Live updates: কাশ্মীরে ফের খুলল স্কুল, হাজির শিক্ষকরা, পড়ুয়া সংখ্যা কম, দিল্লিতে অমিত-ডোভাল বৈঠক, কাশ্মীরে বন্দি নেতানেত্রীদের মুক্তি চেয়ে বৃহস্পতিবার যন্তরমন্তরে ধরনা ডিএমকে-র
১৯০টি প্রাইমারি স্কুল খোলার জন্য প্রশাসন প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করেছে। অনেক স্কুলেই হাজির হন শিক্ষকরাও। কিন্তু বেশি সংখ্যক পড়ুয়ার দেখা মেলেনি। সরকারি স্কুল খুললেও শ্রীনগরে সব বেসরকারি স্কুল আজও বন্ধ রয়েছে, আজ নিয়ে একটানা ১৫ দিন।
৫ আগস্ট থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে অন্তরীণ রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের অবিলম্বে মুক্তি চেয়ে বৃহস্পতিবার যন্তর মন্তরে প্রতিবাদ ধরনায় বসছে ডিএমকে। সেখানে সমমনোভাবাপন্ন দলগুলিকে হাজির থাকার আবেদন করেছেন ডিএমকে সভাপতি এম কে স্ট্যালিন। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মেয়ে ইলতিজা মুফতির স্বাধীনতা দিবসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে লেখা চিঠির প্রেক্ষিতে স্ট্যালিন জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের নিন্দা করে বলেছেন, সেখানে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের পরিবারের সদস্যদের আটক করে রাখা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। ইলতিজা চিঠিতে তাঁকে শ্রীনগরের বাসভবনে আটকে রাখা নিয়ে অমিত শাহের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেছেন।
জম্মু ও কাশ্মীরে মেহবুবা মুফতি, ওমর আবদুল্লা, ফারুক আবদুল্লা, সাজ্জাদ লোন, রাজ্যের সাত প্রাক্তন মন্ত্রী, আইএএস টপার শাহ ফয়সল, শ্রীনগরের মেয়র, ডেপুটি মেয়র সহ অনেককে আটক করা হয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারাও বাদ যাননি। নাগরিক সমাজ, জম্মু ও কাশ্মীর বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরাও আটক হয়েছেন। রাজ্যে একাধিক বিধিনিষেধ, ল্যান্ডলাইন, মোবাইল কানেকশন, মোবাইল ইন্টারনেটও বন্ধ রাখা হয় বেশ কিছুদিন। এর নিন্দা করে ডিএমকে বলেছে, কেন্দ্রই কার্ফু চাপিয়ে, দমনপীড়নমূলক ব্যবস্থা নিয়ে, আগাম নিষেধাজ্ঞা জারি করে জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। যোগাযোগ রাখার মাধ্যমগুলি ছিন্ন করে সরকার অযথা একটা শত্রুতার আবহাওয়া তৈরি করেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতাদের আটক রাখার বিরোধিতা করে সংসদেও সরব হয়েছিলেন ডিএমকে সাংসদ দয়ানিধি মারান। সংসদে ফারুক আবদুল্লার অনুপস্থিতির উল্লেখ করেও সরকারকে আক্রমণ করেছিলেন তিনি। ডিএমকে সভাপতি দলীয় নেতাদের নিয়েও বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের ব্যাপারে আলোচনায় বসেছিলেন। বলেছিলেন, এটা গণতন্ত্রের হত্যা! জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে কথা না বলেই ৩৭০ ধারা বিলোপ করা হল।
১১ দিন কাশ্মীরে কাটানোর পর নয়াদিল্লি ফিরে ৫ আগস্ট পরবর্তী জম্মু ও কাশ্মীরের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অবহিত করলেন অজিত ডোভাল। ৫ আগস্টই জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে ওই রাজ্যকে দুটুকরো করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। কাশ্মীরে থাকাকালে সেখানকার একাধিক জায়গায় সফর করে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলেন, পরিস্থিতির ওপর সরাসরি নজর রাখেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। নয়াদিল্লি ফেরার পর এটাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাত্।
বৈঠকে জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলি খতিয়ে দেখা হয় বলে সূত্রের খবর। সেখানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গাওবা, অন্য শীর্ষ অফিসাররাও হাজির ছিলেন। সরকারি অফিসাররা জানিয়েছেন, বৈঠকে জম্মু ও কাশ্মীরের নানা জায়গায় জারি করা বিধিনিষেধের ব্যাপারেও কথা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার, রাজ্য বিভাজনের সিদ্ধান্তে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অশান্তির ছড়ানোর চেষ্টা রুখতেই যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নাগরিকদের গতিবিধির ওপর নানা বিধিনিষেধ জারি করা হয়। যদিও লাগাতার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ধাপে ধাপে প্রথমে জম্মু ও পরে কাশ্মীরের একাধিক এলাকায় বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হয়। অবশ্য বেশ কিছু জায়গায় তা বহাল রয়েছে। ঘটনাচক্রে আজই কাশ্মীরে বহু সরকারি স্কুল খুলেছে। সরকারি দপ্তরেও কাজকর্ম চালু হয়েছে।
প্রেক্ষাপট
শ্রীনগর: কাশ্মীরে পূর্বঘোষণা মতোই সোমবার খুলে গেল বেশিরভাগ সরকারি স্কুল। আরও বেশ কিছু বিধিনিষেধ আজ শিথিল হয়েছে। নিরাপত্তাবাহিনী পাহারায় মোতায়েন রয়েছে কাশ্মীর উপত্যকার বেশিরভাগ জায়গায়। ১৯০টি প্রাইমারি স্কুল খোলার জন্য প্রশাসন প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করেছে। অনেক স্কুলেই হাজির হন শিক্ষকরাও। কিন্তু বেশি সংখ্যক পড়ুয়ার দেখা মেলেনি। সরকারি স্কুল খুললেও শ্রীনগরে সব বেসরকারি স্কুল আজও বন্ধ রয়েছে, আজ নিয়ে একটানা ১৫ দিন। কেননা গত ২ দিনে কোথাও কোথাও বিক্ষোভ, অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে অভিভাবকরা এখনও বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছেন না। আশঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না তাঁরা। তাই বাচ্চাদের ভরসা করে স্কুলে পাঠাননি। শুধুমাত্র বেমিনার পুলিশ পাবলিক স্কুল ও কয়েকটি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে কিছু ছাত্রছাত্রী এসেছে। ফারুক আহমেদ দার নামে জনৈক অভিভাবক বলেছেন, এখনও এতটাই অনিশ্চয়তা বহাল রয়েছে যে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানোর প্রশ্নই ওঠে না। বারামুল্লা জেলার সরকারি কর্তারা জানিয়েছেন, পাঁচটি টাউনে স্কুল বন্ধই রয়েছে, জেলার বাকি জায়গায় অবশ্য স্কুল খুলেছে।
এক সরকারি অফিসার সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, পাট্টান, পালহালান, সিংপোরা, বারামুল্লা ও সোপোর টাউনে বিধিনিষেধে কোনও ছাড় দেওয়া হয়নি। জেলার বাকি অংশ অবশ্য প্রাথমিক স্কুলগুলি খোলা রয়েছে। কতজন পড়ুয়া নিজের নিজের স্কুলে গিয়েছে, সে ব্যাপারে খবর নেওয়া হচ্ছে। শ্রীনগরের জনৈক সিনিয়র অফিসার জানান, উপকন্ঠে কয়েকটি স্কুল খুলেছে, কিন্তু ওল্ড সিটি ও সিভিল লাইন্স এলাকায় গত ২দিনের হিংসা, অশান্তির জেরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা বন্ধই আছে।
প্রাইমারি স্তর পর্যন্ত সব স্কুল সোমবার ফের খোলা ও সরকারি দপ্তরগুলি পুরোপুরি সচল করে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিল প্রশাসন।
শ্রীনগরের যেসব এলাকা গত ৫ আগস্ট কেন্দ্রের জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও রাজ্যকে দুটি কেন্দ্রশাসিত এলাকায় ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকে শান্তই রয়েছে, সেখানে ব্যারিকেড তুলে নেওয়া হয়েছে। উপত্যকায় বাজার বন্ধ রয়েছে, সরকারি যানবাহনও চলছে না। তবে বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল বেড়েছে।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -