কলকাতা: মাঝে আর মাত্র এক দিন। তার পরেই এ মরশুমে প্রথম মুখোমুখি হবে কলকাতার দুই ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল এফসি ও মোহনবাগান এসজি (East Bengal vs Mohun Bagan Super Giant)। বড় ম্যাচ বা কলকাতা ডার্বিতে লাল-হলুদ ও সবুজ-মেরুন জার্সির ঐতিহাসিক ফুটবল যুদ্ধ যে শুধু দুই দলের লড়াই, তা নয়। মাঠের মধ্যে অনেকগুলো ছোট ছোট লড়াইও দেখা যায় এই ম্যাচে। দুই পক্ষেই একাধিক নির্ভরযোগ্য তারকা ফুটবলার রয়েছেন, যাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকবেন সমর্থকেরা। প্রতিবারই কলকাতা ডার্বি জন্ম দেয় এক একজন সেরা তারকার। দুই শিবিরের এই তারকাদের মধ্যেই দেখা যাবে একাধিক ‘ডুয়েল’। এই দ্বৈরথে কে জিতবে, তা আগাম বলা বেশ কঠিন। শনিবারের কলকাতা ডার্বিতে দুই শিবিরের আক্রমণ, রক্ষণ এবং মাঝমাঠে তিন সম্ভাব্য ডুয়েল নিয়েই এই বিশেষ প্রতিবেদন।


জেমি ম্যাকলারেন বনাম আনোয়ার আলি


লাল-হলুদ বাহিনীর গোল এরিয়ায় এই দুই তারকার যুদ্ধ জমে উঠবে শনিবার। গত ম্যাচে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন ম্যাকলারেন। সে দিনই আইএসএলে প্রথম শুরু থেকে খেলেন তিনি। ৭৫ মিনিট মাঠে ছিলেন। একটি গোল করেন। ৫৯ শতাংশ নিখুঁত পাস দেন। দু’টি গোলের সুযোগও তৈরি করেন এবং তাঁর দুটি শট ছিল লক্ষ্যে। অস্ট্রেলিয়ার লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপে খেলা এই তারকাকে আটকানো দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছিল মহমেডান রক্ষণের পক্ষে। শনিবারের ডার্বিতে তাঁকে আটকানোর দায়িত্ব নিশ্চয়ই থাকবে লাল-হলুদ বাহিনীর অন্যতম নির্ভরযোগ্য স্টপার আনোয়ার আলির ওপর।

২৪ বছর বয়সী এই ভারতীয় দলের সেন্টার ব্যাক ভাল ফর্মে রয়েছেন। তিনটি ম্যাচে পুরো ২৭০ মিনিট খেলেছেন তিনি। দলকে একাধিক গোল খাওয়া থেকে বাঁচিয়েছেন দায়িত্ব নিয়ে। পাসিংয়েও অসাধারণ আনোয়ার। এ পর্যন্ত তাঁর ৮৪ শতাংশ পাসই নিখুঁত, যে পরিসংখ্যান যে কোনও কোচকেই খুশি করতে পারবে। প্রতিপক্ষের অ্যাটাকারদের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়া (১৫ বার), ট্যাকল করা (২), তাদের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে জেতা (৫), ক্লিয়ারেন্স (৮), ইন্টারসেপশন (৬) এমনকী, সেটপিস থেকে গোলের সুযোগ তৈরি করাতেও (৩) তিনি দুর্দান্ত। শনিবার এই দুই তারকা মুখোমুখি হলে তাঁদের লড়াই অবশ্যই জমে উঠবে।

মাদি তালাল বনাম আপুইয়া


ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠে যেমন সবচেয়ে সচল খেলোয়াড়টির নাম মাদি তালাল, তেমনই মোহনবাগান মাঝমাঠকে অনেকটা সংগঠিত করে রাখার কাজটা করেন লালেঙমাউইয়া রালতে ওরফে আপুইয়া। দু’জনেরই কাজ দলের মাঝমাঠ থেকে রক্ষণ ও আক্রমণের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখা। তালাল মাঝমাঠ থেকে মাঝে মাঝেই যে মারাত্মক পাসগুলি পাঠান দলের ফরোয়ার্ডদের, সেগুলি প্রায়ই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। যদিও তাঁর এই লম্বা পাসগুলিকে কাজে লাগিয়ে ক্লেটন, মহেশ, নন্দকুমাররা গত চারটি ম্যাচে একটিও গোল করতে পারেননি। কিন্তু এই ম্যাচে জিততে গেলে তাঁদের তালালের দেওয়া নিখুঁত গোলের পাসগুলিকে কাজে লাগাতে হবে। এ পর্যন্ত ৮০ শতাংশ নিখুঁত পাস দিয়েছেন এই ফরাসি মিডফিল্ডার। চার ম্যাচে ১১টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন। তাঁর পাঁচটি শট ছিল গোলে, কিন্তু মাত্র একটি গোলে ঢুকেছে।

শনিবার ডার্বিতে হয়তো এই তালালকেই পাহাড়ায় রাখার দায়িত্ব পাবেন আপুইয়া। প্রতিপক্ষের মাঝমাঠে সবচেয়ে বিপজ্জনক খেলোয়াড়কে আটকাতে নিজের দলের মাঝমাঠের সবচেয়ে ধারালো অস্ত্রকেই নিশ্চয়ই ব্যবহার করবেন বাগান কোচ হোসে মোলিনা। দু’জনের বয়সের মধ্যে তিন বছরের ফারাক। আপুইয়া বরং বয়সে ছোট। প্রচণ্ড মরিয়া ভাব দেখা যায় তাঁর মধ্যে। একবার প্রতিপক্ষের কোনও খেলোয়াড়কে ধরলে আর ছাড়তে চান না। দলের গোলের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান এ পর্যন্ত তেমন না থাকলেও মাঝমাঠ থেকে অসাধারণ কিছু পাস বাড়িয়েছেন এই মিজো তরুণ। তিনটি গোলের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। প্রতি ম্যাচে গড়ে ৪২টি পাস খেলেছেন তিনি। তার মধ্যে ৮৩ শতাংশ পাসই ছিল নিখুঁত। শনিবার শুধু তালালকে অচল করা নয়, নিজেদের মাঝমাঠকে সচল রাখার দায়িত্বও থাকবে তাঁর ওপর।

ক্লেটন সিলভা বনাম টম অ্যালড্রেড


ইস্টবেঙ্গলের গ্রিক ফরোয়ার্ড গতবারের গোল্ডেন বুট জয়ী দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের চোটের জন্য আপাতত ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড ক্লেটন সিলভাই লাল-হলুদের প্রধান অ্যাটাকার। যদিও মহেশ, নন্দ, সল ক্রেসপো, তালালদের কাছ থেকে যথেষ্ট সাহায্য পান তিনি। কিন্তু তাদের সাহায্য সে ভাবে কাজে লাগাতে পারছেন না। প্রতিপক্ষের গোলের সামনে গিয়ে অনেক ভুল করছেন, যা ক্লেটনের মতো ফুটবলারের কাছে মোটেই প্রত্যাশিত নয়। কিন্তু ফুটবলের ইতিহাস বলছে, মহা তারকারা বড় ম্যাচেই জ্বলে ওঠেন। তাই শনিবার ডার্বিতে নিজেকে ও দলকে ফেরাতে যে মরিয়া হয়ে উঠবেন তিনি, এমনই আশা করা যায়। এই মরিয়া স্ট্রাইকারকে আটকানোর দায়িত্বে থাকবেন মোহনবাগানের স্কটিশ সেন্টার ব্যাক টম অ্যালড্রেড। শনিবার তাঁর সঙ্গী ডিফেন্ডার আলবার্তো রড্রিগেজ মাঠে নামতে পারবেন কি না, তা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। যদি না পারেন, তাঁর ওপর বেশ চাপ থাকবে। ক্ষিপ্র ও ধূর্ত ক্লেটনকে তাঁর দিনে আটকানো যে কোনও ডিফেন্ডারের কাছেই কঠিন চ্যালেঞ্জ।


আরও পড়ুন: চোটে অনিশ্চিত ঋদ্ধিমান, শততম ম্যাচে অভিমন্যুকে ঘিরে আগ্রহ, কল্যাণীতে বাংলার কাঁটা বৃষ্টি

ব্রাজিলীয় ক্লেটন, আইএসএলে যাঁর ৩৬টি গোল ও ১১টি অ্যাসিস্ট রয়েছে, তিনি এ মরশুমে প্রতিপক্ষের বক্সে ১২বার বল ছুঁয়েছেন, দু’টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন। কিন্তু ২২৩ মিনিট মাঠে থেকে মাত্র একটি শট গোলে রাখতে পেরেছেন। তাই খুব একটা যে ভাল ফর্মে আছেন তিনি, তা একেবারেই বলা যায় না। সে দিক থেকে দেখতে গেলে অ্যালড্রেড গত ম্যাচেই প্রমাণ করেছেন, ছন্দে থাকলে দলের রক্ষণে তিনি বড় ভরসা হয়ে উঠতে পারেন। এ পর্যন্ত চারটি ম্যাচে তিনটি ইন্টারসেপশন, ১১টি ক্লিয়ারেন্স ও দু’টি ব্লক করেছেন অ্যালড্রেড। ন’বার বল দখলের লড়াই জিতেছেন। ১১বার বল পুনরুদ্ধার করেছেন। এরিয়াল ডুয়েল জিতেছেন সাতবার। পাসিংয়েও বেশ ভাল তিনি। তাঁর ৮৪ শতাংশ পাসই নিখুঁত। গত ম্যাচে রড্রিগেজকে পাশে পেয়ে দারুন ভাবে নিজেদের দূর্গ রক্ষা করেন তিনি। শনিবার রড্রিগেজ তাঁর পাশে থাকুন বা না থাকুন, ক্লেটনকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারেন অ্যালড্রেড। (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: আইপিএল নিলামে দিল্লির টেবিলে থাকছেন সৌরভ, ২০২৭ সালে ফিরবেন ডিরেক্টর পদে?


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।