কিভ: পরিকল্পনা মাফিক যে এগোয়নি যুদ্ধ, গত দেড় মাসে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বরং যুদ্ধের ভারে ন্যূব্জ হয়ে পড়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীও (Russia-Ukraine War)। ইউক্রেন সরকার প্রদত্ত পরিসংখ্যান অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইউক্রেনের দাবি, এ যাবৎ প্রায় ২০০০ সাঁজোয়া গাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারা। যুদ্ধে রুশ সেনার ব্যবহৃত ৩৭০-এর বেশি কামান প্রযুক্তি, ১২৭টি রকেট লঞ্চারও ইউক্রেনীয় সেনা ধ্বংস করে দিয়েছে বলে দাবি সে দেশের সরকারের।
ইউক্রেনের রাজধানী কিভ থেকে ইতিমধ্যেই পিছু হটেছে রাশিয়া (Russian War)। বরং বরাবরের মতো ইউক্রেনের পূর্বাংশেই মনোসংযোগ করছে তারা। সেই পরিস্থিতিতে রবিবার যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির নয়া খতিয়ান তুলে ধরেছে ইউক্রেন সরকার। তাতে বলা হয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত রুশ সেনার ২০০২টি সাঁজোয়া গাড়ি, ৭৭৩টি ট্যাঙ্ক, ৩৭৬টি কামান প্রযুক্তি, ১২৭টি রকেট লঞ্চার, ৬৬ ইউনিট সামরিক সরঞ্জাম গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণহানি ২০ হাজার রুশ সেনার!
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ২০ হাজার ৩০০ রুশ সৈনিক যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারিয়েছেন বলে দাবি ইউক্রেন সরকারের। এ ছাড়াও, রুশ সামরিক বাহিনীর হাতে থাকা ১৬৫ যুদ্ধবিমান, ১৪৬টি হেলিকপ্টার, ১ হাজার ৪৭১টি স্বয়ংচালিত যুদ্ধাস্ত্র, ৮টি জাহাজ, জ্বালানি ভর্তি ৭৬টি ট্যাঙ্ক, ১৪৮টি ইউএভি, ২৭ ইউনিট বিশেষ সরঞ্জাম, এবং ৪টি ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি ইউক্রেন সরকারের।
ইউক্রেনীয় সেনার সামনে এ বাবে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে তা কল্পনা করতে পারেনি রাশিয়া, এবং তার জন্যই এখন পিছু হটতে হচ্ছে বলে দাবি কিভের। যদিও এ নিয়ে রাশিয়ার তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দাবি, প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হলেও, এখনও যুঝে চলেছে রাশিয়া। বরং বেলারুশ দিয়ে ইউক্রেনের পূর্ব দিকে খারকিভ এবং সেভের ডনেৎস্ক অঞ্চলের দিকে যুদ্ধ সরঞ্জামের জোগান বাড়াচ্ছে তারা।
প্রশিক্ষণের অভাব নাকি সরঞ্জামে ঘাটতি!
লোকবল, অর্থবল থেকে সামরিক শক্তি, সব দিক থেকেই ইউক্রেনের চেয়ে এগিয়ে ছিল রাশিয়া। তা সত্ত্বেও ইউক্রেনের মতো ছোট একটি দেশের সামনে পড়ে রুশ সেনাকে কেন পিছু হটতে হল, তার সপক্ষে নানা তত্ত্ব উঠে আসছে। বলা হচ্ছে, আমেরিকা এবং পশ্চিমের দেশগুলি ইউক্রেনকে অস্ত্র জুগিয়ে সাহায্য করছে।যুদ্ধের শুরুতেই ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ধ্বংসকারী ২০০০ জ্যাভলিন ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায় আমেরিকা একাই। পরবর্তী কালে আরও ২০০০ জ্যাভলিন ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানো হয়। হালকা ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতায় বিধ্বংসী। লঞ্চপ্যাড থেকে ছোড়ার পর নিজেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। তাতেই ইউক্রেনী। সেনা সাফল্য পেয়েছে বলে দাবি কূটনীতিকদের একাংশের।
এ ছাড়াও, ব্রিটেনের তরফ ইউক্রেনকে এনলজ এবং স্টারস্ট্রিক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়া হয়েছে, যা রাশিয়ার ড্রোন ধ্বংস করতে ব্যবহার করেছে ইউক্রেন। খুব শীঘ্র আমেরিকার কাছ থেকে ট্যাঙ্ক বিধ্বংসীকারী ১০০টি সুইচব্লেড অ্যান্টি ট্যাঙ্ক ড্রোনও হাতে পেতে চলেছে ইউক্রেন। কিন্তু যুদ্ধসরঞ্জামে সুসজ্জিত হয়েও, রুশ সেনার দক্ষতার অভাবই তাদের ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট। তাদের মতে, ট্যাঙ্ক চালানোর প্রশিক্ষণই ছিল না অধিকাংশ রুশ সেনার। তাই মাঝ রাস্তা। ট্যাঙ্ক ফেলে রেখে যেতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে বা বেকায়দায় পড়লে, সেখান থেকে বেরনোর উপায় জানা ছিল না। এমন পরিত্যক্ত বহু ট্যাঙ্ক আবার ইউক্রেন রাসিয়ার বিরুদ্ধেই ব্যবহার করছে বলেও তথ্য উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: Russia-Ukraine Conflict: যুদ্ধের বলি ৩০০০ ইউক্রেনীয় সেনা, ছ'গুণ বেশি হতাহত রাশিয়ার! দাবি জেলেনস্কির