গীতার ৬ষ্ঠ অধ্যায় ধ্যানযোগে শ্রীকৃষ্ণ তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনকে মনঃসংযোগের নানা উপায় সম্পর্কে অবহিত করেছেন। অর্জুন শ্রীকৃষ্ণর কাছে মনোনিবেশের উপায় সম্বন্ধে জানতে চেয়েছেন। বুঝতে চেয়েছেন কীভাবে চঞ্চল, অস্থির মনকে বশে আনা যায়। ষষ্ঠ অধ্যায়ের ৩৫ তম শ্লোকে ভগবান বলেছেন -
অসংশয়ং মহাবাহো মনো দুনিগ্রহং চলম্।
অভ্যাসেন তু কৌন্তেয় বৈরাগ্যেণ চ গৃহ্যতে ।।
অর্জুনকে মহাবাহো সম্বোধন করে কৃষ্ণ বলেছেন,মন নিঃসন্দেহে চঞ্চল । তাকে বশে রাখা নিশ্চিত কঠিন । কিন্তু হে কুন্তিপুত্র ! অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা মনকেও বশ করা যায় ।
এই শ্লোকের মাধ্যমে ভগবান বোঝাতে চেয়েছেন, মন চঞ্চল ঠিকই। তা এদিন-ওদিক ধাবিত হয়। তাও স্বীকার করেছেন ভগবান। কিন্তু অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা একে সহজেই বশ করা সম্ভব। ভগবান বুঝিয়েছেন মনকে একদিকে নিবিষ্ট করার জন্য তাকে অন্য বিষয় থেকে সরিয়ে আনতে হবে। বারবার সেই চেষ্টা করে যেতে হবে। মন এদিক ওদিক গেলেও বারবার তাকে ফিরিয়ে এনে পরমাত্মাতে নিবিষ্ট করতে হবে। একেই ভগবান বলেছেন ‘অভ্যাস’। গীতা বলছে, পরমাত্মাই সবার ওপরে। পরমাত্মা সর্বশক্তিমান। ঈশ্বরলাভ জীবনের পরম লক্ষ্য হতে হবে।
শ্রদ্ধা ও ভক্তি এনে মনোনিবেশ করতে হবে। মন যেদিকেই ধাবিত হোক না কেন, সেখানেই নিজ ইষ্টদেবের চিন্তা করতে হবে। পরমেশ্বরের স্বরূপ চিন্তা করা।নিষ্কামভাবে নিরন্তর জপ করে যেতে হবে যার যার ইষ্ট নাম। সে হতে পারে, রাম, কৃষ্ণ, শিব, বিষ্ণু, সূর্য, শক্তি । ঈশ্বরপ্রাপ্ত মহাত্মা ব্যক্তিদের সঙ্গও উপকারে আসতে পারে।
গীতায় ভগবানের উপদেশ, মনকে বশে করার জন্য অভ্যাস ও বৈরাগ্য দুটি সাধনই প্রয়োজনীয়। মন যদি নদীর ধারা হয় তবে তাকে ভগবানের দিকে নিয়ে যেতে হবে। বিষয়াভিমুখী প্রবাহের গতি রুদ্ধ করতে হবে।
পরের শ্লোকে ভগবান বলেছেন,
অর্থাৎ, অসংযত মন যাঁর, সেই ব্যক্তির পক্ষে আত্ম-উপলব্ধি করা দুষ্প্রাপ্য। কিন্তু যার মন সংযত, ভগবানে নিবেদিত, তিনিই যথার্থ উপায় অবলম্বন করে মনকে বশ করতে পারেন।
আরও পড়ুন :
'ভক্ত যেভাবে ভজনা করবে, আমিও সেভাবে তাঁর পাশে থাকব', গীতায় ঈশ্বর ভজনের পাঠ দিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ