সন্দীপ সরকার, কলকাতা: বোর্ডের (BCCI) মসনদ কার্যত হাতছাড়া। আইসিসি (ICC) চেয়ারম্যান হওয়ার সম্ভাবনাও ভীষণ ক্ষীণ। অনেকে ভেবেই নিয়েছেন যে, ক্রিকেট প্রশাসনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) প্রথম ইনিংস কার্যত শেষ।


ভাবছেন। এবং ভুল ভাবছেন। ক্রিকেট কেরিয়ারে যেমন বারবার অবিশ্বাস্য সব প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন, ক্রিকেট প্রশাসনেও সেরকমই 'কামব্যাক' দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বরং বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, সিএবি প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন সৌরভ।


যা শুনে অনেকে চমকে উঠছেন। কারণ, বুধবার রাত পর্যন্ত শোনা যাচ্ছিল, সিএবি নির্বাচনেও বেশ চাপে সৌরভ শিবির। বরং বিরোধী শিবির প্রত্যাঘাত করতে তৈরি। বিরোধী শিবিরের প্রধান তিন মুখ, প্রাক্তন সিএবি কর্তা গৌতম দাশগুপ্ত, বিশ্বরূপ দে ও সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় একাধিক বৈঠক করেছেন। ১৪ অক্টোবর, শুক্রবার আর একটি বৈঠক হওয়ার কথা। যে বৈঠকে সিএবি-র আসন্ন বার্ষিক সাধারণ সভার (৩১ অক্টোবর) নীল নকশা চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার কথা। এবং শোনা যাচ্ছিল, সেই বৈঠকে দিকনির্দেশ করতে পারেন রাজ্যের শাসক দলের প্রধান দুই মুখ।


অথচ তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যেন কিছুটা স্বস্তি সৌরভ শিবিরে। সেনাপতি নিজেই যে যুদ্ধে নামতে পারেন শোনা যাচ্ছে।


এ যেন রুদ্ধশ্বাস টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ডেথ ওভার। যেখানে এক ওভারে ম্যাচের রং বদলে যায়। যদিও ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত কর্তারা বলছেন, সিএবি বা বোর্ড রাজনীতি এরকমই। কাল যে ফকির, আজ রাজা হতেই পারেন। কাল ফের যে ফকির হবেন না, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই।


কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের অনেকের মনে প্রশ্ন, লোঢা কমিটির নিয়মে তো সৌরভের সিএবি প্রশাসনে আসার কথাই নয়। কারণ, ২০১৪ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৫ বছর ৩ মাস রাজ্য ক্রিকেট সংস্থায় পদাধিকারী ছিলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, টানা ৬ বছর প্রেসিডেন্ট ও সচিব, এই দুই শীর্ষপদে থাকা যায়। সেদিক থেকে মনে করা হচ্ছিল, সিএবি প্রশাসনে সৌরভের হাতে আর ৯ মাস পড়ে রয়েছে এবং একটা সম্পূর্ণ মেয়াদকাল তিনি সিএবি প্রশাসনে থাকতে পারবেন না।


কিন্তু সব অঙ্ক বদলে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়। যেখানে বলা হয়েছে, রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষপদ মিলিয়ে কেউ টানা ১২ বছর দায়িত্বে থাকতে পারবেন। জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়কের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, সেই হিসাবে সৌরভের আট বছর তিন মাস অতিবাহিত হয়েছে এবং হাতে এখনও চার বছরের কাছাকাছি সময় রয়েছে। সামনে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। সেই কথা মাথায় রেখে, আসন্ন সিএবি নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন সৌরভ।


সৌরভের ঘনিষ্ঠ একজন এবিপি লাইভকে বলছিলেন, 'কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সামনে ওয়ান ডে বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্ট। এরকম টুর্নামেন্টের ম্যাচ আয়োজন করতে গেলে সৌরভের মতো দক্ষ এবং আন্তর্জাতিক পরিচিতি সম্পন্ন প্রশাসক প্রয়োজন।'


এমনকী, বিরোধী শিবিরও সৌরভের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ওয়াকিবহাল। বিরোধী শিবিরের এক কর্তা বলছেন, 'সৌরভ প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন জমা দেবে বলেই শুনছি।' সেক্ষেত্রে অবশ্য সিএবি-র মসনদে কারা থাকবেন, তা নিয়ে নতুন করে অঙ্ক কষা চলছেন। মোটামুটিভাবে ঠিকই হয়ে গিয়েছে যে, নির্বাচন নয়, সমঝোতা করেই ঠিক হবে সিএবি-র বিভিন্ন পদে কে কে থাকবেন। যে ইঙ্গিত বুধবারই দিয়েছিল এবিপি লাইভ। শোনা যাচ্ছিল, প্রধান ৫ পদ (প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, সচিব, যুগ্ম সচিব, কোষাধ্যক্ষ) শাসক ও বিরোধী গোষ্ঠী মিলিয়ে ভাগ হবে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রধান দাবিদার ছিলেন স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। যিনি এখন সিএবি সচিব।


কিন্তু সৌরভ প্রেসিডেন্ট হলে স্নেহাশিস কি সচিবই থাকবেন? কোষাধ্যক্ষ হিসাবে আপাতত রয়েছেন দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। যিনি সম্পর্কে সৌরভের কাকা? সেক্ষেত্রে কি বঙ্গ ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থার শীর্ষ তিন পদে থাকবেন একই পরিবারের তিনজন। বিরোধীরা কি তা মেনে নেবেন?


বিরোধী শিবিরের এক কর্তা কটাক্ষের সুরে বলছেন, 'ভালই তো হবে। সিএবি পুরো গঙ্গোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স হয়ে যাবে।' যোগ করছেন, 'সৌরভ প্রেসিডেন্ট হলে কাকে বাদ পড়তে হয় দেখুন।' ১৪ অক্টোবরের বৈঠক কি হচ্ছে? ওই কর্তার কথায়, 'এখনও পর্যন্ত যা খবর, হচ্ছে।'


৩১ অক্টোবর সিএবি-র বার্ষিক সাধারণ সভা। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ২২ অক্টোবর। ততদিনে বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভা (১৮ অক্টোবর) হয়ে যাবে। সেদিনই স্পষ্ট হয়ে যাবে, আইসিসি-তে সৌরভকে আদৌ পাঠানো হবে কি না। তারপরই সম্ভবত সিএবি প্রেসিডেন্ট হিসাবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন সৌরভ।


আইসিসি-তে না গেলে সিএবি-র মসনদে দেখা যেতেই পারে প্রিন্স অফ ক্যালকাটাকে।


আরও পড়ুন: শ্রীনিবাসনের থেকে মাইনে নিতেন, কড়া বিবৃতি সৌরভ শিবিরের, প্রমাণ করুক, পাল্টা বিশ্বরূপ