সোমনাথ দাস, সিঙ্গুর: সময় পাল্টায়, বদলে যায় রীতিনীতিও, কিন্তু কিছু প্রথা রয়ে যায়। সিঙ্গুরের ডাকাত কালীর আরাধনাও তার মধ্যেই পড়ে। রাজ্যবাসী রবিবার কালীপুজো পালন করলেও, সিঙ্গুরের ডাকাত কালীর বোধন হয়ে গিয়েছে ন'দিন আগেই। চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে বোধন হয় মায়ের। মায়ের আরাধনায় মেতেছেন সেখানকার বাসিন্দারা। (Kali Puja 2023)


বোধনের পর গত এক সপ্তাহ ধরে অষ্টমঙ্গলার উপাচার চলেছে ডাকাত কালীর পুজোয়। গ্রামের মহিলারা বাড়ি থেকে বরণডালা এনে মাকে বরণ করে নেন। এর পর দূর্বা, হলুদ সহকারে দেবীমূর্তি এবং শিবের হাতে সুতো বেঁধে দেন পুরোহিত। কালীপুজোর পর দিন, অর্থাৎ সুতো বাঁধার আটদিনের মাথায় পুনরায় ডাকাত কালী মাকে বরণ করে, বরণডালা ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন গ্রামের মহিলারা। (Diwali 2023)


গোধূলি বেলায় প্রতিমার হাত থেকে খোলা হবে সুতো। বন্ধ হয়ে যাবে মন্দিরের দরজা। পরের দিন সকাল ৬টায় পুনরায় খোলা হবে মন্দির। প্রায় সাড়ে ৫০০ বছরের পুরনো সিঙ্গুরের ডাকাত কালীর মন্দিরে এমন একাধিক প্রাচীন রীতিনীতি মেনে পুজো-অর্চনা হয়ে আসছে। প্রত্যেকেই নিষ্ঠাভরে তা পালন করেন।


আরও পড়ুন: Kalipuja: কালী দিগম্বরী, শক্তির আধার, বঙ্গদেশের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, আজ রাজ্যজুড়ে সেই মাতৃশক্তির আরাধনা


বছরে একবার, আজকের দিনেই মালিক বাড়ির আনা গঙ্গা জল ঢালা হয় মায়ের ঘটে। সেই সময় বন্ধ থাকে মায়ের গর্ভগৃহের দরজা। আজ সকালেই মাকে ফল, মিষ্টি,লুচির সঙ্গে চালকড়াই ভাজা নিবেদন করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে খিচুড়ি, পায়েসের ভোগ। অমবস্যার তিথি ধরে চার প্রহর বিশেষ পুজো হয় ডাকাত কালী মায়ের।‌ ডাকাত কালী মা পূজিত হন বলে পুরুষোত্তমপুর, মল্লিকপুর এবং জামিন বেড়িয়া গ্রামে আর কোনও কালীপুজো হয় না। বাড়িতে রাখা যায় না অন্য কোনও দেবীর ছবি। তাই বাড়ির যে কোনও অনুষ্ঠানের আগে মায়ের কাছে পুজো নিবেদন করেন এলাকার সমস্ত মানুষ।


রবিবার কালীপুজোর দিন ভোরবেলায় মাকে স্নান করিয়ে বেনারসি শাড়ি পরিয়েছেন পুরোহিত। মাথায় মুকুট পরিয়ে কপালে টিপ আঁকা হয়। কানে দুল, পায়ে নূপুর-সহ অলঙ্কারে সাজানো হয় মাকে। সকাল থেকেই ভক্তরা ভিড় করেন মন্দিরে। পুজো-অঞ্জলি দিয়ে, দেবীর কাছে নিজেদের চাওয়া-পাওয়া তুলে ধরেন তাঁরা। পুজো দেওয়ার পাশাপাশি, প্রদীপ, ধূপ জ্বেলে মায়কে শ্রদ্ধা জানান।  আজকের দিনে স্নিগ্ধতায় ভরে গিয়েছে চারিদিক।