কলকাতা: এশিয়া কাপে (Asia Cup 2022) দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের (India vs Pakistan) হাইভোল্টেজ ম্যাচে জয় ছিনিয়ে নিল ভারতীয় দল। করোনাকে মাত দিয়ে টিম ইন্ডিয়ার সঙ্গে যোগ দিলেন রাহুল দ্রাবিড়। আজকের খেলার দুনিয়ার সব খবরগুলি দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।


করোনাকে হারালেন দ্রাবিড়


কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে দলের সঙ্গে যোগ দিলেন টিম ইন্ডিয়ার প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড়। তিনি ইতিমধ্যেই দুবাই পৌঁছে গিয়েছেন। কয়েকদিন আগে কোভিড আক্রান্ত হন দ্রাবিড়। বেঙ্গালুরুর বাড়িতে আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ভেবেছিল সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে দলের সঙ্গে যোগ দিতে দ্রাবিড়ের কিছুটা সময় লাগবে। তাই অন্তর্বর্তী কোচ হিসেবে ভিভিএস লক্ষ্মণের নাম ঘোষণা করা হয়। সেই মত ভারতীয় দলের সঙ্গেই ছিলেন তিনি। তবে এবার কোভিড নেগেটিভ হয়ে দ্রাবিড় দলে যোগ দিতেই অন্তর্বর্তীকালীন কোচ ভিভিএস লক্ষ্মণ বেঙ্গালুরুতে ফিরে এসেছেন। 


ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সিরিজের আর্জি হরভজনের


ভারত ও পাকিস্তান বর্তমানে দুই দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে আর দ্বিপাক্ষিক সিরিজে একে অপরের মুখোমুখি হয় না। দুই দেশের সাক্ষাৎ বলতে আইসিসি বা এশিয়ার টুর্নামেন্টগুলি। তাই এইসব ম্যাচগুলি ঘিরে দর্শকদের উন্মাদনা থাকে চোখে পড়ার মতো। এত উন্মাদনা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভারত-পাক ম্যাচ না হওয়ায় দর্শকদের হতাশাপ বিষয়টা কিন্তু বারংবার সামনে উঠে এসেছে। অতীতে নিরপেক্ষ মাঠে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলারও প্রস্তাব শোনা গিয়েছে অনেকের গলায়। এবার ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সিরিজ সিরিজ আয়োজনের পক্ষে ব্যাট ধরলেন হরভজন সিংহ (Harbhajan Singh)।


ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নিয়ে একেবারে অকপটে নিজের মতামত জানিয়ে দেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার। তাঁর মতে দুই দেশে না হলেও, নিরপেক্ষ মাঠে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আয়োজিত হতেই পারে। 'নিঃসন্দেহে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলা উচিত। ক্রিকেট খেলা হলে দুই দেশের সম্পর্কও ভাল হবে। আমি বুঝতে পারছি যে রাজনৈতিক পার্থক্যের জেরে বর্তমানে দুই দল একে অপরের দেশে খেলতে যাচ্ছে না। তবে দুবাই বা অন্য়ান্য নিরপেক্ষ মাঠে তো ম্যাচ আয়োজন করাই যায়। যদি তা সম্ভব হয়, তাহলে ক্রিকেটের জন্য ভাল তো হবেই, দুই দেশের জনগণের কাছেও একটা সুন্দর বার্তা পৌঁছবে।' মতামত হরভজনের।


ইতিহাস ভুবনেশ্বরের


বুমরার অনুপস্থিতিতে ভারতীয় বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল ভুবনেশ্বরেরই। একেবারে দারুণভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করলেন ভুবি। বল হাতে নিজের প্রথম ওভারেই মহম্মদ রিজওয়ানের প্যাডে বল মারেন ভুবি। আম্পায়ার আউট দিলেও, রিভিউয়ের দৌলতে বেঁচে যান রিজওয়ান। তবে ভুবির দ্বিতীয় ওভারে বাঁচেননি বাবর আজম। ডান কাঁধের দিকে একবারে সঠিক বাউন্সারে পুল মারতে গিয়েই ১০ রানে ফিরতে হল বাবারকে। এই বাবর-রিজওয়ান জুটিই গতবার ভারতকে পর্যুদস্ত করেছিল। তাই তাঁদের ওপেনিং পার্টনারশিপ ভাঙা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা আলাদা করে বলে দিতে হয় না।


ভুবনেশ্বর নতুন বলে দারুণ বল করার পর, ইনিংসের শেষের দিকেও ভাল বল করেন। দ্বিতীয় স্পেলে শুরুতেই বড় শট মারতে পটু আসিফ আলিকে প্রথমে ফেরান ভুবি। ১৯তম ওভারে পরপর দুই বলে শাদাব খান ও নাসিম শাহও ভুবির শিকার হন। নিজের চার ওভারে ২৬ রানের বিনিময়ে চার উইকেট নিয়ে স্পেল শেষ করেন ভুবনেশ্বর কুমার। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টিতে কোনও ভারতীয় বোলারের এটাই সেরা বোলিং পরিসংখ্যান।


ফখরের স্পোর্টসম্যান স্পিরিট


মাঠে স্পোর্টসম্যান স্পিরিটের এর আগেও অনেক উদাহরণ দেখা গিয়েছে। এবার আরও একবার। এশিয়া কাপে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে তেমনই নিদর্শন রাখলেন পাকিস্তানের ব্যাটার ফখর জামান। প্রতিপক্ষ ভারত। এশিয়া কাপের মত গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের মঞ্চ। সেখানেই সততার প্রতীক হয়ে উঠলেন এই ব্য়াটার।


এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ৬ বলে ১০ রান করে খেলছিলেন ফখর জামান। পাওয়ার প্লে-র শেষ ওভারের খেলা চলছিল। আবেশ খানের বলে সেই সময় বাউন্সার সামলাতে না পেরে ব্যাট ছুঁইয়ে দেন ফখর। বল কার্তিকের তালুবন্দি হতেই ভারতীয় প্লেয়াররা সবাই মিলে আউটের জন্য আবেদন করতে থাকেন। সেই সময় আম্পায়ার আঙুল তোলার আগেই প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটা দেন ফখর। যা দেখার পরই ২ দেশের ক্রিকেট সমর্থক থেকে শুরু করে সোশাল মিডিয়া জুড়ে সবাই ফখরের  স্পোর্টসম্যানশিপের প্রশংসা করতে থাকেন।


মধুর প্রতিশোধ ভারতের 


পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে ভারতীয় বোলাররা দুরন্তভাবে শুরু করলেও, ফের একবার শুরুতেই গত বছরের ম্যাচের দুঃস্বপ্ন উঁকি দিচ্ছিল। প্রথম ওভারেই শূন্য রানে বোল্ড হন কেএল রাহুল। নাসিম শাহের বলে একই ওভারে বিরাট কোহলিও ক্যাচ তোলেন। তবে স্লিপে তা ধরতে পারেননি ফখর। মহম্মদ নওয়াজকে ছক্কা মারতে গিয়ে ১৮ বলে ১২ রানেই ফেরেন রোহিত। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রোহিতকে অনুসরণ করে ৩৫ রানে সাজঘরে ফেরেন বিরাটও। সূর্যকমার যাদব ১৮ রানে আউট হলে ভারতের স্কোর ৮৯/৪ হয়ে যাওয়ায় চাপ আরও বাড়ে। তবে হার্দিক পাণ্ড্য (Hardik Pandya) ও ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া রবীন্দ্র জাডেজা কিন্তু হাল ছাড়ার পক্ষে একেবারেই ছিলেন না। দুই অলরাউন্ডার মিলেই ভারতকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান।


পঞ্চম উইকেটে ৫২ রানের পার্টনারশিপ গড়েন হার্দিক ও জাডেজা। হার্দিক নিজের ইনিংসের শুরুতেই নিজের মনোভাব স্পষ্ট করে দেন। আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করেন তিনি। ১৯তম ওভারে হার্দিকের দৌলতেই উঠা ১৪ রান ম্যাচের মোর ঘুরিয়ে দেয়। তবে দুইজনে ম্যাচ শেষ করতে অবশ্য় পারেননি। শেষ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ৩৫ রানেই ফিরতে হয় জাডেজাকে। কিন্তু পাণ্ড্য ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন। ছক্কা মেরে পাঁচ উইকেটে ভারতকে জেতান তিনি। ফলে জয় দিয়েই এশিয়া কাপ শুরু করল ভারত। 


আরও পড়ুন: সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন বীরু, তবুও আক্রমণাত্মক ব্য়াটিংয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়েছিলেন রায়না