কলকাতা: রাষ্ট্রসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে বর্তমান জনসংখ্যা ৮০০ কোটিরও বেশি। মানুষ ছাড়াও পৃথিবীতে রয়েছে প্রচুর স্থলজ-জলজ প্রাণী। লাখ লাখ প্রজাতির প্রাণীদের একমাত্র ভরসা অক্সিজেন। গোটা পৃথিবীজুড়ে এই অক্সিজেনের পরিমাণ মাত্র ২১ শতাংশ। এটুকু দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে সবাইকে। 


ধরা যাক, হঠাৎ করেই এই অক্সিজেন ফুরিয়ে গেল। খুব বেশি সময়ের জন্য নয়। মাত্র কয়েক সেকেন্ড। ধরা যাক, মাত্র ১০ সেকেন্ডের জন্য এমনটা হল। নিশ্চয়ই ভাবছেন, এই ১০ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রেখে টিকে থাকা খুব একটা কঠিন হবে না। কারণ কয়েক সেকেন্ড পরেই তো অক্সিজেন ফিরে আসবে। অনেকে টানা ৩০ সেকেন্ড এমনকি এক মিনিটও শ্বাস আটকে রাখতে পারেন। কিন্তু ব্যাপারটা তত সহজ নয়। কারণ এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তোলপাড় হয়ে যাবে গোটা বিশ্ব। আমাদের শ্বাস নিতে অসুবিধা না হলেও এমন সব কান্ড ঘটবে, যা সবাইকে হকচকিয়ে দেবে। ১০ সেকেন্ডের জন্য অক্সিজেন হাপিশ হয়ে গেলে কী হতে পারে ? 


১. আগুন জ্বলবে না: অক্সিজেন ছাড়া আগুন জ্বলতে পারে না। এই দশ সেকেন্ডও তাই হবে। থেমে যাবে রান্নাবান্না থেকে শুরু করে আরও নানা কাজকর্ম। যেমন গাড়ি, বিমান সবই!


২. সব গাড়ি থেমে যাবে: জ্বালানি দিয়ে যে গাড়িগুলি চলে, সেগুলি হঠাৎ করে মাঝরাস্তায় থেমে যাবে। বিমানেরও এখন জ্বালানিই ভরসা। কমবাশন টেকনোলজি কাজ করার জন্য অক্সিজেন চাই। আর অক্সিজেন না থাকলে মাঝ আকাশে ওড়া বিমান সোজা নিচে…।


৩. আকাশ অন্ধকার হয়ে যাবে: সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসার সময় বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন কণার গায়ে ধাক্কা খায়। বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন কম থাকলে তা আর হবে না। ফলে আকাশে আর আলো দেখা যাবে না। অন্ধকার নেমে আসবে। 


৪. জল উবে যাবে: জলের মধ্য়ে হাইড্রোজন ও অক্সিজেন দুইই থাকে। এর মধ্যে থেকে অক্সিজেন উবে গেলে হাইড্রোজেন একা হয়ে যাবে। সেটি সোজা উবে যাবে আকাশে। বায়ুমন্ডলের মধ্যে কোথায় হারিয়ে যাবে বলা মুশকিল। কারণ এটি খুবই হালকা।


৫. চুপসে যাবে পৃথিবী: বেশ সুন্দর একটা গোল চেহারা রয়েছে পৃথিবীর। কিন্তু সেটা আর থাকবে না। কারণ পৃথিবীর পেটের আগুনে জগতটার ৪৫ শতাংশই অক্সিজেন। গনগনে ম্যাগমা জ্বলতে পারবে না। এর ফলে ভেঙে পড়বে গোল চেহারাটা। বাড়িঘরদোর, বিশাল বিশাল বিল্ডিং সব পৃথিবীর পেটের দিকে ঢুকে যাবে।


৬. বাড়িঘর ভ্যানিশ: তবে বাড়িঘরও যে থাকবে তা তো নয়। কারণ সিমেন্ট পোক্তভাবে একজায়গায় ধরে রাখে অক্সিজেনই। সেটাই যদি না থাকল, তাহলে আর বাড়ি ঘরদোর কীসের। দেখা যাবে, বাড়ির সব কিছু আলগা হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সব ধুলো।


৭. ধাতব জিনিস জুড়ে যাবে: আমাদের চারপাশে অনেক ধাতব জিনিস থাকে। কিন্তু সেগুলি জুড়তে গেলে উচ্চ তাপমাত্রায় প্রথমে গলিয়ে নিতে হয়। অক্সিজেন না থাকলে ধাতব জিনিস একে অপরের সঙ্গে কয়েক লহমায় জুড়ে যাবে। আসলে সাধারণ অবস্থায় ধাতব বস্তুর উপর অক্সিজেনের স্তর থাকে। যে কারণে এমন কোনও ঘটনা ঘটে না।


৮. কানের পর্দা ফেটে যাবে: যখন বায়ুতে অক্সিজেন রয়েছে তখন কানের ভিতর একটি চাপ থাকে। ২১ শতাংশ অক্সিজেন উবে যাওয়া মানে ২১ শতাংশ চাপ কমে যাওয়া। এ অনেকটা ২০০০ মিটার উঁচু পাহাড় থেকে এক সেকেন্ডে সমুদ্রতলে নেমে আসার মতো। তেমনটা নেমে এলে চাপের কারণে কানের পর্দা ফেটে যাবে।


৯. ত্বক পুড়ে যাবে: বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিকে পৃথিবীতে আসা থেকে আটকে দেয়। এই ওজোন গ্যাস আসলে অক্সিজেন মৌল দিয়ে তৈরি। ফলে অক্সিজেন না থাকলে ১০ সেকেন্ডেই ত্বক পুড়ে যেতে পারে। 


১০. শরীর ফুলে ঢোল হয়ে ফেটে যেতে পারে: শরীরের অনেকটাই জল। আর জল মানেই তাতে হাইড্রোজেন রয়েছে। অক্সিজেন না থাকলে জল থাকবে না আর। এর ফলে হাইড্রোজেন গ্যাসের আকার নেবে। তরলের তুলনায় গ্যাসের আয়তন বেশি হয়। এর ফলে সেই হাইড্রোজেন গ্যাস হয়ে আয়তনে বাড়বে। যার জন্য আমাদের শরীর ফুলতে ফুলতে একসময় ফেটে যেতে পারে। 


আরও পড়ুন - Real vs Fake Paneer: ভেজাল পনির কিনে ঠকার দিন শেষ ! ৫ টিপস মনে রাখলেই খাঁটির স্বাদ পাবেন