সন্দীপ সরকার, কলকাতা: আইপিএলের (IPL) জন্মলগ্নে, ২০০৮ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে করেছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। তার ১৫ বছর পর ফের কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সিতে আইপিএলে সেঞ্চুরি করেছেন কোনও তারকা। তবু মন ভাল নেই বেঙ্কটেশ আইয়ারের (Venkatesh Iyer)। কারণ, তাঁর সেঞ্চুরিতেও জেতেনি দল। আইপিএলে কেকেআরের মরণ-বাঁচন পরিস্থিতি। বাকি ৪ ম্যাচের সবকটি জিততেই হবে। কী আলোচনা চলছে ড্রেসিংরুমে? পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে কি প্রতিশোধের ম্যাচ? জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখেন? ইডেনে পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিন প্র্যাক্টিসের শেষে এবিপি লাইভকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন নাইট তারকা।
প্রশ্ন: হাতে রয়েছে ৪ ম্যাচ। প্লে অফের দৌড়ে থাকতে গেলে সবকটি ম্যাচই জিততে হবে। চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছেন কীভাবে?
বেঙ্কটেশ আইয়ার: এখনই চার ম্যাচের কথা ভাবছি না। একটা একটা করে ম্যাচ ধরে এগচ্ছি। এখনই যদি ভাবতে বসি ৪ ম্যাচই জিততে হবে, তাহলে নিজেদের ওপর প্রচুর চাপ তৈরি করে ফেলব। তাই ম্যাচ হিসাবে এগচ্ছি। প্রত্যেক ম্যাচেই মাঠে নেমে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ার চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: শেষ চারটি ম্যাচের মধ্যে তিনটি রয়েছে হোমগ্রাউন্ড ইডেন গার্ডেন্সে। তাতে কি বাড়তি সুবিধা পাবেন?
বেঙ্কটেশ: অবশ্যই। ঘরের মাঠে খেলা সবসময়ই সুবিধাজনক। আমরা চাই ইডেন গার্ডেন্স আমাদের দুর্গ হয়ে উঠুক। এখানে এখনও প্রত্যাশিত ফল হয়নি আমাদের। তবে আমরা প্রতিপক্ষের চেয়ে এখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি ভাল বুঝব। সেই অনুযায়ী রণকৌশল সাজাব। ম্যাচ জিততে চাই যে কোনও ভাবেই।
প্রশ্ন: মরণ-বাঁচন পরিস্থিতি কি আপনার সেরাটা বার করে আনতে সাহায্য় করে? নাকি বাড়তি চাপের বোঝা হয়ে ওঠে?
বেঙ্কটেশ: এটা পুরোটাই চিন্তাভাবনার ওপর নির্ভর করে। আর পাঁচটা ম্যাচের মতো করে দেখা উচিত। এমনকী, সেটা শেষ ম্যাচ জানলেও সকলে সেরাটা দেওয়ার জন্যই ঝাঁপাবে। আমাদের দল সেভাবেই এগচ্ছে। সকলেই এটা বোঝার জন্য যথেষ্ট পরিণত যে, এই ধরনের পরিস্থিতি আমাদের ওপর যেন চাপ তৈরি না করে। যদি চাপ তৈরি হয়ও, পেশাদার হিসাবে আমাদের তার সঙ্গে লড়াই করতে হবে।
প্রশ্ন: কেকেআর এই মরসুমে বেশ কয়েকটি ওপেনিং জুটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলিয়েছে। আপনি নিজে কোনও ম্যাচে ওপেন করেছেন, কোনও ম্যাচে পরে নেমেছেন। আপনার পছন্দের ব্যাটিং অর্ডার কী?
বেঙ্কটেশ: ক্রিকেটার হিসাবে আমি সব সময় সব রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে চাই। আমি এখানেই ব্যাট করব, এরকম কোনও চিন্তাভাবনা নিয়ে মাঠে নামি না। দল আমাকে যে পোজিশনে খেলতে বলবে, সেই জায়গাতেই নেমে অবদান রাখার চেষ্টা করব। ব্যাটিং অর্ডারের নির্দিষ্ট কোনও জায়গা বেছে নেওয়া মানে নিজেকে কমফর্ট জোনে নিয়ে যাচ্ছি। এটা আমি কখনও করব না। নিজেকে কখনওই স্বস্তিদায়ক জায়গায় নিয়ে যাব না।
প্রশ্ন: এখনও পর্যন্ত আপনার মিশ্র অভিজ্ঞতা হয়েছে এবারের আইপিএলে। সেঞ্চুরি করেছেন। আবার ভাল শুরুর পরেও কম রানে আউট হয়ে গিয়েছেন অনেকগুলো ইনিংসে। ক্রিকেটার বেঙ্কটেশ আইয়ার এ নিয়ে কী ভাবছেন?
বেঙ্কটেশ: সব দিন সমান যায় না। যখনই মাঠে নামি, আমি চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দেওয়ার। দলের হয়ে অবদান রাখার। আমার ব্যক্তিগত রান যাই হোক না কেন, লক্ষ্য থাকে দল যেন জেতে। যেদিন আমি সেঞ্চুরি করেছিলাম, দল কিন্তু হেরে গিয়েছিল। আমি ব্যক্তিগত রেকর্ডে বিশ্বাস করি না। নিজের রানের ভাঁড়ার ভারি হওয়ার চেয়ে দলের জেতাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সবসময়ই সেটা চাই।
প্রশ্ন: এবারের আইপিএলে এখনও পর্যন্ত কোনও ম্যাচে বল করেননি। টুর্নামেন্টের শেষ দিকে কি অলরাউন্ডার আইয়ারকে দেখা যাবে?
বেঙ্কটেশ: আমি বোলিং করার জন্য প্রস্তুত। পুরো ৪ ওভার বল করতে চাই। সেই সুযোগের অপেক্ষায় আছি। কারণ আমি বিশ্বাস করি বল হাতেও আমি অবদান রাখতে পারি। দল চাইলেই বোলিং করব।
প্রশ্ন: সামনেই দেশের মাটিতে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। নিজের সামনে কী লক্ষ্য রাখছেন?
বেঙ্কটেশ: এখনও অনেক দেরি রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবছি না। এখন শুধু আইপিএলে পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। কীভাবে পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে খেলব। কীভাবে আরও ফিট থাকব। কীভাবে ব্য়াটিং করব। ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছি না।
প্রশ্ন: পাঞ্জাব কিংস প্রথম সাক্ষাতে কেকেআরকে হারিয়েছে। সোমবারের দ্বৈরথকে কি প্রতিশোধ নেওয়ার ম্যাচ হিসাবে দেখছেন?
বেঙ্কটেশ: না ঠিক সেভাবে ভাবছি না। (হাসি) প্রথম সাক্ষাতে কিন্তু ম্যাচটা শেষ হয়নি। বৃষ্টি নেমে গিয়েছিল। আমরা যে জায়গায় ছিলাম, ম্যাচটা জিততেও পারতাম। এবারের ম্যাচে আমাদের পরিকল্পনাগুলো কাজে লাগাতে পারলে আমরাই জিতব।
প্রশ্ন: এমন একটা পরিস্থিতি যখন সব ম্যাচই ডু অর ডাই। ড্রেসিংরুমে এ নিয়ে কী আলোচনা চলছে?
বেঙ্কটেশ: আমরা বেশি ভাবছি না। একটা একটা করে ম্যাচ ধরে এগচ্ছি। ড্রেসিংরুমে কোনও চাপ নেই। সবাই ফুরফুরে মেজাজে। আমরা জানি সব ম্যাচই জিততে হবে। তবে সারাক্ষণ সব ম্যাচ জিততে হবে জিততে হবে বলে নিজেদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছি না।
আরও পড়ুন: IPL Exclusive: বদলে যাচ্ছে ইডেনের পিচ? কেকেআর-পাঞ্জাব ম্যাচে ঘূর্ণির পুর্বাভাস