ভুবনেশ্বর: ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে আইএসএলে (ISL 2024-25) তাদের প্রথম দেখায় গোলশূন্য ড্র করেছিল তারা। টানা পাঁচটি ম্যাচে অপরাজিত থাকার পর ছিল সেই ম্যাচে ছন্দে ফেরা মহমেডান এসসি-র ঘরের মাঠে নেমে হোঁচট খেয়েছিল কলিঙ্গবাহিনী (Odisha FC vs Mohammedan Sporting)। শুক্রবার ফিরতি ম্যাচেও তারা হারাতে পারল না কলকাতার সাদা-কালো বাহিনীকে। ফল সেই গত ম্যাচের মতোই, গোলশূন্য। টানা পাঁচ ম্যাচে হারার পর এ দিনই ১২ নম্বর পয়েন্ট অর্জন করল তারা।
সে দিনও যে ভাবে ওড়িশার আক্রমণ বিভাগকে আটকে রেখে দিয়েছিল, এ দিনও কার্যত সেই একই ছকে কৌশলী স্প্যানিশ কোচ সের্খিও লোবেরার দলকে আটকে রাখলেন জুডিকা, অজিয়ে, সাজাদরা। বরাবরের মতো প্রচুর গোলের সুযোগও তৈরি করল মহমেডান এসসি। কিন্তু সেগুলিকে গোলে করতে পারলেন না ফ্রাঙ্কা, গোমেজরা। যা তারা প্রায় প্রতি ম্যাচেই করে থাকেন।
এ দিন ঘরের মাঠে ওড়িশা এফসি যেখানে ৬টির বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি এবং তিনটির বেশি শট গোলে রাখতে পারেনি, সেখানে মহমেডান ১২টি গোলের সুযোগ তৈরি করে, কিন্তু মাত্র দু’টি শট লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে। অথচ সব মিলিয়ে ১৪টি শট নিয়েছে তারা। হোমটিম সেখানে আটটির বেশি শট নিতে পারেনি। দিয়েগো মরিসিওরা যেমন বেশি সুযোগই পাননি, সেখানে ফ্রাঙ্কারা এক ঝাঁক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি।
এই ড্রয়ের ফলে ওড়িশা এফসি-র প্লে-অফের রাস্তা বেশ কঠিন হয়ে গেল। তাদের আর একটি ম্যাচ বাকি। সেই ম্যাচে জিতলেও তারা ৩৩ পয়েন্টের ওপরে উঠতে পারবে না। যদি মুম্বই সিটি এফসি তাদের শেষ তিন ম্যাচে ও নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি তাদের দুই ম্যাচে কোনও পয়েন্ট না পায়, একমাত্র তা হলেই প্লে-অফে খেলার সুযোগ পেতে পারে ওড়িশা। যদিও ফুটবলে অঘটন ঘটেই থাকে। কিন্তু এতগুলি অঘটন পরপর ঘটলে তবেই কলিঙ্গবাহিনীর ভাগ্য শিকে ছিঁড়বে। তবে এই বড়সড় ধাক্কার মধ্যেই ওড়িশা শিবিরে একটাই ভাল খবর, বিশাল কয়েথ এবং গুরপ্রীত সিং সান্ধুর পর ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ৫০টি ক্লিন শিট অর্জন করা গোলকিপারদের ক্লাবে তৃতীয় সদস্য হলেন তাদের গোলপ্রহরী অমরিন্দর সিং।
এ দিন ম্যাচের প্রথম সুযোগটিই এসেছিল ওড়িশার কাছে, যখন কিক-অফের কয়েক মিনিট পরেই ইসাক ভানলালরুয়াতফেলা এক দুর্দান্ত লং বলে ডান প্রান্তে ফাঁকা জায়গায় রহিম আলির কাছে বল পাঠান। দক্ষতার সঙ্গে বল নিয়ন্ত্রণ করলেও বক্সে ঢোকার কোনও উপায় না পেয়ে সামনে থাকা দিয়েগো মরিসিওকে বল বাড়িয়ে দেন রহিম। গোল করার মতো ভাল অবস্থানেই ছিলেন মরিসিও। তবে বলে ঠিকঠাক শট নিতে ব্যর্থ হন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড এবং গোলের অনেক ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে দেন।
মহমেডান এসসি ম্যাচের প্রথম গোল পাওয়ার খুব কাছাকাছি জায়গায় পৌঁছে যায়, যখন বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে বক্সের ভেতরে মনবীর সাইনি উদ্দেশ্যে নীচু ক্রস বাড়ান লালরেমসাঙ্গা ফানাই। কিন্তু সময়মতো বল ক্লিয়ার করে দেন থোইবা সিং। ফলে সেই সুযোগ হাতছাড়া হয় তাদের।
পাল্টা আক্রমণের কৌশল নিয়ে খেলতে নামা কলকাতার দল ২০ মিনিটের মাথায় আরেকটি সুযোগ তৈরি করে, যখন লালরেমসাঙ্গা দ্রুত এক দৌড়ে গোলের মুখে চলে যান। তবে কার্লোস দেলগাদো সঠিক সময়ে সেখানে পৌঁছে গিয়ে তাঁর শট ব্লক করেন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে শুরু করে মহমেডান এবং শুরুতেই লক্ষ্যে শট নেন মনবীর। তবে দুর্দান্ত সেভ করে তাঁর সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করেন অমরিন্দর। অন্যদিকে, ইসাক বারবার বাঁ দিক থেকে আক্রমণ চালিয়ে মহমেডান ডিফেন্ডারদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন। তরুণ এই অ্যাটাকার একাধিক সুযোগ তৈরি করলেও মহামেডানের রক্ষণভাগ ছিল সুসংগঠিত।
পরবর্তী কয়েক মিনিটে বেশ কিছু আশাব্যঞ্জক আক্রমণ তৈরি করেন ফ্রাঙ্কা। বাঁ প্রান্তে এ দিন বেশ গতিশীল ছিলেন ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়টি এবং সহজেই প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের ধোঁকা দিয়ে এগিয়ে যান। তবে, ফিনিশিংয়ের অভাব বরাবরই তাঁর বড় সমস্যা। এ দিনও তার ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। ৬৮তম মিনিটে অময় রানাওয়াড়ের একটি ভুলের সুযোগ নিয়ে ওড়িশা এফসি-র ডিফেন্সের বাধা পেরিয়ে ঢুকে পড়েন ফ্রাঙ্কা। তাঁর সামনে তখন কেবল অমরিন্দর ছিলেন, কিন্তু পাঁচ গজ দূর থেকে নেওয়া তাঁর শটও লক্ষ্যের বাইরে চলে যায়!
ইসাকের সামনে ফের বড় সুযোগ আসে ৮৮ মিনিটের মাথায়, যখন সেভিয়ার গামা তাঁকে একটি ক্রস পাঠান বক্সের মধ্যে। কিন্তু ইসাকের গোলমুখী শটটি ক্রসবারের সামান্য ওপর দিয়ে উড়ে যায়। শেষ কয়েক মিনিটে মহমেডান এসসি বলের দখল বেশি রাখলেও তারা ফিনিশিংয়ে যথেষ্ট কার্যকর ছিল না, যার ফলে ম্যাচের শেষে দুই দল এক পয়েন্ট করে ভাগ করে নিতে বাধ্য হয়। এতে মহমেডানের তেমন ক্ষতি না হলেও ওড়িশা বেশ চাপে পড়ে গেল।
এ দিন মহমেডানের ফরাসি ডিফেন্ডার ফ্লোরেন্ট অজিয়ের পারফরম্যান্স ছিল উল্লেখযোগ্য। মহমেডান এসসি-র ডিফেন্সে মূল স্তম্ভ হিসেবে এ দিন ছিলেন তিনি। পুরো ম্যাচ জুড়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলেন এবং ম্যাচের সেরার খেতাব জিতে নেন। এ দিন চারটি ট্যাকল এবং সমান সংখ্যক ক্লিয়ারেন্স করেন অজিয়ে। পাশাপাশি একবার ইন্টারসেপশনও করেন। সারা ম্যাচে মোট ৫৭টি পাসের মধ্যে ৪৯টিই সফলভাবে সম্পন্ন করেন তিনি। তাঁর এই পারফরম্যান্সে গোল অক্ষত থাকলেও দলকে জেতানোর পক্ষে যথেষ্ট ছিল না।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: মুম্বই সিটির ঘরের মাঠে প্রথম জয়ের খোঁজে লিগশিল্ডজয়ী মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট