কলকাতা: আইএসএলের পয়েন্ট টেবিলে যেন সাপ-লুডোর খেলা চলছে। কোনও সময় শীর্ষে থাকছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan Super Giant), তো কখনও সেই মসনদ ছিনিয়ে নিচ্ছে বেঙ্গালুরু এফসি (Bengaluru FC)। এই লড়াইটা বেশ উপভোগ করছেন সবুজ-মেরুন কোচ হোসে মোলিনা (Jose Molina)। এই লড়াইটা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান তিনি।
শনিবার ঘরের মাঠে চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে দল নামানোর আগে মোলিনা বলেছেন, "প্রতিদিনই আমি আমার কাজ উপভোগ করি। প্রতি ম্যাচও উপভোগ করি। লড়াই ব্যাপারটাই আমি পছন্দ করি। কোনও দিন আমরা হারি, কোনও দিন জিতি। এটাই তো আনন্দের। তবে এই লিগে আমাদের লড়াইটা কোনও একটা দলের বিরুদ্ধে নয়, লড়াইটা লিগ টেবলের শীর্ষে ওঠার লড়াই। সব দলই ভাল। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে লড়াই পছন্দ করি আমি।"
তবে এই লড়াই করার জন্য দলের ফুটবলারদের কোনও বাড়তি চাপে ভুগতে দিতে চান না স্প্যানিশ কোচ। তাঁর বক্তব্য, যে কোনও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই সাফল্য পাওয়ার জন্য তাঁদের কী করতে হবে, তা খুব ভাল করেই জানেন তাঁর ফুটবলাররা। তাই বাড়তি চাপে ভোগেন না তাঁরা। এই নিয়ে মোলিনা বলেন, "আমরা পেশাদার। পরের ম্যাচে আমাদের কী করতে হবে, তা নিয়েই আমরা আলোচনা করি, প্রস্তুতি নিই। তার পরেই মাঠে নামি। সবাই জেনেই মাঠে নামে, তাদের কী করতে হবে। তাই বাড়তি চাপ থাকে না।"
তাদের বিরুদ্ধে সব দলই বাড়তি উজ্জীবিত হয়ে খেলে, তা মেনে নিয়ে সবুজ-মেরুন কোচ বলেন, "আমার মনে হয়, মোহনবাগানের বিরুদ্ধে সব দলই উজ্জীবিত হয়ে খেলে। কালও সেটাই হবে। সেজন্য আমাদের ওপর চাপও থাকবে। আমরা মোহনবাগান, আমাদের প্রতি ম্যাচেই জিততে হবে, এই চাপ সব সময়ই থাকে। আমরা পেশাদার। এই চাপ নিতেই হয় আমাদের এবং জিততেও এই চাপ নিয়েই প্রতি ম্যাচে জিতি।"
শনিবারের প্রতিপক্ষ চেন্নাইয়িন এফসি গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জিতেছে। তবু ওয়েন কোইলের দলকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন মোলিনা। প্রতিপক্ষ সম্পর্কে বলেন, "ওরা ভাল খেলছে। সব ম্যাচে হয়তো জিততে পারেনি। কিন্তু ওরা শক্তিশালী দল, ভাল খেলোয়াড় আছে ওদের। ওদের ফুটবলের ধারণাও পরিষ্কার। প্রতিপক্ষ হিসেবে কঠিন। কাল আমাদের ম্যাচ কঠিন হতে চলেছে। তবে নিজের দলের ওপর আমার আস্থা আছে। আশা করি, কাল আমরা ভাল খেলব এবং জিতব।"
চেন্নাইয়িনের দুই অ্যাটাকার উইলমার জর্ডন ও ড্যানিয়েল চিমার কথা উল্লেখ করে বাগান-কোচ বলেন, "ওরা ভাল খেলোয়াড়। ওরা আমাদের চাপে ফেলতে পারে। যে কোনও সময় গোল করে দিতে পারে ওরা। আইএসএলে অনেক ভাল ভাল অ্যাটাকার আছে। তবে সবাই সমান মানের ফুটবলার নয়। প্রতি ম্যাচেই আমাদের ডিফেন্ডারদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। কালও সে রকমই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হব আমরা। আমরা ভাল ছন্দে রয়েছি। শেষ পাঁচ ম্যাচে আমরা মাত্র একটা গোল খেয়েছি। আশা করি, সেরকমই ছন্দ এই ম্যাচেও ধরে রাখতে পারব আমরা।"
দলের ডিফেন্ডাররা এত দিন গোল করছিলেন, গত ম্যাচেও এক ডিফেন্ডারই প্রথম গোল করেন। পরে অবশ্য কোলাসো ও ম্যাকলারেন গোল করে জয় সুনিশ্চিত করেন। দলের অ্যাটাকাররা অবশেষে গোল পাওয়ায় খুশি মোলিনা। তবে তিনি চান, দলের সবাই গোল করুক। এই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, "স্ট্রাইকারদের গোল করাটা খুবই ভাল। কিন্তু আমাদের দলের সবাই গোল করতে পারে। গোলের জন্য আমরা শুধু স্ট্রাইকারদের ওপর নির্ভর করি না। লিস্টন, মনবীর, শুভাশিস, দীপেন্দুরাও গোল করেছে। গোল করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। সে যেই গোল করুক না কেন। গোল করে, জেতাই আমার কাছে বড় কথা।"
আলবার্তো, আপুইয়া, শুভাশিসের তিনটি করে হলুদ কার্ড। শনিবার যুবভারতীতে এঁদের কেউ একটি কার্ড দেখলেই আর পরের ম্যাচে নর্থইস্টের বিরুদ্ধে খেলতে পারবে না। তাই বলে অবশ্য এই তিন ফুটবলারকে অল্প সময়ের জন্য মাঠে রাখতে চান না তাঁদের কোচ। বলেন, "এখন নর্থইস্ট ম্যাচ নিয়ে আমি ভাবছি না। চেন্নাইয়িনকে হারাতে হবে, এটাই এখন ভাবছি। যাদের তিনটে করে হলুদ কার্ড আছে, তারা আর একটা কার্ড দেখলেই পরের ম্যাচ খেলতে পারবে না। এটা ফুটবলের অঙ্গ। ওরা খেলতে না পারলে অন্য খেলোয়াড় আছে। দু-একজনের ওপর নির্ভর করে দল চালাই না আমি।
আমাদের সব খেলোয়াড়ের প্রথম এগারোয় খেলার যোগ্যতা আছে। গত ম্যাচে দীপেন্দু খেলা সত্ত্বেও তো আমরা ক্লিন শিট রাখতে পারলাম। দল বাছাই করা আমার পক্ষে কঠিন হতে পারে, কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত। কারণ, আমার হাতে অনেক বিকল্প আছে। বিকল্প না থাকলে দল বাছা কঠিন হত।"
দলের তারকা মিডফিল্ডার অনিরুদ্ধ থাপাও মনে করেন, দলের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা থাকলেও তা যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর এবং এর ফলে তাঁরা আরও উন্নতি করতে পারছেন। এই প্রসঙ্গে থাপা বলেন, "আমাদের কোচের পক্ষে প্রথম এগারো বেছে নেওয়া বেশ কঠিন কাজ হয়ে ওঠে। কারণ দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়ই যথেষ্ট ভাল মানের। তবে উনি এই কাজটা খুব সুন্দর ভাবে করে থাকেন, যাতে দলের সকলেই মাঠে নামার সুযোগ পায়। আমাদের দলের ভারতীয় খেলোয়াড়রা প্রত্যেকেই নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করে। আমরা যে বিদেশীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলতে পারি, তাও প্রমাণ করার চেষ্টা করি। যখন (মাঝমাঠে) কোনও বিদেশী খেলতে পারে না, তখন আমরা আরও ভাল খেলার চেষ্টা করি। এটা আমাদের কর্তব্য।"
আপুইয়ার মতো কার্যকরী মিডফিল্ডার মোহনবাগানে যোগ দেওয়ায় যে তিনি এখন আরও চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারেন, তা স্বীকার করে নেন থাপা। বলেন, আপুইয়া খুবই ভাল খেলোয়াড়। দলকে ও যথেষ্ট সাহায্যও করছে। ও দলে আসায় আমার পক্ষেও ভাল হয়েছে। আমি আমার স্বাভাবিক জায়গায় খেলতে পারছি। তা ছাড়া আপুইয়া যা খেলছে, তাতে আমাদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা আরও বেড়েছে। অভিষেক, টাঙরি, গ্লেনের মতো ভাল ভাল খেলোয়াড়রা দলে রয়েছে, যারা প্রথম দলে জায়গা জন্য খুবই পরিশ্রম করে। আমাদের প্রত্যেককেই দলে জায়গা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয় যেটা খুবই ভাল।"
আরও পড়ুন: দাদার ষড়যন্ত্র? ভোটে হেরে বোমা ফাটালেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই, ময়দান ছেড়ে না যাওয়ার বার্তা
প্রাক্তন ক্লাব চেন্নাইয়িনের কোচের প্রশিক্ষণে তিনি আগেও খেলেছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে থাপা বলেন, "চেন্নাইয়িনের কোচকে যেহেতু আমি চিনি, তাই বলতে পারি, উনি আমাদের হারানোর জন্য দলকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করবেন। এ ভাবেই উনি খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেরাটা বার করে নিয়ে আসেন। সে জন্যই ওঁর দলের খেলোয়াড়রা ভাল খেলে। আমাদের বিরুদ্ধেও নিশ্চয়ই ওরা কাল লড়াকু ফুটবল খেলবে।"
চোট সারিয়ে সদ্য মাঠে ফিরে থাপা বলছেন, "ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছি। একশো শতাংশ সুস্থ কি না জানি না। যে কোনও খেলোয়াড়েরই জীবনের অঙ্গ এটা। ছোটখাটো চোট-আঘাত হতেই থাকে আমাদের। তবে এখন অনেক ভাল অনুভব করছি এবং কালকের ম্যাচের জন্য আমি তৈরি।" (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: বন্ধুর প্রেমের প্রস্তাবে রাজি, স্নেহাশিস-কন্যার নতুন ইনিংস, খুশির হাওয়া সৌরভের পরিবারে