Gita Gyan : গীতার কর্মযোগে মনকে ঈশ্বরের পায়ে নিবেদন করে নির্মোহ হয়ে যুদ্ধ করার পরামর্শ অর্জুনকে দিয়েছেন শ্রীকৃষ্ণ। তিনি বলেছেন, অন্তর্যামী পরমাত্মা সকলের মধ্যে অবস্থিত। এই কথাটি মনে রাখতে হবে। তারপর নিবেদিত চিত্তে যদি সমস্ত কর্ম ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ করতে হবে। মনে করতে হবে আকাঙ্ক্ষাশূন্য। মমতাবর্জিত ও শোক-তাপরহিত হয়ে তিনি অর্জুনকে যুদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন ভগবান।সেই সঙ্গে ভগবান ব্যাখ্যা করেছেন, এইভাবে যুদ্ধ করলে কী হতে পারে। কর্মযোগের ৩১ নম্বর শ্লোকে ভগবান বলেছেন - 


যে মে মতমিদং নিত্যমনুতিষ্ঠন্তি মানবাঃ ।


শ্রদ্ধাবন্তোহনসূয়ন্তো মুচ্যন্তে তেঽপি কৰ্মভিঃ ৷৷ ৩১


অর্থাৎ যেসব ব্যক্তি দোষদৃষ্টিরহিত ও শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে ভগবানের এই মত সর্বদা অনুসরণ করেন, তাঁরাও সমস্ত কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যান । শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শ শুধু অর্জুনের জন্য নয়, প্রত্যেক বর্ণ, আশ্রম, জাতি বা সমাজের মানুষ উপরোক্ত প্রকারে নিজ কর্তব্য-কর্ম ঈশ্বরের পায়ে সমর্পণ করে এটি পালন করতে সক্ষম।  


এই শ্লোকের মাধ্যমে ঈশ্বর বোঝাতে চেয়েছেন, যে সব মানুষ ভগবানের প্রতি দোষদৃষ্টি রাখে, যারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সাক্ষাৎ পরমেশ্বর মনে করেন না, তাঁরা ঈশ্বরের পায়ে সবটুকু সঁপে দিয়ে নিজে এই সাধন করার অধিকারী হয় না। অনেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সাধারণ মানুষ মনে করে সমালোচনা করেন, অনেকের তাঁর ওপর বিশ্বাস নেই, তাঁরা এই সাধনের অধিকারী নন। যাঁরা ভগবানের  কোনও প্রকারের দোষ দেখেন না এবং সর্বদা শ্রদ্ধা ও ভক্তিভাব রাখে, তারাই এই সাধনায় সক্ষম। 


ভগবান আসলে এর মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন, যদি যে কোনও মানুষ ভগবানে বিশ্বাস রেখে এই সাধন দ্বারা সমস্ত কর্ম থেকে মুক্ত হয়ে যেতে পারে। জন্ম-মৃত্যুরূপ কর্ম-বন্ধন থেকে চিরকালের মতো মুক্ত হয়ে যেতে পারে। তাহলে ভগবানের পায়ে মন সঁপে অর্জুনও যদি তাঁর কর্তব্য মাফিক যুদ্ধ করেন, তাঁরও মুক্তি হবে।  


আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার সময় গীতা ছুঁয়ে সত্য বচনের শপথ নেওয়ার রীতি রয়েছে। কারণ হিন্দুদের (Hindu) কাছে এতটাই পবিত্র গীতার বাণী (Gita) । মনে করা হয়, শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা (Bhagvad Gita) হল সাক্ষাৎ ভগবানের অমৃত বাণী।  হিন্দুধর্মে গীতার মহিমা অপরিসীম। অসীম।                       


আরও পড়ুন :


মৃত্যুর পর আত্মার কী হয়? কুরুক্ষেত্রে অর্জুনকে কী বলেছিলেন সখা কৃষ্ণ?