কলকাতা: অস্ট্রেলিয়া সফর মানেই ভারতীয় দলের ভরাডুবি, লজ্জার হার। ৯০-র দশকের শেষের দিকে এটাই ছিল স্বাভাবিক দস্তুর। তবে ২০০৩ সালে এই চিন্তাভাবনাটা সম্পূর্ণ বদলে দেয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল।
সফরের প্রথম ম্যাচে ব্রিসবেনের সবুজ ঘাসে মোড়া পিচে সৌরভের অনবদ্য শতরান ভারতকে ম্যাচ ড্র করতে সাহায্য করেছিল। তবে তখনও অজিভূমে জয়টা ছিল অলীক কল্পনার মতোই। সিরিজের আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়া নিজেদের ‘মাইন্ড গেম’ শুরু করে দিয়েছিল। ভারতীয় ব্যাটারদের অস্ট্রেলিয়ার বাউন্স সহায়ক পিচে 'চিন মিউজিক' শুনিয়েই কুপোকাত করার ভয় দেখিয়েছিলেন অজি কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন।
তবে অজিদের কোনও ধরনের মিউজিকই ‘ওয়াল’ ভেদ করতে পারেনি। অ্যাডিলেডে রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) ঐতিহাসিক পারফরম্যান্সে কার্যত অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ জিতে নেয় ভারতীয় দল। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৫৫৬ রানের জবাবে ৮৫ রানে চার উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল টিম ইন্ডিয়া। এমন সময়ে ক্রিজে ফের জুটি বাঁধেন, মাত্র বছর দুই আগেই ইডেনে অজিদের পরাজয়ের দুই কারিগর দ্রাবিড় ও ভিভিএস লক্ষ্মণ (VVS Laxman)।
লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়ের পার্টনারশিপ
লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়ের ৩০৩ রানের জুটিতে ভর করে ম্যাচে ফেরে ভারত। লক্ষ্মণ করেন ১৪৮ আর দ্রাবিড়, ২৩৩ রান। প্রথম ইনিংস শেষে মাত্র ৩৩ রানে পিছিয়ে ছিল টিম ইন্ডিয়া। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে অজিত আগরকরের ছয় উইকেটের স্পেলে অজিরা দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯৬ রানেই গুটিয়ে যায়। জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল ২৩০ রান।
পঞ্চম দিনের পিচে একেবারেই সহজ ছিল না এই লক্ষ্য। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আবারও ব্যর্থ হয় ভারতীয় টপ অর্ডার। কিন্তু ত্রাতা হয়ে ফের ভারতকে বাঁচান দ্রাবিড়ই। অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংসে ভারতকে ম্যাচ জেতান তিনি। উইনিং শটটা মেরে নিজের স্বভাববিরুদ্ধভাবে উচ্ছ্বাসে ভাসেন দ্রাবিড়। এই জয়টা ভারতের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল দ্রাবিড়ের প্রতিক্রিয়াই তা প্রমাণ করে দেয়।
২২ বছরে প্রথম জয়
প্রসঙ্গত, ২২ বছর পরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এটিই ছিল ভারতের প্রথম টেস্ট জয়। বিদেশের মাটিতে খেলার ‘জুজু’ কাটানোর বিষয়ে এই সিরিজের গুরুত্ব কিন্তু অপরিসীম। এই সিরিজের পর তৎকালীন অজি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াও মানতে বাধ্য হয়েছিলেন, এই ভারতীয় দল বাকিদের থেকে ভিন্ন। নরম প্রকৃতির একেবারেই নয়। আর দ্রাবিড়কে কেন ওয়াল নামটি দেওয়া হয়েছিল, তার স্বপক্ষে অ্যাডিলেডে এই ম্যাচে তার পারফরম্যান্সই যথাযোগ্য প্রমাণ দেয়।
আরও পড়ুন: কাইফের ব্যাটে ইতিহাস, স্নায়ুর চাপ কাটাতে সিনেমা দেখতে চলে গিয়েছিলেন উদ্বিগ্ন বাবা-মা