নয়াদিল্লি: চাঁদের মাটি স্পর্শ করা হয়ে গিয়েছে। সূর্যের কাছাকাছি পৌঁঁছতেও বাকি আর মাত্র একমাস। সেই আবহে এবার পড়শি গ্রহ শুক্রের দিকে নজর ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র বিজ্ঞানীদের। আপাতত শুক্রের চারিদিকে চক্কর কাটার পরিকল্পনা  ভারতীয় বিজ্ঞানীদের। তার জন্য মহাকাশযান পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল।  (Shukrayaan-1 Mission)


শুক্রগ্রহের উদ্দেশে এযাবৎ একাধিক মহাকাশযান রওনা দিয়েছে। ২০১৬ সালে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ‘ভেনাস এক্সপ্রেস’ রওনা দেয়। জাপানের ‘আকৎসুকি ভেনাস ক্লাইমেট অরবিটার’ এখনও শুক্রগ্রহের চারিদিকে চক্কর কেটে চলেছে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র ‘পার্কার সোলার প্রোব’ও একাধিক বার শুক্রের গা ঘেঁষে উড়ে গিয়েছে। (ISRO Venus Mission)


শুক্রগ্রহের উদ্দেশে 'শুক্রযান-১' মহাকাশযান পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ISRO-তেও।  শুক্রগ্রহের বায়ুমণ্ডল এবং শুক্রপৃষ্ঠের গঠন নিয়ে গবেষণা করতে চায় ISRO. সেই লক্ষ্যেই শুক্রযান-১ মহাকাশযানটিকে পড়শিগ্রহের উপর নজরদারি চালাতে পাঠানোর ভাবনা রয়েছে।  শুক্রগ্রহের উদ্দেশে পাঠানো হবে মহাকাশযান, সেই থেকেই পরবর্তী ওই মহাকাশ অভিযানের নাম রাখা হয়েছে 'শুক্রযান'।


আরও পড়ুন: Vampire Stars: খাদ্য-খাদক সমীকরণ মহাশূন্যেও, লক্ষ লক্ষ ‘ভ্যাম্পায়ার’ নক্ষত্র রয়েছে যেমন, পাওয়া গেল সহকারী নক্ষত্রও


'শুক্রযান-১' মহাকাশযানের পেলোডে একটি হাই-রেজলিউশন সিন্থেটিক অ্যাপার্চার রেডার থাকবে। সেই সঙ্গে মহাকাশযানটিতে বসানো থাকবে গ্রাউন্ড-পেনিট্রেটিং রেডারও, যার মাধ্যমে শুক্রপৃষ্ঠের উপর নজরদারি চালানো হবে। এত শক্তিশালী ওই দুই রেডার যে, দৃশ্য়মানতা কম থাকলেও, সামনে বাধাবিঘ্ন থাকলেও, বহু দূর থেকে শুক্রের মাটির উপর নজরদারি চালানো যাবে।


সৌরজগতের উজ্জ্বলতম গ্রহ শুক্র। পৃথিবীর সঙ্গে অনেক মিলও রয়েছে।  কিন্তু শুক্রের বায়ুমণ্ডলের চাপ পৃথিবীর তুলনায় ১০০ গুণ বেশি। এর কারণ এখনও পরিষ্কার নয়। অ্যাসিড উপাদান মিশে রয়েছে শুক্রের ঘন মেঘে। যে কারণে শুক্রের মাটির কাছাকাছি পৌঁছনো যায় না। পৃথিবী এবং শুক্র শুধুমাত্র পড়শিই নয়, দুই গ্রহের সৃষ্টিও প্রায় একই সময়ে। কিন্তি পৃথিবীতে প্রাণ ধারণের উপযুক্ত পরিবেশ থাকলেও, শুক্রে কেন নেই, এই প্রশ্ন আজকের নয়। আগামী দিনে পৃথিবীর অবস্থাও কি শুক্রের মতো হবে, রয়েছে এই প্রশ্নও। সেই সবের উত্তর পেতে চায় ISRO.


ISRO-র চেয়ারম্যান এস সোমনাথ জানিয়েছেন, অভিযানের সব পরিকল্পনা মোটামুটি সারা। পেলোডও তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু 'শুক্রযান-১' মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ কবে, এখনও সেই দিনটি ঠিক হয়নি। গোড়ায় ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় 'শুক্রযান' অভিযান হবে বলে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু করোনা কালে গবেষণার কাজে ব্যাঘাত ঘটলে, দিন পিছিয়ে যায়। তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শুক্রযান পাঠানো হতে পারে বলে অনুমান করছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। নইলে ২০৩১ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে বলেও সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে।


আয়তনে প্রায় সমান সমান পৃথিবী এবং শুক্র। অবস্থান অনুযায়ী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলা দ্বিতীয় গ্রহ শুক্র, তৃতীয় পৃথিবী। পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটবর্তী গ্রহ। দুই গ্রহের ভর এবং ঘনত্বও প্রায় সমান সমান। আজ থেকে প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে সৃষ্টি দুই গ্রহেরই, যে কারণে পৃথিবী এবং শুক্রকে 'যমজ বোন'ও বলা হয়। সৌরজগতের সব গ্রহের মধ্যে শুক্রের তাপমাত্রাই সবচেয়ে বেশি, ৪৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বায়ুমণ্ডল কার্বন ডাই অক্সাইডে পরিপূর্ণ হওয়াতেই এত তাপমাত্রা। শুক্রের বায়ুমণ্ডলে আটকে পড়ে সূর্যরশ্মি, এর ফলেও বৃদ্ধি পায় তাপমাত্রা।


পৃথিবী এবং শুক্রের গতিপথও পরস্পরের পরিপন্থী। পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তিত হয়। শুক্র ঘোরে পূর্ব থেকে পশ্চিমে। পৃথিবী যেখানে কক্ষপথে ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে থাকে, সেখানে শুক্র হেলে থাকে ১৭৭.৩৬ ডিগ্রি। পৃথিবীর আকাশে সূর্য পূর্বে উদয় হয়, অস্ত যায় পশ্চিমে। শুক্রে ঠিক এর উল্টো। শুক্রের গতিও অত্যন্ত শ্লথ। সেখানকার এক দিন পৃথিবীর ২৪৩ দিনের সমান। কিন্তু গোড়ার দিকে শুক্র এমন ছিল না বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। তাঁদের মতে, একসময় শুক্রেও জলের অস্তিত্ব ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তা উবে গিয়েছে। মূলত সৌরঝড়ের প্রকোপেই এমন অবস্থা।