নয়াদিল্লি: প্রযুক্তির বাড়বাড়ন্তে প্রয়োজন ফুরিয়েছে তাঁদের। দিশাহারা নাবিকরাও আজ খোঁজে না তাদের। সাগরের তীরে আজ শুধুমাত্রা কাঠামো হয়েই রয়েছে গিয়েছে তারা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আয়ু যাতে ক্ষয়ে না যায়, অনাদরে পড়ে থাকার চেয়ে যাতে সংরক্ষণ করা যায়, তাই এ বার বাতিঘর বাঁচাতে তৎপর হল আমেরিকা সরকার (US Government)। ইংরেজিতে লাইট হাউস নামেই পরিচিত, সাগর ঘেঁষা এমন ১০টি বাতিঘর এ বার অন্যকে হস্তান্তরে উদ্যোগী হল তারা (Lighthouse Auction)।
এ বছর দেশে বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত মোট ১০টি বাতিঘর হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা সরকার (Viral News)। এই হস্তান্তরের সময়কালকে 'বাতিঘর ঋতু' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি বাতিঘর নিখরচায় তুলে দেওয়া হবে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠানোর অন্তর্ভুক্ত কোনও সংস্থাকেই। কোনও অলাভজনক সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা স্থানীয় সংগঠনও সেগুলি নিতে পারে। তা যদি একান্তই সম্ভব না হয়, তাহলে ব্যক্তিগত মালিকানার জন্য় নিলামে তোলা হবে বাতিঘরগুলিকে।
এর বাইরে, বাকি চারটি বাতিঘর সাধারণ মানুষের জন্য় রাখা হয়েছে। নিলামে তুললে যে কেউ দর হেঁকে কিনতে পারেন। তার জন্য এখন থেকেই উৎসাহ চোখে পড়ছে। বাঁধাধরা সাংসারিক জীবনের বাইরে এমন বাতিঘরের মালিকানা পেতে চাইবেন না, এমন মানুষ কমই রয়েছেন। আবার বাতিঘরের মালিকানা আভিজাত্যেরও পরিচয় হিসেবে গন্য হয়।
আরও পড়ুন: Coronmandel Train Accident: 'নিজেদের বেতন থেকে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে অর্থ সাহায্য করুন', বিজেপি সাংসদের বার্তা বরুণের
আমেরিকার সরকার জানিয়েছে, আধুনিক প্রযুর দৌলতে এখন হাতে হাতে পৌঁছে গিয়েছে GPS. সাগরে নজরদারি চালাতে তাই এখন আর প্রয়োজন পড়ে না বাতিঘরগুলির। দিশাহারা নাবিকরাও আর বাতি দেখে ঘরে ফেরার রাস্তা খোঁজেন না। জলের নিচে পাথর বা বিপদ ঠাহর করতেও আর কেউ ভরসা করেন না বাতিঘরকে।
যে কারণে বাতিঘরগুলিকে বঁচিয়ে রাখার তেমন তাগিদ চোখে পড়ে না বলে দাবি আমেরিকার সরকারের। এর ফলে এমন অনেক বাতিঘরই জীর্ণ হয়ে ভেঙে পড়েছে। কোথাও কোথাও আবার সেগুলিকে ভেঙে নতুন নির্মাণ গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু এই বাতিঘরগুলির ঐতিহসিক গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু অযত্নে, অবহেলায় সেগুলির গায়ে থাবা বসাচ্ছে সময়। তাই বাতিঘরগুলিকে সংরক্ষণ করাই আমেরিকার সরকারের লক্ষ্য।
আমেরিকার মতো দেশে বাতিঘর কেনার হিড়িক যদিও কম নয়। বাতিঘর নিয়ে নস্ট্যালজিয় রয়েছে সে দেশেক মানুষের। যা কারণে ঝাঁ চকচকে অট্টালিকা বানানোর পরিবর্তে, বাসস্থান হিসেবেও বাতিঘরকে বেছে নেন সাধারণ মানুষ। ঝাড়পোঁছ করে, রংয়ের প্রলেপ চাপিয়ে তার ভিতরেই গড়ে তোলেন আশিয়ানা।
এর বাইরেও, প্রত্যেক বাতিঘরেরই নিজ নিজ ইতিহাস রয়েছে। বাতিঘরগুলিকে সংরক্ষণের জন্য ২০০০ সালে আমেরিকায় জাতীয় বাতিঘর সংরক্ষণ আইনও পাস হয়। তার আওতায়, উপকূলবাহিনীর প্রয়োজনে লাগে না, এমন বাতিঘরগুলির হস্তান্তরে সিলমোহর পড়ে। এখনও পর্যন্ত আমেরিকায় এমন ১৫০ বাতিঘর হস্তান্তরিত হয়েছে। এর মধ্যে ৮০টি নিখরচায় হস্তান্তরিত করা হয়েছে। বাকি ৭০টির বিক্রি হয়েছে নিলামে। তা থেকে মোট ৮২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে রাজকোষে।