সন্দীপ সমাদ্দার, পুরুলিয়া: জঙ্গলমহলের (Jungle Mahals) বামাকালী পুজোর সময় বাঁধা থাকতো শিকলে। ভূত চতুর্দশীতে মূর্তি গড়া হয়। অমাবস্যার নিশীথে প্রাণ প্রতিষ্ঠা। জঙ্গলমহলের বলরামপুরের কর্মা গ্রামে, এই প্রাচীন কালী পুজোয় আরও এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বামা কালী মূর্তি গড়েন পূজারী। এটাই পরম্পরা। পুজোয় কয়েকশো পশু বলি হয়। কয়েক হাজার লোকের সমাগম ঘটে মন্দিরে। ভিন রাজ্যের ভক্ত আসেন মানত করেন। আশা- আকাঙ্খা পূরণের পর মানত শোধ করেন।


তিনদিক পাহাড় ঘেরা গ্রাম। কর্মা বুরু, কানা পাহাড় আর তিলাই পাহাড় এই জনপদ।  জঙ্গলঘেরা এই এলাকাতেই ছোট্ট জনপদ। ২২০ বছর আগে বিশেষ স্বপ্নাদেশ পেয়ে কর্মকার পরিবারের প্রতিষ্ঠিত এই পুজো এখন সার্বজনীন হয়ে উঠেছে। এতে আরও বেশি আকৃষ্ট করে তুলেছে ভক্তদের। দুর্গাপুজো নয় কালীপুজো প্রধান স্থানীয়দের। পুজো উপলক্ষ্যে কয়েকদিন চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মনোরঞ্জন আর বিনোদনের আখড়া হয়ে উঠে আকর্ষণীয় স্থান।


প্রসঙ্গত, রাজ্যের জেলায় জেলায় আরও নানা রূপে পুজিত হন মা কালী। হাওড়া বর্ধমান কর্ড লাইনের সিঙ্গুর ব্লকের জগৎনগর কালী বাড়িতে ৩০০ বছরের বেশী সময় ধরে সেখানে 'মা আনন্দময়ী 'কালী রূপে বিরাজমান । কথিত আছে, 'মা আনন্দময়ী' র নাম মনে- প্রাণে  জড়িয়ে নিলে আর কোনও ক্ষতি হবে না। এই বিশ্বাস,শ্রদ্ধা ও পরম্পরায়  গ্ৰামেরই মেয়ে 'মা আনন্দময়ী' কালী রূপে পূজিত হয়ে আসছেন (Kali Puja 2023)।প্রাচীনকালে শ্মশানের  চিতার উপর তৈরী মন্দির। মঞ্চমুন্ডের আসনের উপর অধিষ্ঠিতা মা। পুরানো রীতি মেনে নিত্যপুজো হয় মায়ের।কালী পুজোয় সারাদিন বিশেষ পুজো অর্চনা হয় মন্দিরে। কালীপুজোর দিন সকাল থেকে দূর দূরান্ত থেকে আগত লক্ষাধিক ভক্তের ভিড়ে পূর্ণভূমিতে পরিণত হয় জগৎনগর কালী বাড়ি। 


আরও পড়ুন, 'দুয়ারে সরকারের বেলুন ফাটিয়ে দিয়েছেন ভাইপো', বিস্ফোরক শুভেন্দু


শোনা যায়, নানান মন কামনা নিয়ে মায়ের মন্দিরে ধর্না দিলে এখনও মায়ের নির্দেশে মেলে প্রতিকার। মা‌য়ের মহিমার কথা তাই লোকের মুখে মুখে ঘোরে। প্রতিকার মেলে কঠিন ব্যাধি থেকে, সন্তানের পড়াশোনা কিংবা কর্মক্ষেত্রে উন্নতি , বা সন্তান না হওয়া দম্পতির মুখে  হাঁসি ফোটান 'মা আনন্দময়ী।'  কথিত আছে, ৩০০ বছর আগে জগৎনগর গ্রামের  সুবল রায়ের কন্যা 'আঁন্দি' কিশোরী বয়সেই মারা যায়। এলাকা তখন ঘন জঙ্গলে ভরা। কানা নদীর শাখা বয়ে গেছে এলাকা দিয়ে। তার পাশের শ্মশানে দাহ করা হয় 'আঁন্দি'কে। সেই দিন ঝড়-জলের রাতে গ্ৰামের মেয়ে 'আঁন্দি' পাশের গ্রামের এক কালী সাধককে স্বপ্ন দেন তিনি। এখানে অধিষ্ঠিতা হয়েছেন এবং তাঁকে যেনও সে নিত্য পুজো করেন। সেই মতো সেই সাধক জগৎনগর গ্ৰামে গিয়ে চিতার উপর ঘট স্থাপনা করে বাঁশের বেড়া দিয়ে গ্ৰামের মেয়ে 'আঁন্দি'কে মাতৃরূপে পুজো করা শুরু করেন।