নয়াদিল্লি: বছরের প্রথম পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। সেই নিয়ে উৎসাহ বাড়ছে। আগামী ৮ এপ্রিল বছরের প্রথম পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। মেক্সিকো, আমেরিকা, কানাডা এবং উত্তর আমেরিকার সব জায়গা থেকে এই পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এখনও পর্যন্ত যে তথ্য মিলেছে, সেই অনুযায়ী, ওই দিন ৪ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের জন্য চাঁদ পুরোপুরি ঢেকে দেবে সূর্যকে। মেক্সিকোর উত্তর-পশ্চিমের নাজাস গ্রাম থেকে সবচেয়ে ভাল ভাবে দেখা যাবে এই সূর্যগ্রহণ। (Total Solar Eclipse)


কিন্তু ৪ মিনিট ২৮ সেকেন্ড চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেললেও, এটি দীর্ঘতম পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ নয়। এর চেয়ে ঢের বেশি সময়ের জন্য সূর্যকে ঢেকে দেওয়ারর নজির রয়েছে চাঁদের। তবে কয়েক বছর বা কয়েক দশক আগে নয়, খ্রিস্টপূর্ব ৭৪৩ সালে যে সূর্যগ্রহণ হয়, সেটিই এখনও পর্যন্ত দীর্ঘতম পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। সেবার ৭ মিনিট ২৮ সেকেন্ড চাঁদের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় সূর্য।  (Longest Solar Eclipse)


আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA জানিয়েছে, দীর্ঘতম ওই পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সব হিসেব নিকেশ সেরে দেখা গিয়েছে, সেবার ওই পূর্ণগ্রহণ সূর্যগ্রহণ স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল ভারত মহাসাগর উপকূল থেকে। কেনিয়া, সোমালিয়ার মতো দেশে সবচেয়ে স্পষ্টরূপে ধরা দেয় ওই পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। 


আরও পড়ুন: Shrinking Moon: চাঁদের বুকে অসংখ্য চ্যুতিরেখা, ঘন ঘন ধস, কম্পনও, উপনিবেশ গড়া নিয়ে উদ্বেগ


গ্রহণ নিয়ে গবেষণা চালান বেলজিয়ামের আবহবিদ এবং জ্যোতির্বিদ জিন মিউস। তিনি জানিয়েছেন, পৃথিবীতে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ ৭ মিনিট ৩১ সেকেন্ড দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তবে জুলাই মাসে সূর্য যখন অপসূর অবস্থান, অর্থাৎ পৃথিবী থেকে যখন সর্বোচ্চ দূরত্বে বিরাজ করবে- সূর্য, সেই সময় নিরক্ষরেখার ৫ ডিগ্রি উত্তর থেকে বেশি সময় পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যেতে পারে। কারণ ওই সময় পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব সবচেয়ে কম হয়। ওই অবস্থান থেকে দুপুরে একদম মাথার উপর গ্রহণ দেখা যাবে।


বিগত কয়েক হাজার বছরে দীর্ঘতম পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ চোখে পড়েনি। তবে পরবর্তী ১৫০ বছরে দীর্ঘতম সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হতে পারে পৃথিবী। হিসেব কষে দেখা গিয়েছে, ২১৮৬ সালের ১৬ জুলাই ফ্রেঞ্চ গিনি উপকূল থেকে আটলান্টিক সাগরে দীর্ঘতম সূর্যগ্রহণ দেখা যেতে পারে, যা ৭ মিনিট ২৯ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। সেই সময় চাঁদকেও আরও বড় আকারে দেখা যেতে পারে, কারণ পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব কম হবে সেই সময়। 


আবার প্রযুক্তির দৌলতে বিকল্প উপায়ও বের করা সম্ভব। সুপারসনিক জেটে চেপে উড়ে গেলেই অত্যন্ত কাছ থেকে এবং তুলনামূলক বেশি সময়ের জন্য পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যেতে পারে। ১৯৭৩ সালের ৩০ জুন এমনই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন সাত বিজ্ঞানী। সুপারসনিক জেট Concorde 001-এ চেপে উড়ে যান তাঁরা, দীর্ঘ ৭ মিনিট ৪ সেকেন্ড তাঁদের চোখের সামনে স্থায়ী হয়েছিল পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ।


আগামী ৮ এপ্রিলের পর, ২০২৭ সালের ২ অগাস্ট ফের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ হবে, যা ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। ২০৪৫ সালের ১২ অগাস্ট যে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ হবে, তা স্থায়ী হবে ৬ মিনিট ৬ সেকেন্ড। ২০৬৩ সালের ২৪ অগাস্টের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ ৫ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। ২১ শতকে এখনও পর্যন্ত দীর্ঘতম পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ ঘটে ২০০৯ সালের ২২ জুলাই। সেবার ৬ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। 


পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ বলতে সেই বিশেষ মুহূর্তকে বোঝায়, যেখানে চাঁদ কার্যতই ঢেকে দেয় সূর্যকে। এমনিতে আকারে চাঁদের চেয়ে ৪০০ গুণ বড় সূর্য। কিন্তু পৃথিবী থেকে চাঁদের যত দূরত্ব, তার চেয়ে সূর্যের দূরত্ব ঢের বেশি। তাই চাঁদ যখন পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝে অবস্থান করে, সূর্য কার্যত ঢেকে যায়। শুধু বলয়াকারে তার বাইরের আলোকমণ্ডলের পাতলা স্তরই চোখে পড়ে পৃথিবী থেকে, যা দেখে মনে হয়, চাঁদকে ঘিরে যেন ঠিকরে পড়ছে আলো।


পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় পৃথিবীর উপর যে রেখা বরাবর চাঁদের ছায়া পড়ে, তাকে বলা হয় পূর্ণগ্রাসের পথ। ওই রেখা থেকেই পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের গোটা প্রক্রিয়া চাক্ষুষ করা সম্ভব হয়। আগামী ৮ এপ্রিল মেক্সিকের উত্তর-পশ্চিম অংশ, আমেরিকার টেক্সাস, ওকলাহোমা. আরকানসাস, মিসৌরি, ইলিনয়, কেনটাকি, টেনেসি, মিশিগান, ইন্ডিয়ানা, ওহায়ো, পেনসিলভ্যানিয়া, নিউইয়র্ক, ভারমন্ট, নিউ হ্যাম্পশায়ার, কানাডার ওন্টারিও, কোয়েবেক, নিউ ব্রান্সউইক, নিউফাউন্ডল্যান্ড, প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড থেকে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে।


পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণে কয়েক বছর পর পর দেখা গেলেও, তার মাঝে আংশিক সূর্যগ্রহণও ঘটে। প্রতি বছর অন্তত দু’বার সূর্যগ্রহণ দেখা যায়। কখনও কখনও তা পাঁচ বারও হতে পারে। কিন্তু পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ বিরল ঘটনা। গড় হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৮ মাস অন্তর পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যায়। তবে কোনও একটি অঞ্চল থেকে পর পর দু’বার পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখতে ৩৭৫ বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে।