নয়াদিল্লি: বর্তমানে হিমালয় পর্বত যেখানে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে, কোটি কোটি বছর আগে সেখানে টেথিস মহাসাগর ছিল বলে ছোট থেকে শুনে আসছি আমরা (Tethys Ocean)। হিমালয়ের কোলে এবার প্রাচীন মহাসাগরের অস্তিত্বের প্রমাণ পেলেন বিজ্ঞানীরা (The Himalayas)। কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া মহাসাগরের অবশিষ্টাংশ খুঁজে পেলেন তাঁরা। তাঁদের এই আবিষ্কার সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা বিশ্বে (Science News)। 


ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (IISc) এবং জাপানের নিগাতা ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা হিমালয়ের কোলে চাপা পড়ে যাওয়া মহাসাগরের খোঁজ পেয়েছেন। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের মাটিতে থাকা খনিজের মধ্যে জলের বিন্দু খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। আজ থেকে প্রায় ৬০ কোটি বছর আগে সেখানে অবস্থিত মহাসাগরেরই জলের বিন্দুই খনিজের ভিতর আটকে রয়েছে বলে মত বিজ্ঞানীদের। এই আবিষ্কার থেকে মহাসাগর তথা পৃথিবীর বুকে প্রাণীসমাজের বিবর্তন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তাঁরা। 


ভারতীয় এবং জাপানি বিজ্ঞানিদের এই আবিষ্কার গবেষণাপত্রের আকারে প্রকাশিত হয়েছে প্রিকেমব্রিয়ান রিসার্চ জার্নালে। ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, যে খনিজের মধ্যে জলের বিন্দুর খোঁজ মিলেছে, সেগুলি ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম কার্বোনেটে সমৃদ্ধ, যার সঙ্গে মিল রয়েছে অতীতে সংরক্ষিত টেথিস মহাসাগরের টাইম ক্যাপসুলের।


আরও পড়ুন: Alien Craft Hearing: একা নন পৃথিবীবাসী, আছড়ে পড়া UFO নিয়ে গোপনে গবেষণা, ভিনগ্রহীদের লুকোচ্ছে আমেরিকা, শুনানিতে দাবি গোয়েন্দা আধিকারিকের


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ৭০ থেকে ৫০ কোটি বছর আগে, দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবীর বুকে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। ওই সময়ে স্থান বদল করে হিমবাহ। ওই সময়কে 'স্নোবল আর্থ গ্লেসিয়েশন' বলে উল্লেখ করেন বিজ্ঞানীরা। এর পর শুরু হয় দ্বিতীয় দফার অক্সিজেনেশন, যার আওতায় মাটি এবং জলে অক্সিজেনের ঘনত্ব বাড়ে, বাড়ে পরিবেশে অক্সিজেনের মাত্রা। কিন্তি সেই সময়কার জীবাশ্ম সংরক্ষিত নেই তেমন। প্রাচীন মহাসাগরও বেঁচে নেই। তাই অতীতে ফিরতে সমস্যায় পড়ছিলেন বিজ্ঞানীরা। হিমালয়ের সামুদ্রিক প্রস্তরখণ্ড থেকে প্রাপ্ত খনিজ সেই সমস্যার সমাধান করে দিল একপ্রকার। নয়া আবিষ্কারে তাই গবেষণার জন্য নয়া দিগন্ত খুলে গেল মনে করা হচ্ছে।


নয়া গবেষণা অনুযায়ী, হিমবাহ যখন স্থান পরিবর্তন করছিল, সেই সময় পাললিক শিলাগুলিতে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। তার জেরেই ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। তার মধ্যে আটকে যায় জলের কণা। ঠান্ডা হয়ে ভিতরে জমে থাকে। কুমায়ুন থেকে অমৃতপুর হয়ে দেহরাদূণ, গঙ্গোত্রী হিমবাহ পর্যন্ত গবেষণা চালান বিজ্ঞানীরা। দফায় দফায় চলে পরীক্ষানিরীক্ষা। তাতেই প্রাচীন টেথিস মহাসাগরের অবশিষ্টাংশ বলে খনিজের মধ্যে আটকে থাকা জলবিন্দুকে চিহ্নিত করা হয়।