কলকাতা : প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের দশমীতে পালিত হয় দশহরা।  বাংলা সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেই এদিন মা গঙ্গাকে তুষ্ট করা হয়।  দশমীর থেকে দশহরা নাম করণ। তার আরও একটি ব্যাখ্যা আছে যদিও। দশহরা নামটি এসেছে 'দশ' থেকে। এই পুজোর প্রতিটি বিধির সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে দশ সংখ্যাটি। 'হরা' শব্দটি পরাজয় থেকে এসেছে। বিশ্বাস করা হয় যে এই পুজো করলে মানুষ  ১০ টি পাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।


'গঙ্গা স্নান করলে পাপমুক্তি ঘটে'


জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের দশম দিনেই নাকি গঙ্গা শিবের জটা থেকে নেমেছিলেন ধরাধামে।  খরস্রোতা,গঙ্গা হয়েছেন অনেক শান্ত। ভাসিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে ধরেছেন স্নেহশীলা মাতার রূপ। ধীর গতিয়ে বয়েছেন। গঙ্গার জলের উপর ভরসা করে ভারতভূম হয়ে উঠেছে শস্য শ্যামল। গঙ্গার দুপাশে গড়ে উঠেছে জনপদ। তাই মা গঙ্গাকে এভাবে আরাধনা করা হয়, তিনি যেনন রুদ্ররূপ না ধরেন, তাঁর কৃপায় যেন শস্য শ্যামলা হয় ধরা ধাম। এই বছর গঙ্গা দশহরা বা দশেরা ১৬ জুন অর্থাৎ রবিবার। এই দিনে ব্রহ্ম মুহূর্তে গঙ্গা স্নান করলে পাপমুক্তি ঘটে বলে বিশ্বাস। এবার গঙ্গা স্নানের শুভ সময় শুরু হচ্ছে সকাল ৭ টা ৮ মিনিট থেকে । সকাল ১০ টা ৩৭ মিনিট পর্যন্ত ভাল সময় রয়েছে। 


গঙ্গা দশহরাকে  গঙ্গাবতারনও বলা হয়। অর্থাৎ, এই দিনে গঙ্গার অবতরণ হয়েছিল।  স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন মা গঙ্গা। হিন্দুদের বিশ্বাস,  জ্যৈষ্ঠের  শুক্লপক্ষ দশমীই সেই বিশেষ দিন।  এই তিথিতে পুজো করলে পূর্ব দশজন্মের নানা পাপ থেকে মুক্তি মিলতে পারে। সেই সঙ্গে এই জন্মের দশটি পাপ হরণ করে নেন মা গঙ্গা। এই দিনে গঙ্গায় স্নান করতে হয়। তারপর গঙ্গায় অর্পণ করতে হয় দশটি ফুল, দশটি ফল ও দশটি প্রদীপ । 


প্রতি বছর, ভারতের বহু হিন্দু ধর্মাবলম্বী গঙ্গা দশেরা উদযাপন করে ।  হিংসা, ব্যভিচারের মতো পাপ করে থাকলে মানসিক শুদ্ধির জন্য এই পুজো করা দরকার। তবে শুধু রীতি পালনে পাপস্খালন হয় না।  অন্যের ক্ষতি করা, অন্যের সম্পর্কে খারাপ চিন্তা করার মতো খারাপ অভ্যেস থেকে চিরতরে বিরত থাকার সংকল্প করতে হয়। 


শিবে জটায়  গঙ্গার বাস। সেখান থেকেই তাঁর উৎপত্তি বলেই বিশ্বাস।  তাই এদিন শিবপুজোও করা আবশ্যক। শিবলিঙ্গ শান্তির প্রতীক। এই তিথিতে দান,ধ্যান করাও আবশ্যক। সেই সঙ্গে এই তিথিতে নারায়ণেরও পুজো করা হয়। বাংলায় এই তিথিতে মনসা পুজোরও রীতি আছে বহু জায়গায়। 


মনসা পুজো ও অরন্ধনের রীতি
রাঢবঙ্গে বাঁকুড়ায় জ্যেষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে দশহরা ব্রত পালন করে মনসা পুজো  করা হয়। এদিন ঘুড়ি ওড়ানোর রীতিও রয়েছে।  মনসা পুজোর সঙ্গে অরন্ধন পালন হয়। রাঢ়বঙ্গে বহু মানুষ  মনসাকে মা দুর্গার এক রূপ বলে মনে করে। সেই সঙ্গে এর একটি সামাজিক তাৎপর্যও রয়েছে। সর্পদেবী , মা মনসাকে তুষ্ট করা হয়, যেন বর্ষায় সাপখোপের উপদ্রব না বাড়ে।  


আরও পড়ুন 


কত ধাপ পেরিয়ে রথে ওঠেন জগন্নাথ? রথের রশি আদতে কী জানেন? পুরীর রথযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে নানা কাহিনি