গুহ্যেশ্বরী মন্দির ।  কেউ কেউ বলেন মায়ের যোনি পড়েছিল এখানে। কেউ আবার বলেন যোনি নয়, সতীর জানু দ্বয় পড়েছিল অধুনা নেপালে অবস্থিত এই মন্দিরে। শিবক্ষেত্র পশুপতিনাথ থেকে প্রায় ১ কিমি পূর্বে রয়েছে এই মাতৃমন্দির।  কাছেই বয়ে চলেছে বাগমতি নদী। দেবীকে এখানে গুহ্যকালীও বলা হয়। মাতৃসাধকদের পছন্দের উপাসনা স্থান এটি।  বিশেষ করে তান্ত্রিক সাধকদের প্রিয় তীর্থস্থান গুহ্যেশ্বরী মন্দির। 



মহামায়া যখন সতীরূপে জন্দম নেন, তিনি ছিলেন দক্ষ-কন্যা। বহু তপস্যায় তিনি শিবপত্নী হন। তবে শিবকে জামাই হিসেবে কোনওদিনই পছন্দ ছিল না দক্ষের। একবার বিরাট এক যজ্ঞের আয়েজন করেন রাজা দক্ষ। সেই যজ্ঞানুষ্ঠানে যাবার জন্য শিবের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন সতী। শিব বলেছিলেন, বিনা আমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ, তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সতী মহাদেবকে বিয়ে করায় ক্ষুব্ধ ছিলেন দক্ষ। আর সেজন্য মহাদেব ও সতী ছাড়া প্রায় সকল দেব-দেবীকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন তিনি।


মহাদেবের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সতী উপস্থিত হন। তবে আমন্ত্রিত অতিথি না হওয়ায় যথাযোগ্য সম্মান পাননি সতী। মহাদেবকেও অপমান করেন দক্ষ। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে যোগবলে আত্মাহুতি দেন সতী। ক্রোধে, শোকে জ্বলে ওঠেন শিব।  শেষমেষ বিষ্ণুর বুদ্ধিতে রক্ষা পায় জগত। সুদর্শন চক্রে সতীর দেহকে একান্ন টুকরো করেন নারায়ণ। যে সব জায়গায় সেই দেহখণ্ডগুলি পড়েছিল, সেগুলিই হল এক-একটি পীঠ। তার মধ্যে একটি পিঠ গুহ্যেশ্বরী মন্দিরও। 


মন্দিরের নামটি সংস্কৃত শব্দ গুহ্য  থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়, যার অর্থ গোপন।   ললিতা সহস্রনামে দেবীর ৭০৭তম নাম হিসেবে 'গুহ্যরূপিণী'র উল্লেখ আছে।  এখানে দেবীকে মহামায়া বা মহাশিরা এবং ভগবান শিবকে কাপালী রূপে পুজো করা হয়। নব বজ্রযান বৌদ্ধ সাধকরা গুহ্যেশ্বরীকে বজ্রবারাহী রূপে পবিত্র বজ্রযোগিনী দেবী হিসেবে পুজো করেন। তিব্বতে স্থানটিকে পাকমো ন্ গুলচু বলা হয় এবং মন্দিরের কূপ থেকে নিঃসৃত তরলকে যোনিরস বলে বিশ্বাস করা হয়।


কালী তন্ত্র, চণ্ডী তন্ত্র, শিব তন্ত্রের গ্রন্থেও এই মন্দিরের উল্লেখ আছে। এই মন্দিরকে সবচেয়ে শক্তিশালী পূর্ণ তন্ত্রপীঠ হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ এটি ১৭ টি শ্মশানের উপরে নির্মিত। 


দেবী গুহ্যেশ্বরী, মন্দিরের কেন্দ্রে একটি কলসে পূজিত হন। কলসটি সোনা রুপো দিয়ে ঢাকা।  মূল মন্দিরটি একটি খোলা প্রাঙ্গণের কেন্দ্রে অবস্থিত। মন্দিরের চূড়ায় আছে চারটি সোনালি সাপ। বিবিধ কাজের নজর কাড়বে এই সর্পগুলি। মন্দিরের তলায় পাওয়া যায় ভূগর্ভস্থ প্রাকৃতিক জল, এই জলের উৎসর সঙ্গে জড়িয়ে বহু লোককথা ও কিংবদন্তি।  


আরও পড়ুন : পড়েছিল সতীর ব্রহ্মরন্ধ্র, এখানে পাপস্খালন করেছিলেন স্বয়ং রামচন্দ্র, পড়ুন মরুতীর্থ হিংলাজ কথা