প্রসূন চক্রবর্তী, বাঁকুড়া : শিক্ষকদের স্কুলে আসতে ভরসা ডিঙি, প্রায় দিন স্কুলে অনুপস্থিত শিক্ষক শিক্ষিকা, বিপাকে পঠন পাঠনও।কথায় আছে নদীর ধারে বাস, চিন্তা বারোমাস। কিন্তু সে তো গেল নদীর ধারে বসবাসকারীদের কথা। কিন্তু যদি বাস হয় নদীর একেবারে মাঝখানে তাহলে চিন্তা যে আরও বেশি হবে তা বলাই বাহুল্য। আর তেমনটাই হয়েছে বাঁকুড়ার (Bankura) মেজিয়া ব্লকের মানাচরের ক্ষুদে পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে।
বাঁকুড়ার মেজিয়া ব্লকের মানাচরের অবস্থান একেবারে দামোদরের গর্ভে। দামোদরের (Damodar) বুকে জেগে ওঠা এই চরে একসময় বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সংখ্যা কমতে কমতে এখন কুড়ি পঁচিশটি পরিবারে ঠেকেছে। স্বাভাবিক ভাবে মানাচর প্রাথমিক বিদ্যালয়েও কমেছে পড়ুয়ার সংখ্যা। কিন্তু পরিকাঠামোর কোনও বদল হয়নি। পাকা স্কুল ভবন আছে, আছে চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ, যথেষ্ট সংখ্যক ক্লাসরুম, মিড ডে মিলের ব্যবস্থা, স্কুলে সৌর শক্তির বিদ্যুৎ পরিবহণ, এমনকি তিন জন শিক্ষক শিক্ষিকাও। কিন্তু পড়ুয়ার সংখ্যা শুনলে বেশ কিছুটা অবাক হতে হয় বইকি। সবমিলিয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা মাত্র ১৬ জন। মাঝেমধ্যে দু-চারজন পড়ুয়া স্কুলে আসে। বাকি দিনগুলো মোটামুটি ক্লাসরুম থাকে শূন্যই। কিন্তু এই স্কুলেই একসময় পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল পঞ্চাশের উপরে। কিন্তু কেন এমন হাল।
অভিভাবকদের দাবি, শিক্ষক শিক্ষিকারা স্কুলে আসার ক্ষেত্রে কোনও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেন না। ইচ্ছেমতো সময়ে স্কুলে আসেন আবার ইচ্ছেমতো স্কুল বন্ধ করে বাড়ি ফিরে যান। প্রায় দিনই স্কুলে আসেন না প্রধান শিক্ষক। একজন শিক্ষিকা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। ফলে স্কুলের পড়াশোনা লাটে ওঠার জোগাড়। অগত্যা অনেকেই এই স্কুল ছাড়িয়ে শিশুদের ভর্তি করেছেন নদীর পাড়ে থাকা অন্ডালের বেসরকারী স্কুলে। স্কুলের শিক্ষিকা স্কুলে নির্ধারিত সময়ে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে যোগাযোগের অভাবকেই দায়ি করছেন। তাঁর দাবি, বাঁকুড়া জেলার দিক থেকেই হোক বা পশ্চিম বর্ধমান জেলার দিক থেকে, যেদিক দিক দিয়েই স্কুলে যাওয়া হোক না কেন স্থলপথে মানাচরের সাথে বহির্বিশ্বের কোনও যোগাযোগ নেই। দামোদরের ওই অংশে ফেরি সার্ভিসও নেই। অগত্যা স্কুলে যাতায়াতে নির্ভর করতে হয় মানাচরের মানুষদের ব্যাক্তিগত ডিঙির উপর।কৃষিকাজ মূলত এখানকার প্রধান জীবিকা।
আরও পড়ুন, স্ট্রংরুমে ব্যালটে 'কারচুপি', সোজা মেখলিগঞ্জে পৌঁছে গেলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়
মানাচরের মানুষ উৎপাদিত সবজী অন্ডাল বাজারে বিক্রি করে গ্রামে ফিরলে তাঁদের ডিঙি চড়েই মানাচরে পৌঁছোন শিক্ষক শিক্ষিকারা। ফেরার সময়ও গ্রামবাসীদের অনুরোধ করে তাদের ডিঙিতে চড়েই ফিরতে হয়। যোগাযোগের এই অভাবের কারনেই মাঝেমধ্যে স্কুলে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছানো যায় না বলে দাবি শিক্ষিকার। শিক্ষিকা যাই যুক্তি দিন না কেন, স্কুলটির এই হালের জন্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের সদিচ্ছার অভাবকেই দায়ি করেছে বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। আগামীদিনে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপেরও আশ্বাস দিয়েছে সংসদ।