অমিতাভ রথ, গোপীবল্লভপুর: কেন্দুয়াবুড়ি এখানে মা দূর্গারূপে পূজিতা হন। ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের খাড়বান্ধি অঞ্চলের বালিপাল গ্রামে প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন কেন্দুয়া বুড়ির থান রয়েছে। 


আজও বহু মানুষ কেন্দুয়া বুড়ি মায়ের পুজো দিতে প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার ও শনিবার বালিপাল গ্রামে আসেন। কিন্তু দুর্গাপুজোর সময় চারদিন ধরে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। 


অন্যান্য দেবদেবীর মন্দিরে ব্রাহ্মণ পুরোহিত হিসাবে থাকলেও এই কেন্দুয়া বুড়ির থানে পুরোহিত হিসেবে পুজো করেন বাগদী সম্প্রদায়ের মানুষ। যাঁদের দেহুরি বলা হয়।


জনশ্রুতি যে, ওড়িশার রাজা বালিপাল যুদ্ধে পরাজিত হয়ে গভীর জঙ্গলে  এসে একটি গাছের নিচে বসে ছিলেন। তাঁকে পরিশ্রান্ত অবস্থায় দেখে কন্যারূপে দেবী মা কেন্দুয়া বুড়ি দেখা দেন। রাজাকে মা একটি কেন্দ ফল খেতে দেন।


এরপর কেন্দুয়াবুড়ি  রাজা বালিপালের স্বপ্নে দেখা দেন।  দেবী রাজাকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন, আমি কেন্দুয়া বুড়ি আমি গাছের নিচে রয়েছি। এখানেই আমাকে তুই পুজো করবি। ওই গাছের নিচে পাথরের খোদায় একটি মূর্তি আছে যা অদৃশ্য। 


এরপর রাজা বালিপাল ওই জঙ্গলের মাঝে নিমগাছের নিচে মা- কেন্দুয়া বুড়ির পুজো শুরু করেন। হাতি, ঘোড়া, ঠাকুর যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে বিশাল একটি নিমগাছ। 


সেই নিম গাছের তলায় কেন্দুয়া বুড়িকে পুজো করা হয়। যুগ যুগ ধরে প্রায় ৫০০ বছর ধরে চলছে এভাবেই পুজো। তবে কোনও মন্দির নেই, কিন্তু চার পাশ ইটের দেওয়াল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, মা জঙ্গলে থাকতে ভালোবাসেন, বিলাসবহুল থাকতে ভালোবাসেন না। 


প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার প্রচুর মানুষ পুজো দিতে আসেন এবং দুর্গাপুজোর সময় চারদিন ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। অনেকেই মানত করা তাঁদের পাঠা, ছাগল  বলি দেন।


আগে যাত্রা হতো, ওই গ্রামে ভাল যাত্রা শিল্পী ছিলেন। কিন্তু এখন আর যাত্রা হয় না। কিন্তু  নিয়ম মেনে দুর্গা পুজোর সময় চারদিন ধরে মায়ের পূজার্চনা হয়। 


কেন্দুয়া বুড়ি মায়ের থানের একটু পাশে দুর্গা মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে স্থায়ী মণ্ডপে দুর্গাপুজো হয়। প্রতিবছর দুর্গা পুজোর আয়োজন করা হয়। তবে মণ্ডপে দুর্গা পুজোর আগে কেন্দুয়া মায়ের পুজো করা হয়। 


তবে মূল আকর্ষণ কেন্দুয়া বুড়ির থান। যাকে কেন্দ্র করে ওই গ্রামে দুর্গা পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। রাজার নামে ওই এলাকার নাম হয়েছে বালিপাল গ্রাম। 


বালিপাল  এলাকাটি একসময় রাজার গড়  ছিল। তবে রাজা বসবাস করেন ঝাড়গ্রামে।  তাই এখনও বালিপাল গ্রামের কেন্দুয়া বুড়ির থানকে কেন্দ্র করে বহু লোককথা শোনা যায় বহু মানুষের মুখে। তাই নবমীর দিন লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয় বালিপাল গ্রামে কেন্দুয়া বুড়ির থান প্রাঙ্গণে। 


কেন্দুয়া বুড়ির থানার পুরোহিত স্বপন দেহুরি বলেন,  আমার পূর্বপুরুষ এই পুজো করে আসছেন। আমিও দশ বছর ধরে পুজো করছি। এখানে বিভিন্ন ফল ও আতপ চাল দিয়ে মায়ের পুজো করা হয়। এখানে খিচুড়ি প্রসাদ বা রান্না করা কোনও প্রসাদ দিয়ে পুজো করা হয় না। 


কেন্দুয়া বুড়ির থানের পুরোহিত স্বপন দেহুরি আরও বলেন, মা খুব জাগ্রত তাই দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষ মাকে পুজো দিতে আসেন। নিয়ম মেনেই হাতের আঙ্গুলের রক্ত দিয়ে কেন্দুয়া মাকে সন্তুষ্ট করতে হয় দেহুরিদের,যা এখনও রয়েছে বলে জানান তিনি।


আরও পড়ুন: গোলাতে জমে জল, শুকোচ্ছে না মাটি, অতিবৃষ্টির জেরে মাথায় হাত ডোমজুড়ের পটুয়াদের


আরও পড়ুন: "দুর্গাপুজোর বেশ কিছুদিন পরে ভারতমাতার পুজো হত গ্রামে", ছেলেবেলার পুজোর স্মৃতিতে রতনতনু ঘাটী