সন্দীপ সরকার, ভুবনেশ্বর: কটূ গন্ধ নাকে যেতেই তাঁরা টের পেয়ে গিয়েছিলেন, 'অভিশপ্ত উপত্যকা' পেরচ্ছেন।


অভিশপ্তই তো! একটা দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে ২৮৮ প্রাণ। এখনও নিখোঁজ অনেকে। গুরুতর আহতরাও লড়াই করছেন। বাহানাগা গ্রাম। ওড়িশার যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কার্যত জট পাকিয়ে গিয়েছিল দুই মেল - করমণ্ডল ও যশবন্তপুর এবং একটি মালগাড়ি। এখনও ধ্বংসস্তুপের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কামরাগুলি। গোটা এলাকায় দুর্গন্ধ। দেহ পচন ধরার বদ ঝাঁঝ।


তবু ফুটবলের টানকে অগ্রাহ্য করতে পারেননি তাঁরা। গৌতম ও বিয়াস বর্মন। সম্পর্কে, বাবা-ছেলে। শুধুমাত্র ফুটবলের টানে উদ্বেগের রেল সফর করে বালিগঞ্জ থেকে পৌঁছে গিয়েছেন ভুবনেশ্বরে। ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে (Intercontinental Cup) ভারতের প্রথম ম্যাচে মাঠে বসে সুনীল ছেত্রীদের সমর্থনে গলা ফাটাবেন বলে।


'তিন সপ্তাহ আগে রিজার্ভেশন করিয়ে রেখেছিলাম। ছেলে ফুটবল অন্ত প্রাণ। ওর জন্যই ভুবনেশ্বরে আসা। ধৌলি ধরে এসেছি। শনিবার সকালের দুরন্ত এক্সপ্রেস ধরে ফিরে যাব,' বলছিলেন গৌতম। পেশার রেলকর্মী ছিলেন। স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন। ছেলের ফুটবলকে নিয়ে উন্মাদনাকে প্রশ্রয় দেন। গৌতম বলছিলেন, 'বাহানাগার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে আঅমাদের ট্রেনটি যাচ্ছিল। কী যে বীভৎস দৃশ্য। এখনও পচা গন্ধ। সবাই ছবি তোলার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করে দিয়েছিল। ভীষণ মন খারাপ লাগছিল।' ট্রেন সফর করতে ভয় হয়নি? গৌতম বলছিলেন, 'খারাপ লাগা কাজ করেছিল। এত মানুষের মৃত্যুশোক কাটিয়ে ওঠা সহজ নাকি!'


গৌতম-বিয়াসরা থাকেন বালিগঞ্জে। বিয়াস এবার সাউথ পয়েন্ট স্কুল থেকে দ্বাদশ পাশ করেছেন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাশাপাশি বিজ্ঞানে স্নাতক স্তরে পড়াশোনার জন্যও তৈরি হচ্ছেন। বলছিলেন, 'আন্তর্জাতিক ফুটবল সেভাবে দেখি না। তবে ভারতীয় ফুটবলের ভক্ত। সুনীল ছেত্রীকে দারুণ লাগে। পরীক্ষার ফল বেরনোর পর এখন পড়াশোনার চাপ একটু কমই আছে। তাই ভুবনেশ্বরে ম্যাচ দেখতে চলে এলাম।' যোগ করলেন, 'কলকাতার এত কাছাকাছি এরকম একটা আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল টুর্নামেন্ট হচ্ছে। তাই মাঠে বসে খেলা দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি।'


মঙ্গোলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের বড় জয়ের প্রার্থনায় বালিগঞ্জ থেকে আসা দুই বাঙালি ফুটবলপ্রেমীর। সঙ্গে স্বপ্ন, প্রিয় নায়ক সুনীল ছেত্রী যদি একবার অন্তত বিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে দেন।   


আরও পড়ুন: নিজের জন্মদিনেই কি ইন্টার মায়ামির জার্সিতে অভিষেক হবে মেসির?