সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি: বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোতেও আরজিকর ঘটনার প্রতিবাদ। জেলার অন্যতম প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে একটি হল হুগলির কোন্নগরের ঘোষাল বাড়ির দুর্গাপুজো। বনেদি আনার সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ৫৭০ বছরে পদার্পণ করেছে এই পুজো। 


ইংরেজ আমলে ব্রিটিশ সরকার দ্বারা স্বীকৃতি পেয়েছিল 'ঘোষাল' বাড়ির দুর্গোৎসব। তৎকালীন সময় ব্রিটিশ সরকারের থেকে বিশেষ অনুদানও আসতো এই পুজো করার জন্য। বনেদি বাড়ির পুজো হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে আরজিকরের ঘটনার প্রভাব পড়েছে তাদের পুজোয়। তবে পুজো বন্ধ নয়, বরং বাড়ির মহিলা ও পুরুষরা মিলে একটি নাটক মঞ্চস্থ করেছেন। আরজিকর ঘটনার প্রতিবাদ স্বরূপ, যার নাম দিয়েছেন 'অপরাজিতা।'


হুগলির কোন্নগরের জমিদার হিসাবে সূচনা হয় ঘোষাল পরিবারের। ১৪৫৪ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় তাঁদের জমিদারি। সেই থেকেই বাড়ির ঠাকুর দালানে আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গার আরাধনার সূত্রপাত। এখনও এই পুজোয় আসে ইংরেজদের থেকে অনুদান। ঘোষাল বাড়ির ৫৭০ বছরের দুর্গাপুজো বরাবরই শিল্পের পৃষ্ঠপোষক। পুজোর দিনে ঠাকুর দালানে বসে নাটক, যাত্রা পালার আসর।


আগে একটা সময় দুর্গাপুজোয় এখানে এসে গান গেয়ে গিয়েছিলেন ওস্তাদ বুরদুল খান, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতন দিকগজ সঙ্গীতশিল্পীরা। এই বছর আরজিকর ঘটনার প্রতিবাদে বাড়ির মহিলা ও পুরুষরা মিলে নাট মন্দিরেই মঞ্চস্থ করবেন এক বিশেষ নাটক অপরাজিতা। যার প্রস্তুতিও চলছে একেবারে জোর কদমে।


আরও পড়ুন, 'অভয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই', জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকে মিছিলে জনজোয়ার


 শারদ উৎসব শুরু হতে আর কয়েকদিন বাকি। অতিবৃষ্টির পর নীল আকাশে এখন সাদা মেঘের ভেলা। জলাশয়ের পাশে হাওয়ায় দুলছে কাশফুল। সর্বত্রই উৎসবের প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। বারোয়াড়ির পাশাপাশি বাড়ির পুজোতে ও চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। হরিপাল থানার নালীকুল বড়গাছিতে ২৯৩ বছরের প্রাচীন সিংহ, বসু মল্লিক ও রায় পরিবারের পুজো ঘিরে পরিবারের সদস্যদের ব্যস্ততা চরমে। পুজোর আয়োজনে যেনও কোনও খামতি না থাকে তা নিয়ে বৈঠক চলছে ঠাকুন দালানে। এখনও প্রাচীন রীতিনীতি ও ঐতিহ্য বজায় রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে দেবীর আরাধনা করে থাকেন এই তিনটি পরিবার। 


সিংহ, বসু মল্লিক ও রায় পরিবারে মা অভয়া রূপে পুজিত হন। চার হাত বিশিষ্ট দেবীর গায়ের রঙ তপ্ত কাঞ্চন। মায়ের বাঁদিকের উপরের হাতে থাকে চক্র, নিচের হাতে সাপ, ডান দিকের উপরের হাতে খরগো নিচের হাতে ত্রিশূল। গুপ্ত পঞ্চিকা মতে আরাধনা হয় দেবীর। পাঁচ খিলান যুক্ত ঠাকুর দালান। মন্দিরের মাথায় ত্রিমুখী তিনটি ত্রিশুল মাঝে চক্র। একই কাঠামোতে বছরের পর বছর ধরে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।