কলকাতা: স্থানীয় একটি টুর্নামেন্টে তাঁর বোলিং দেখে ভাল লেগে গিয়েছিল ক্রিকেট কোচ অরবিন্দ ভরদ্বাজের (Arbind Bharadwaj)। খুদে প্রতিভাকে ঘষামাজা করলে অনেক দূর যাবে, জুহুরির চোখে উপলব্ধি করেছিলেন অরবিন্দ। কিন্তু বাদ সাধলেন কিশোরের বাবা, পেশায় সিআরপিএফ জওয়ান রাজেন্দ্র প্রসাদ। তিনি কিছুতেই চান না যে, বড় ছেলে ক্রিকেট খেলুক। বরং আর পাঁচজন রক্ষণশীল অভিভাবকের মতো তাঁরও মনে হয়েছিল, ছেলে পড়াশোনা করবে। ভাল চাকরি করবে।


শেষ পর্যন্ত বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাজেন্দ্রকে রাজি করাতে পেরেছিলেন অরবিন্দ। শুরু হয়েছিল কিশোরের এক নতুন সফর।


সেদিনের সেই কিশোর রবি কুমার (Ravi Kumar)। বাংলার বাঁহাতি পেসার রবিবার অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের জন্য ভারতীয় দলে সুযোগ পেলেন। বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত রবি। অনূর্ধ্ব ১৯ এশিয়া কাপের দলেও রয়েছেন তিনি। যে দল সোমবার উড়ে যাবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে। তার আগে বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে চলছে প্রস্তুতি শিবির। সেখান থেকে রবিবার সন্ধ্যায় এবিপি লাইভকে রবি বললেন, 'আমি খুব খুশি। ভারতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা আমার স্বপ্ন।'


যদিও শৈশবে রবি কখনও ভাবেননি যে, তিনি ক্রিকেটার হবেন। উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে পৈতৃক ভিটে। সেখানে নেহাত সময় কাটাতেই ক্রিকেট খেলতেন। আর পাঁচটা বাচ্চার মতো। টেনিস বলে। রবি বলছিলেন, 'ক্রিকেটার হওয়ার কথা ভাবিনি। ছোটবেলা আলিগড়ে একটি স্থানীয় টুর্নামেন্টে দেখেছিলেন অরবিন্দ স্যার। আমার বোলিং ভাল লেগে যায়। বাবা আমাকে ক্রিকেট খেলতে দিতে চাননি। কোচের জোরাজুরিতে রাজি হন। আমার সব দায়িত্ব নেন অরবিন্দ স্যার। তারপর আমি ক্রিকেটকে ভালবেসে ফেলি।' আলিগড়ে অরবিন্দের অ্যাকাডেমিতে খেলা শুরু। এখন ছাত্রকে তালিম দিতে মাঝে মধ্যে কলকাতায় আসেন অরবিন্দ। রবিও সময় পেলেই যান আলিগড়ে।


কলকাতায় জন্ম। পরে আলিগড়ে যান রবি। তবে ক্রিকেটের টানেই কলকাতায় ফিরে আসা। নাকতলায় কাকু-কাকিমার কাছে থাকেন। রবি বলছেন, 'আমি নিজেকে বাংলারই একজন মনে করি। কলকাতাতেই জন্ম। বাংলাই আমার বাড়ি। এখানকার মানুষজন, খাবার-দাবার সবই ভাল লাগে। আমি বাংলারই হয়ে গিয়েছি।'


তিন ভাই-বোন। দিদি বড়। বাবা সিআরপিএফে কর্মরত। আপাতত ওড়িশায় পোস্টিং। কলকাতা ময়দানে রবির হাতেখড়ি হাওড়া ইউনিয়নে খেলে। চলতি মরসুমে প্রথম ডিভিশনে খেলছেন বালিগঞ্জ ইউনাইটেডের হয়ে। বাংলার অনূর্ধ্ব ১৯ দলে খেলেছেন। রবি বলছেন, 'রাজ্য দলে খেলা ও ভারতীয় দলে খেলার মধ্যে অনেক তফাত আছে। অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। কারণ জাতীয় দলে আমার পারফরম্যান্স সবাই দেখবে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই।' যোগ করছেন, 'সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া, বাংলার অনূর্ধ্ব ১৯ কোচ দেবাঙ্গ গাঁধী, জয়ন্ত স্যার ও শৈশবের কোচ অরবিন্দ ভরদ্বাজের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। নেটে আমার বোলিং দেখেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় স্যার (Sourav Ganguly)। সেটাও আমার কাছে বড় অনুপ্রেরণা।'


প্রিয় ক্রিকেটার? রবি বলছেন, 'আমি মিচেল স্টার্কের ভক্ত। স্টার্কের বোলিং স্টাইল, আগ্রাসন ভাল লাগে। পেসারের আত্মবিশ্বাস সবচেয়ে বড় অস্ত্র। বল দুদিকে স্যুইং করাতে পারি। ভাল খেলার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।'


আরও পড়ুন: অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে সুযোগ পেলেন বাংলার রবি


জাতীয় শিবিরে অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটারদের উৎসাহ দিয়েছেন রোহিত শর্মা। যিনি নিজে এখন জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে রিহ্যাবিলিটেশন করছেন। কী বললেন রোহিত? রবি বলছেন, 'রোহিত স্যার বললেন, খেলা উপভোগ করো। চাপ নিও না। শেখার অনেক কিছু রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিখবে। ক্রিকেট উপভোগ করো। কোচ হৃষিকেষ কানিতকরও একই কথা বলেছেন।'


ক্রিকেটের জন্য একসময় পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। আবার শুরু করবেন। দশম শ্রেণিতে। আপাতত রবির চোখে জাতীয় যুব দলের হয়ে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন।