নয়াদিল্লি: শীতল সমুদ্র স্রোত ‘লা নিনা’র দেখা মিলেছে। ডিসেম্বর মাসে জাঁকিয়ে শীতও পড়ে। কিন্তু তার পরও উষ্ণায়নের (Global Warming) প্রকোপ এড়ানো গেল না ২০২২ সালে। বরং এ যাবৎকালীন পঞ্চমতম সর্বোচ্চ উষ্ণ বছর হিসেবে ২০২২ সালে নাম উঠল ইতিহাসে (Warmest Year 2022)। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা অন্তত তেমনই জানিয়েছে।
বিপদবাণী শোনাল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা
শুধু তাই নয়, গত বছর পৃথিবী পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রাও বেড়েছে উদ্বেগজনক ভাবে। গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমনকেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতাবৃদ্ধির জন্য দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, এর ফলে মেরুপ্রদেশের তাপমাত্রাও বেড়ে চলেছে বিপজ্জনক গতিতে। জয়বায়ু পরিবর্তন এবং তার প্রভাব নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া সংস্থাগুলি এ ব্যাপারে একমত।
নাসা জানিয়েছে, ২০২২ সালে পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২০১৫ সালের সমান ছিল। সেই নিরিখে পঞ্চম সর্বোচ্চ উষ্ণতম বছর বলে গন্য হয়েছে ২০২০। নিউ ইয়র্কে নাসা-র গোদার্দ ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজ জানিয়েছে, ২০২২ সালে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ছিল ১.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (০.৮৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস), যা নাসা-র বেঁধে দেওয়া মাত্রার তুলনায় ঢের বেশি।
আরও পড়ুন: Weather Update: পৌষ সংক্রান্তিতে উধাও ঠান্ডা, আগামী সপ্তাহে উপকূলবর্তী জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস
নাসা-র প্রশাসক বিল নেলসন বলেন, “এই উষ্ণতাবৃদ্ধি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ক্রমশ উষ্ণতর হয়ে ওঠা আমাদের জলবায়ু এক সন্ধি ক্ষণে উপস্থিত হয়েছে, যেখানে দাবানলের ঘটনা বাড়ছে, ক্ষমতা বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়ের, খরায় জর্জরিত হয়ে পড়ছে পৃথিবী, সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে উদ্বেগজনক ভাবে।”
১৮৮০ সাল থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা নথিভুক্ত করার রীতি চালু হয়। কিন্তু গত ন’বছরে বৈশ্বিক তাপমাত্রা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা এর আগে কখনও লক্ষ্য করা যায়নি বলে মত বিজ্ঞানীদের। ১৯ শতকের তুলনায় ২০২২ সালের বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১.১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি ছিল।
এর আগে, ২০২০ সালে করোনা যখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রায় সাময়িক পতন লক্ষ্য করা গিয়েছিল। কিন্তু অতিমারির প্রকোপ কিছুটা আলগা হতেই মানুষের ব্য়বহৃত গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন ফের বিপজ্জনক আকার ধারণ করেছে বলে মত বিজ্ঞানীদের। সম্প্রতি নাসা এবং একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার বিজ্ঞানীরা জানান, ২০২২ সালে যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন ঘটেছে, তা এর আগে কখনও ঘটেনি। কার্বন ডাই অক্সাইডের পাশাপাশি অন্য গ্রিনহাউস গ্যাস, যেমন, মিথেনের নির্গমনও বেড়েছে।
করোনা কালে সাময়িক স্বস্তির পর ফের উদ্বেগ
২০২২ সালে আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের বৈঠকে মেরুপ্রদেশের উষ্ণতাবৃদ্ধি নিয়ে একটি বিশদ রিপোর্ট জমা পড়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, বিশ্বের অন্য জায়গার তুলনায় মেরু প্রদেশে প্রায় চার গুণ বেশি তাপমাত্রার বৃদ্ধি ঘটেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অতিবৃষ্টি, অহরহ ঘূর্ণিঝড়, খরার প্রকোপ নিয়ে সেই সময়ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। গত বছর বন্যায় কার্যত ভেসে যায় পাকিস্তান। আবার খরায় জর্জরিত হয়ে পড়ে আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল। হারিকেন ইয়ানও দাপিয়ে বেড়ায় আমেরিকায়।