কলকাতা: আইএসএলে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান (East Bengal vs Mohun Bagan) মুখোমুখি হয়েছে আটবার। একটামাত্র ম্যাচ ড্র হয়েছে। বাকি সাত ম্যাচেই সবুজ-মেরুন বাহিনীর জয়জয়কার। যা নিয়ে কম আফশোস আর দুঃখ নেই লাল-হলুদ জনতার।


পাঞ্জাব এফসি ছাড়া আইএসএলে বাকি সব প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই জয় আছে ইস্টবেঙ্গলের। কিন্তু যে জয়ে তাদের মশাল দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে, সেই ডার্বি-জয় কখনও আসেনি আইএসএলে। শনিবার কী হবে? 


শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মরশুমের প্রথম ইস্ট-মোহন ডার্বিতে যে কোনও অঘটন ঘটবে না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের দিকে তাকালে মোহনবাগান এসজি-কে অনেকে এগিয়ে রাখছেন ঠিকই। কিন্তু এমন তো আগেও হয়েছে। ডার্বির আগে যে দলকে পিছিয়ে রাখা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তারাই জয়ের হাসি মুখে মাঠ ছেড়েছে। 


গতবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই


আইএসএলে অবশ্য এমন ঘটনা নেই। এই লিগে ডার্বিতে বরাবরই ফেভারিট মোহনবাগান। কিন্তু গত মরশুমে যে লড়াই তারা করেছিল, তা অনেকেরই মনে আছে নিশ্চয়ই। এই বছরেরই ফেব্রুয়ারির ঘটনা। ভোলার কথা নয়। কলকাতা ডার্বি তার চেনা আগুনে মেজাজে ফেরে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। সারা ম্যাচে দুই দল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে। উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে ৯০ মিনিটের সেই ফুটবল যুদ্ধ দেখে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ষাট হাজারি গ্যালারির দর্শক।


এই তুমুল উত্তেজনার মধ্যেই হয় চার-চারটি গোল। তিন মিনিটের মাথায় যেমন গোল হয়, তেমনই ৮৭ মিনিটের মাথাতেও গোল হতে দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত ২-২-এ খেলা শেষ করে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নেয় মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে সেটিই একমাত্র অমীমাংসিত কলকাতা ডার্বি। 


দ্বিতীয় লেগের ডার্বির পরে ৩-১-এ জিতে শেষ হাসি হাসেন মোহনবাগান এসজি-র ফুটবলাররা। কিন্তু প্রথমার্ধে তারা দাপুটে ফুটবল খেললেও দ্বিতীয়ার্ধ ছিল ইস্টবেঙ্গল এফসি-র নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু প্রথমার্ধেই তিন গোলে এগিয়ে যাওয়া মোহনবাগানকে আর টেক্কা দিতে পারেনি লাল-হলুদ বাহিনী। গত মরশুমে ডার্বি চেনা মেজাজে ফিরে এসেছিল যে ভাবে, এ বারও কি সেই মেজাজে পাওয়া যাবে না ‘ঘটি-বাঙাল’ যুদ্ধকে? 


ছন্দে ফিরছে বাগান


এ বার মোহনবাগানের আইএসএল সূচনা গত চারবারের তুলনায় সবচেয়ে খারাপ হয়েছে। গত মরশুমে প্রথম তিন ম্যাচেই জয় দিয়ে শুরু করে তারা এবং সাত গোল দিয়ে মাত্র দু’গোল হজম করে। এ বারের ছবিটা তার চেয়ে খারাপই। তবে শেষ ম্যাচে মহমেডানের বিরুদ্ধে যে দলগত ফুটবল খেলে তারা, তাদের কাছে সেই ফুটবলই আশা করে সমর্থকেরা। 


সে দিন সারা ম্যাচে ১২টি শট গোলে রাখে সবুজ-মেরুন বাহিনী। কিন্তু প্রতিপক্ষকে একটির বেশি শট গোলে রাখতে দেয়নি তারা। প্রতিপক্ষের বক্সে ২৪বার বল ছোঁয় মোহনবাগান। এই পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দেয় কতটা দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়ে ম্যাচ জিতে নেয় সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।    


তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা এক ঝাঁক গোলের সুযোগ তৈরি করেও তা গোলে পরিণত করতে না পারা। এ পর্যন্ত প্রচুর গোলের সুযোগ পেয়েছে তারা। চারটি ম্যাচে ৪৮টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছে। গত ম্যাচেও তারা ১৮টি গোলের সুযোগ পায়। এই তালিকায় মোলিনার দল ওপরের দিকেই রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে গোল হয়েছে মাত্র আটটি থেকে। 


আইএসএলে এর আগে প্রথম তিন ম্যাচের পর তাদের গোল-পার্থক্য কখনও নেতিবাচক থাকেনি। এ বার কিন্তু তা ছিল। গত ম্যাচেই তিন গোল করে তা ‘মাইনাস’ থেকে ‘প্লাস’-এ আনা গিয়েছে। এই ছন্দ ধরে রাখতে পারলে হয়তো শনিবারও তারা জিততে পারে। কিন্তু ম্যাচটা যেখানে ডার্বি, সেখানে কিছুই বলা যায় না। 


তারকা-দ্বৈরথ


অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড দিমিত্রি পেট্রাটসের পারফরম্যান্স প্রত্যাশার স্তর ছুঁতে পারেনি। আর এক অস্ট্রেলীয় জেসন কামিংস একটি গোল পেলেও ফর্মে নেই। গত ম্যাচে দল তিন গোলে জিতলেও এই দুজনের ভূমিকা তাতে তেমন ছিল না। একাই দাপিয়ে বেড়ান জেমি ম্যাকলারেন। শনিবারও তাঁর দিকেই থাকবে সবার নজর। রক্ষণে স্প্যানিশ সেন্টার ব্যাক আলবার্তো রড্রিগেজ ও স্কটিশ টম অ্যালড্রেড গত ম্যাচের মতো একসঙ্গে খেললে দলের রক্ষণ দুর্ভেদ্য হয়ে উঠবে। 


দলের সবাই ফিট বলেই জানিয়েছেন মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনা। মিডফিল্ডার আপুইয়া, গোলকিপার বিশাল কয়েথ ভাল ফর্মে থাকলেও লিস্টন কোলাসো, অনিরুদ্ধ থাপা, শুভাশিস বোস, আশিস রাই ক্রমশ উন্নতি করছেন। সম্প্রতি চোট পাওয়া সহাল আব্দুল সামাদ এবং মনবীর সিংও অনুশীলনে ফিরে এসেছেন। অর্থাৎ, শনিবার প্রথম এগারো বাছতে খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয় মোলিনার। 


প্রথম পয়েন্টের অপেক্ষায় ইস্টবেঙ্গল


মোহনবাগান তাদের দুঃসময় কাটিয়ে বেরোতে পারলেও ইস্টবেঙ্গল এখনও আলোয় আসতে পারেনি। প্রথম চারটি ম্যাচের পরেও এখনও কোনও পয়েন্ট অর্জন করতে পারেনি তারা। ১৩টির মধ্যে তারাই একমাত্র দল, যারা এখনও পয়েন্টের খাতা খুলতে পারেনি। শুরুতেই টানা তিনটি হারের পর দলের দায়িত্ব ছেড়েছেন স্প্যানিশ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। নতুন কোচ অস্কার ব্রুজোন ভিসা সমস্যায় আটকে পড়ায় ডার্বির আগে দলে যোগ দিতেও পারেননি। আপাতত সহকারী কোচ বিনো জর্জের তত্ত্বাবধানেই রয়েছে লাল-হলুদ বাহিনী। তবে ব্রুজোনের সঙ্গে আলোচনা করেই ডার্বির কৌশল ও পরিকল্পনা তৈরি করেছেন বলে জানিয়েছেন জর্জ।  


লাল-হলুদ শিবিরের তারকা ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস চোটের জন্য এতদিন খেলতে পারেননি। ফলে ফরোয়ার্ড ক্লেটন সিলভা ও অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সল ক্রেসপোর ওপরই আক্রমণের দায়িত্ব পড়ে। ফরাসি মিডফিল্ডার মাদি তালাল গোল তৈরি করে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও দলের ভারতীয় অ্যাটাকাররা তা ফিনিশ করতে পারছেন না।


জামশেদপুরে দু’গোলে হারা ম্যাচে মোট ২৪টি গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা। কিন্তু একবারও বিপক্ষের জালে বল জড়াতে পারেনি লাল-হলুদ ব্রিগেড। বিপক্ষের বক্সে ৩৩ বার বলে পা ছুঁয়েও কিছু করতে পারেনি ক্রেসপো-ক্লেটনরা। এক গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় পেনাল্টি পেয়েও সেই সুযোগও হাতছাড়া করেন ক্রেসপো। সুযোগ তো নষ্ট করছেনই। অবধারিত গোলও করতে পারছে না তারা। এর মধ্যে আবার নির্ভরযোগ্য উইঙ্গার নাওরেম মহেশ সিংয়ের চোট। অনুশীলন করতে পারছেন না ডিফেন্ডার হিজাজি মাহেরও। 


আরও পড়ুন: দ্রোহের ডার্বি! মানববন্ধন, বিরতিতে প্রতিবাদের পরিকল্পনা, ফের একজোট ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান


এ পর্যন্ত তিনটি গোল দিয়ে আটটি গোল খেয়েছে লাল-হলুদ বাহিনী। অর্থাৎ, আক্রমণ, রক্ষণ— দলের কোনও বিভাগই ছন্দে নেই। তবে গত ম্যাচে এতগুলি গোলের সুযোগ তৈরি করার মাধ্যমে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে ক্রমশ ছন্দে ফিরছে তারা। আন্তর্জাতিক অবকাশের মধ্যে অনেকটা সময় পেয়ে নিজেদের ভুল তারা শোধরাতে পেরেছে কি না, তা বোঝা যাবে শনিবারের ম্যাচেই। যদি পেরে থাকে, তা হলে ডার্বিতে মোহনবাগানকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেন ক্লেটনরা। (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: আইপিএল নিলামে দিল্লির টেবিলে থাকছেন সৌরভ, ২০২৭ সালে ফিরবেন ডিরেক্টর পদে?


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।