নয়া দিল্লি: পর পর ভূমিকম্পে তছনছ তুরস্ক। সিরিয়া, লেবাননের একই অবস্থা। বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত একাধিক দেশ। প্রতিনিয়তই লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। শবের পাহাড়ে তুরস্ক যেন মৃত্যুপুরী। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে ভারত, ফ্রান্স, ব্রিটেন ইতিমধ্যেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।                

  


ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। দুই দেশ মিলিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৩৯৪ জনের। শুধুমাত্র তুরস্কেই মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ছুঁইছুঁই। দুই দেশে আহতের সংখ্যা ৪২ হাজারের বেশি। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার বাড়িঘর ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। স্বজনহারা হাজার হাজার মানুষ। হাসপাতালে তিলধারণের জায়গা নেই। এর পাশাপাশি, হাড়কাঁপানো প্রবল ঠান্ডায় উদ্ধারকাজ চালানো মাঝেমাঝেই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাতে হচ্ছে অনেককে। ঠান্ডার কারণে ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে থাকা মানুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে বলে মনে করছেন উদ্ধারকারীরা। 


কিন্তু কেন তুরস্ক এমন ভূমিকম্পপ্রবণ হয়ে উঠল? 


ভূমিকম্প হয় মূলত টেকটনিক প্লেটের সরণের জন্য। ভূতত্ত্ববিদরা জানাচ্ছেন তুরস্ক রয়েছে চারটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলের উপরে। যা এই এলাকাটিকে ভূকম্পপ্রবণ করে তুলেছে। তুরস্কের মূল অংশটি অ্যানাটোলিয়ান প্লেটের ওপর অবস্থিত। এই অ্যানাটলিয়ান প্লেটটি দুটি মেজর প্লেট- ইউরেসিয়ান এবং আফ্রিকান প্লেট আর মাইনর আরাবিয়ান প্লেটের ওপর অবস্থিত। অ্যানাটোলিয়ান প্লেটটির ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে সরণ ঘটে। অন্যদিকে, অ্যারাবিয়ান প্লেটটি ধাক্কা দিতে শুরু করে অ্যানাটোলিয়ান প্লেটটিকে। এর ফলে অ্যানাটোলিয়ান প্লেটটি ইউরেসিয়ান প্লেটটি ধাক্কা দেয়। যার জেরে এমন ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হয়েছে তুরস্ক-সিরিয়ায়। 


আরও পড়ুন, কলকাতায় ভূমিকম্পের আশঙ্কা কতটা? আশেপাশের কম্পনেই বা কতটা ক্ষতি হতে পারে?


ভূতত্ত্ববিদরা জানাচ্ছেন এই নর্থ অ্যানাটলিয়ান ফল্ট লাইনের জন্যই তুরস্ক এমন ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হয়ে উঠেছে। এর আগে ১৯৬০ সালের ২২ মে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প দেখেছিল তুরস্ক। সেই সময় রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৯.৫। প্রায় ১৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কম্পন অনুভূত হয়েছিল। প্রায় ১০ মিনিট ধরে ভূমিকম্প হয় এবং বৃহদাকার সুনামি দেখেছিল বিশ্ব। 


এক নজরে তুরস্কের ভূমিকম্প


১৯৯৯ এর ১৭ অগাস্ট তুরস্কের ইজমিতে ভূমিকম্প হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল ১৭ হাজারের। 


১৭৮৪ এর ২৩ জুলাই  ইরজিনক্যানে ভূমিকম্প হয়েছিল। ৫ থেকে ১০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল সেই ভূমিকম্পে। 


এছাড়াও ১৯৩০ থেকে এখনও পর্যন্ত সাত বার এমন ভূমিকম্পে কেঁপেছে তুরস্ক। যার রেশ পড়েছে পড়শিদেশগুলিতেও।