কলকাতা: হোয়াটসঅ্যাপের অ্যাবাউটে লেখা - 'অনলি টেবিল টেনিস'..কিন্তু আদতেই এতটা একাগ্রতা প্রথমে কিন্তু ছিল না ছেলেটার। বাবা অংশুমান ভট্টাচার্য নিজে কোচ, মা কুন্তলি ভট্টাচার্যও টেবিল টেনিস খেলেন। তবে টেনিস নয়, আর পাঁচটা ছেলের মতো ক্রিকেটের প্রতিই ঝোঁক ছিল। একদিন মায়ের সঙ্গে কোচিং ক্যাম্পে ঢুঁ মেরেছিল সে। ব্যাস, পছন্দ বদলে গেল। টেবিল টেনিসই খেলবে সে, মনস্থির করে ফেলা। আর তারপর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রাজারহাটের অঙ্কুর ভট্টাচার্যকে। রাজ্যস্তর, জাতীয় স্তরের পর এবার আন্তর্জাতিক মঞ্চেও বাজিমাত করেছে সে। ইয়ুথ টেবিল টেনিসের ওয়ার্ল্ড ট্যুরে ৪ টে পদক। ২টো রুপো ও ২টো ব্রোঞ্জ জিতেছে বাংলার এই ১৪ বছর বয়সি প্যাডলার।
ভারত থেকে মোট ১৬ জন ছেলে ও ১৬ জন মেয়ে এবার ওয়ার্ল্ড ট্যুরে অংশ নিয়েছিল ইয়ুথ টিটিতে। মেয়েদের বিভাগে কেউ পদক জিততে না পারলেও ছেলেদের বিভাগে বাংলার মধ্যে একমাত্র অঙ্কুরের ঝুলিতেই এসেছে পদক। এবিপি লাইভকে ফোনে অঙ্কুর বলছে, 'বাবার কাছেই কোচিং করতাম ছোট থেকে। এখনও বাবাই আমার সবচেয়ে বড় সমালোচক। দেশে কোথাও টুর্নামেন্ট হলে বাবা যান আমার সঙ্গে। কিন্তু গত ২ মাস ধরে ওয়ার্ল্ড ট্যুরে ছিলাম। সেখানে বাবা যেতে পারেননি। তবে তাঁর সঙ্গে সবসময় কথা হয়েছে সব ম্যাচ নিয়ে। ওয়ার্ল্ড ট্যুরে এবার একমাত্র বাঙালি হিসেবে পদক জিতেছি। মনোবল আরও বেড়ে গিয়েছে। আমাকে আরও ভাল করতে হবে। অলিম্পিক্সে দেশের হয়ে খেলতে চাই। আর সেখানেও পদক জিততে চাই।'
চিনের টেবিল টেনিস প্লেয়ার ঝাং জিকের খেলার ভক্ত অঙ্কুর। শ্যামবাজারের শৈলেন্দ্র সিরকার বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রের কথায়, 'আমি যখনই অবসর সময়ে কাটাই তখনই ইউটিউব থেকে ঝাং জিকের খেলা দেখি। ওঁ অলিম্পিক্সে পদক জিতেছিল। কেরিয়ার গ্র্যান্ডস্লামও রয়েছে। আমিও ওঁর মতো সাফল্য পেতে চাই।'
বাংলার টেবিল টেনিসের ২ নক্ষত্র সৌম্যদীপ রায় ও পৌলমী ঘটকের সঙ্গে কথা হয়েছে? অঙ্কুর বলছে, 'সৌম্য দা ও পৌলমী দি আমাকে একটা রাবার উপহার দিয়েছে বিশ্বমঞ্চে সাফল্য পাওয়ার পর। ওঁরা যে কোনও সমস্যায় সবসময় আমার পাশে থেকেছেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নতুন রবার ব্যাটে লাগিয়েই নামব।'
ওয়ার্ল্ড ট্যুরে নিজের বিভাগে বিশ্বের ১ নম্বর চেক প্রজাতন্ত্রের ব্রেল স্টিফানের বিরুদ্ধেও জয় পেয়েছিল অঙ্কুর। টেনিসের পাশে ক্রিকেটের দিকেও নজর রয়েছে তার। কলকাতা নাইট রাইডার্স পছন্দের টিম আইপিএলে। অঙ্কুরের কথায়, 'একবার এয়ারপোর্টে আরসিবির হর্ষল পটেলের সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছিল। সে আমাকে চেনে না। কিন্তু আমি ওঁকে দেখেই দৌড়ে গিয়েছিলাম ছবি তুলব ভেবে।' আগামী ২-৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্তুগালে ইয়ুথ ওয়ার্ল্ড কাপ রয়েছে। সেখানে প্রতিনিধিত্ব করবে অঙ্কুর। আপাতত তাতেই পাখির চোখ এই কিশোর প্যাডলারের।
আরও পড়ুন: প্রস্তুতি ম্যাচ নয়, এটিকে মোহনবাগান কোচের ভরসা সিচুয়েশন প্র্যাক্টিসে