কলকাতা: পার্কে নিয়ে যাওয়া, ঘাড়ে চড়ে পুজোর ঠাকুর দেখা, সাইকেল চালানো শেখা- এরকম আরও অনেক অনেক আবদার মেটানোর একমাত্র ব্যক্তি বাবা। কিন্তু প্রাণ বেড়ে ওঠে মায়ের গর্ভেই। ভ্রূণ থেকে দেহ তৈরির জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় গর্ভের নিশ্চিন্ত আশ্রয়েই।


পৃথিবীর তাবৎ প্রাণীকুলের সর্বত্র জন্মপ্রক্রিয়া নারীদেহেই হয়। কিন্তু এতবড় বিশ্বের বৈপরীত্য থাকবে না। তা তো হয় না। প্রাণসৃষ্টির প্রক্রিয়াতেও রয়েছে। তা লুকিয়ে সমুদ্রের তলার জগতে। বলা হচ্ছে সি-হর্সের কথা। এই সামুদ্রিক প্রাণীদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণ করে পুরুষরা। কীভাবে? অবশ্যই জানব। তবে তার আগে সামান্য কিছু জেনে নিতে হবে সি-হর্স-(Sea Horse)এর ব্যাপারে।


ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ উপকূলীয় অঞ্চলে অগভীর সমুদ্রে দেখা মেলে এই সামুদ্রিক প্রাণীটির। একঝলক দেখলে অনেকটা ঘোড়ার মতো লাগে। তার সঙ্গেই রয়েছে মাছের বৈশিষ্ট্য। বিভিন্ন প্রজাতির সি-হর্স রয়েছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি প্রতিবেদনের সূত্র অনুয়ায়ী ৩২ রকম সি হর্স পাওয়া যায়। প্রজাতিভেদে এর আকার আর দৈর্ঘ্য বিভিন্ন হতে পারে। ১ ইঞ্চি থেকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্য হতে পারে সি-হর্সের। প্যাঁচানো লেজ, টিউবের (Tube Like Feature) মতো মুখ রয়েছে প্রাণীটির। গোটা দেহ শক্ত আঁশ দিয়ে ঢাকা, যা বিপদ থেকে রক্ষা করে সি-হর্সকে। 


চমকপ্রদ প্রজনন:
এই সামুদ্রিক প্রাণীটির প্রজননের (Reproduction) পদ্ধতিটিও বেশ চমকপ্রদ। প্রজননের আগে স্ত্রী ও পুরুষ সি-হর্স মিলিত হয়। একে Courtship Dance বা Pre Dawn Dance বলা হয়। প্রথমে স্ত্রী ও পুরুষ সি-হর্স নিজেদের লেজ জুড়ে সাঁতার কাটতে থাকে। তারপর Courtship Dance শুরু হয়। এই প্রক্রিয়া অন্তত ৮ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এই সময়ের মধ্যেই পুরুষ সি-হর্স তার পাউচ বা ব্যাগের ভিতর থেকে জল বের করে সেখানে নতুন করে জল ঢোকায়। তারপরে স্ত্রী সি-হর্স ডিম্বনালি সেই ব্য়াগে ঢুকিয়ে ডিম্বাণু ছাড়ে। তারপরে সেখানে শুক্রাণু ছাড়ে পুরুষ সি-হর্স। সেই ব্যাগের মধ্যেই নিষেক ঘটে। প্রজাতিভেদে ১০-২৫ দিন ধরে চলে এই গর্ভধারণ প্রক্রিয়া। পেটের ওই ব্যাগে থাকা জলের লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করে পুরুষটি। যাতে বাইরের সমুদ্রের জলের পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে পাতে শাবকরা। এই সময়টা যতটা সম্ভব বিশ্রাম করে পুরুষটি। সঙ্গী স্ত্রী সি-হর্স দেখভাল করে যতটা সম্ভব। সময় হলে সেই পাউচ বা ব্যাগ থেকে মাংশপেশি সঙ্কোচনের মাধ্য়মে শাবক সি-হর্সগুলিকে বের করে বাবা সি-হর্স। এক একবারে অন্তত ১০০০ বা তারও বেশি শাবকের জন্ম দেয় সি-হর্স।


প্রজননের পরেই কিন্তু কার্যত অভিভাবক-হীন হয়ে যায় শাবক সি-হর্স। ফলে প্রতি ১০০০-এর ৫ এর মতো এদের Survival rate. এমন হওয়ার কারণ একবার জন্মের পরেই ফের আবার গর্ভধারণ করতে পারে পুরুষ সি-হর্স। কোনও কোনও প্রজাতির ক্ষেত্রে সকালে জন্ম দেওয়ার পরে, রাতে আবার গর্ভধারণ করতে পারে পুরুষ স্ত্রী-হর্স। আর মাঝের এই কদিন তার সঙ্গীনি ব্যস্ত থাকে ডিম্বাণু উৎপাদনে।


এমন অভূতপূর্ব প্রাণীটিও বিপদের তালিকায় রয়েছে। বেশ কিছু দেশে সি-হর্স থেকে তৈরি ওষুধের ব্যবহার রয়েছে। বেশ কিছু রোগের নিরাময়ে এই ওষুধের ব্যবহারের চল রয়েছে। তাই গোটা বিশ্বের সি-হর্স শিকার ও পাচারের ঘটনা দেখা যায়। পাশাপাশি জলবায়ু বদল এবং সমুদ্রের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণেও ক্রমশ কমছে এদের সংখ্যা।


আরও পড়ুন: স্বাদ আনে, স্বাস্থ্যের জন্য় উপকারী, তিল বীজ ব্যবহারে কী লাভ?