও অভিযানের সূচনা ঘটায় ভারত। তার আওতায় সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে পোলিও মোকাবিলায় নিজস্ব Rapid Response Teams (RRT) রয়েছে। কারও মধ্যে সংক্রমণ চোখে পড়লে জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত সংক্রমিতদের চিহ্নিত করে তার মোকাবিলার জন্য Emergency Preparedness and Response Plans (EPRP)-ও রয়েছে। অন্য দেশ থেকে যাতে সংক্রমণ প্রবেশ না করে, তার জন্য ২০১৪ সালের মার্চ মাসে আফগানিস্তান, নাইজিরিয়া, পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া এবং ক্যামেরুনের মতো পোলিও প্রকোপিত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য Oral Polio Vaccination (OPV) বাধ্যতামূলক করে কেন্দ্র, যার আওতায় মুখে পোলিও টিকার ফোঁটা দেওয়া হয় তাঁদের।