Chandrayaan 3: পৃথিবীর টান কাটিয়ে চাঁদের কক্ষপথে (Moon Orbit) ঢুকে পড়েছে চন্দ্রযান ৩ (Chandrayaa 3)। চন্দ্রপৃষ্ঠ ছুঁয়ে দেখার ক্ষেত্রে অবশ্য এখনও কিছুটা সময় বাকি রয়েছে। তার আগে প্রয়োজন সফলভাবে অবতরণ। আর এই সফট ল্যান্ডিং হবে একাধিক পর্যায়ে। ইতিমধ্যেই তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে চন্দ্রযান ৩। ইসরোর (ISRO) তরফে জানানো হয়েছে আপাতত একটি পরিকল্পিত অরবিট রিডাকশন ম্যান্যুভার পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ভারতের তৃতীয় চন্দ্রাভিযানে অংশগ্রহণ করা মহাকাশযান। ধীরে ধীরে চন্দ্রযান ৩- এর থেকে আলাদা হবে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। মহাকাশযানে প্রপালশন মডিউল থেকে বিচ্ছিন্ন হবে ল্যান্ডার, যার মধ্যে রয়েছে রোভার। এই ল্যান্ডারই আগামী ২৩ অগস্ট চন্দ্রপৃষ্ঠের দক্ষিণ মেরুতে সফট ল্যান্ডিং করার কথা রয়েছে। সব ঠিক থাকলে এবার সফলভাবেই অবতরণ করবে চন্দ্রযান ৩। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, চন্দ্রযান থেকে বিভিন্ন ইঞ্জিনের এভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলেই চাঁদের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। বর্তমানে অবস্থান 170 km x 4313 km। ইসরো সূত্রে খবর এর পরবর্তী পর্যায়ে কার্যক্রম হবে ৯ অগস্ট। ওইদিন ভারতীয় সময়ে দুপুর ১টা থেকে ২টোর মধ্যে এই কাজ হবে বলে খবর। 


কী এই অরবিট রিডাকশন ম্যান্যুভার?


ইসরো জানিয়েছে, আগে থেকে চন্দ্রযান-৩ এর জন্য যে অরবিট রিডাকশন ম্যান্যুভার পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেই পথেই সফলভাবে অগ্রসর হয়েছে ভারতের মহাকাশযান। যেকোনও স্পেসফ্লাইট বা মহাকাশযানের ক্ষেত্রে অরবিটাল ম্যান্যুভার বলতে বোঝায় ওই মহাকাশযানের অরবিট বা কক্ষপথ পরিবর্তনের জন্য প্রপালশন সিস্টেমের ব্যবহার। চন্দ্রযান-৩ এর ক্ষেত্রে এই অরবিট রিডাকশন ম্যান্যুভার বা প্রপালশন সিস্টেম ব্যবহার করে একটি কক্ষপথ থেকে অন্য কক্ষপথে গিয়ে, বলা ভাল কক্ষপথ পরিবর্তনের মাধ্যমে চাঁদের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যাবে মহাকাশযানটি। আগামী ১৭ অগস্ট পর্যন্ত আরও তিনটি moon-bound maneuvers চালু থাকবে বলে জানিয়েছে ইসরো। এরপর চন্দ্রযান-৩ এর প্রপালশন মডিউল থেকে বিচ্ছিন্ন হবে ল্যান্ডিং মডিউল। এই ল্যান্ডিং মডিউলের মধ্যে রয়েছে ল্যান্ডার 'বিক্রম' এবং রোভার 'প্রজ্ঞান'। একদম শেষ পর্যায়ে থাকবে de-orbiting maneuvers পদ্ধতি। এই পর্যায়ে চাঁদের কক্ষপথে থাকা মহাকাশযান থেকে ল্যান্ডিং মডিউল আলাদা হয়ে সফট ল্যান্ডিং করবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। ২৩ অগস্ট এই সফট ল্যান্ডিং হতে পারে বলে জানিয়েছে ইসরো। গত ১৪ জুলাই শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল চন্দ্রযান-৩। এরপর প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। এই সময়কালে ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে দূরতে বাড়িয়ে ক্রমশ চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছে মহাকাশযান। এবার একটু একটু করে চাঁদের চারপাশে থাকা এক একটি কক্ষপথ অতিক্রম করে চন্দ্রপৃষ্ঠে পালকের মতো অবতরণ করবে ল্যান্ডার এবং তার ভিতরে থাকা রোভার। এই কক্ষপথ অতিক্রমের জন্য পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছে অরবিট রিডাকশন ম্যান্যুভার। 


 






চন্দ্রযান ৩ থেকে প্রথমবার কেমন দেখা গিয়েছে চন্দ্রপৃষ্ঠ 


এর মধ্যেই চন্দ্রযান ৩ দ্বারা প্রথমবার চন্দ্রপৃষ্ঠ দর্শনের ছবি প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। প্রথম বার কাছ থেকে চাঁদের যে রূপ ধরা পড়েছে চন্দ্রযান-৩-এর ক্যামেরায়, তা প্রকাশ করেছে ইসরো। মাত্র ৪৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে ধূসর গোলকের মতো দেখাচ্ছে পৃথিবীর উপগ্রহকে। এবড়ো খেবড়ো চন্দ্রপৃষ্ঠ, তার বুকে জেগে থাকা বিরাটা আকারের গহ্বরগুলিও স্পষ্ট ধরা পড়েছে। ওই ভিডিও পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ISRO লেখে, 'চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের দেখা চাঁদ। ৫ অগাস্ট চাঁদের কক্ষপথে ঢোকার সময় তোলা ছবি'। শনিবার সন্ধে ৭টা বেজে ১২ মিনিটে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে চন্দ্রযান-৩। সেই সময়ই ওই ছবি তোলা হয় বলে জানানো হয়েছে ISRO-র তরফে।


 






সফলভাবে সফট ল্যান্ডিং-ই আসল


আগামী ২৩ অগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করার কথা রয়েছে চন্দ্রযান ৩- এর। এই মহাকাশযানে একটি প্রোপালসন মডিউল ল্যান্ডার 'বিক্রম'কে বয়ে নিয়ে চলেছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথমে অবতরণ করবে 'বিক্রম'। এই ল্যান্ডার 'বিক্রম'-কেই পালকের মতো চাঁদের মাটি ছোঁয়ানোই এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য। তার পর ল্যান্ডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে রোভার 'প্রজ্ঞান'। এক চন্দ্রদিবসের জন্য চাঁদের মাটিতে ঘুরে বেড়াবে সেটি, যা পৃথিবীর নিরিখে ১৪ দিনের সমান। রোভার 'প্রজ্ঞান' পর্যবেক্ষণ করবে চাঁদের মাটি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে চাঁদের বুকে চন্দ্রযান ২ পাঠানোর চেষ্টা করেছিল ইসরো। তবে সেই অভিযান সফল হয়নি। এর চার বছর পর এবার ২০২৩ সালে তৃতীয়বার চন্দ্রাভিযান করছে ইসরো। লক্ষ্য চাঁদের দুর্গম দক্ষিণ মেরুতে অভিযান চালানো। 


আরও পড়ুন- পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তির হাতে-পায়ে সাড় ফিরিয়ে দিল AI, ফের চমক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার