Fake PassPort Racket: কলকাতায় বিরাট পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্রের পর্দাফাঁস, গ্রেফতার পোস্ট অফিসের একাধিক স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মী; চাঞ্চল্যকর তথ্য
Bangladesh Unrest: আদালতে দাঁড়িয়ে সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের ৭৩ জন নাগরিকের হাতে ভারতের পাসপোর্ট পৌঁছে গেছে।
আবির দত্ত ও ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী : কলকাতায় ধরা পড়ল বিরাট পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্র। লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশিদের বিক্রি করা হয়েছিল ভারতীয় পাসপোর্ট।
বাংলাদেশি মৌলবাদীদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে, এপারে পালিয়ে আসতে চাইছেন বহু হিন্দু শরণার্থী। কেউ কেউ মরিয়া হয়ে এপারে চলে আসছেন। আর ফিরতে চাইছেন না। আবার বাংলাদেশে জেল ভেঙে পালানো বন্দিরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়েছে কিংবা ঢোকার চেষ্টা করছে কি না, সেই উদ্বেগ-আশঙ্কাও রয়েছে। আর এই আবহে কলকাতা থেকে জেলায় রমরমিয়ে শুরু হয়েছে পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্র। ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকা খরচ করলেই, হাতে পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয় পাসপোর্ট। আর এই জালিয়াতি চক্রে অন্যতম ভূমিকা নিচ্ছেন পোস্ট অফিসের স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মীরা। সম্প্রতি পরপর চার জনের গ্রেফতারির পর পর্দাফাঁস হয়েছে এই চক্রের। আদালতে দাঁড়িয়ে সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের ৭৩ জন নাগরিকের হাতে ভারতের পাসপোর্ট পৌঁছে গেছে। পুলিশ সূত্রে দাবি, এই সংখ্যাটা বেড়ে ২৫০-ও হতে পারে।
৫ অগাস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি হয়। ঘটনাচক্রে এই পাসপোর্ট জালিয়াতিও প্রথম নজরে আসে অগাস্ট মাসে। তখন RPO বা রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিস থেকে ভবানীপুর থানায় অভিযোগ জানানো হয়। বেশ কিছু পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, তার জন্য দেওয়া নথি ভুয়ো। ভবানীপুর থানা এই অভিযোগ ফরওয়ার্ড করে কলকাতা পুলিশের সিকিওরিটি কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনকে। তদন্তকারীদের 'চোখ কপালে তোলে' এই জালিয়াতিতে পোস্ট অফিসের স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মীদের ভূমিকা।
তদন্তকারীদের দাবি, প্রথম যার পাসপোর্ট বানানো হবে তার ভুয়ো পরিচয়পত্র এবং ভুয়ো শিক্ষাগত সার্টিফিকেট তৈরি করা হতো। তার ভিত্তিতে যথাযথভাবে পাসপোর্টের আবেদন করা হতো। সেই তথ্য ভেরিফিকেশনের পর তৈরি হতো পাসপোর্ট। অর্থাৎ, সব নথি ভুয়ো। তার ভিত্তিতে তৈরি হল আসল ভারতীয় পাসপোর্ট। তারপর সেই পাসপোর্ট ডেলিভারির জন্য পৌঁছাত সংশ্লিষ্ট পোস্ট অফিসে। পুলিশ সূত্রে খবর, পোস্ট অফিসে শুরু হতো জালিয়াতির ফাইনাল এপিসোড। কারসাজি করে খামের গায়ে সাঁটা হতো ভুয়ো ঠিকানা। যার কোনও অস্তিত্ব নেই। ফলে, শেষ অবধি ঠিকানায় ডেলিভারি না হয়ে সেই খাম ফিরে আসত পোস্ট অফিসে। পোস্ট অফিসের যে কর্মীরা জালিয়াতি চক্রের অংশ, তারা এই খাম নিয়ে নিত। তারপর ২-৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তা পৌঁছে দিতে নির্দিষ্ট লোকের হাতে।
কলকাতা পুলিশ একটি ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রের সন্ধান পেয়েছে। প্রায় ৭৩ টি পাসপোর্ট জাল নথি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল। মামলার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত একজন ডাকপিয়নসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রেফ: ভবানীপুর পিএস/এসসিও মামলা নং ১৭৯/২০২৪।
— Kolkata Police (@KolkataPolice) December 16, 2024
পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে পুলিশ যে চার জনকে গ্রেফতার করেছে, তারমধ্যে রয়েছে- বসিরহাট পোস্ট অফিসের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর তারকনাথ সেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ঢাকুরিয়া পোস্ট অফিসের অস্থায়ী কর্মী দীপক মণ্ডল, বারাসাতের বাসিন্দা সমরেশ বিশ্বাস ও তার ছেলে রিপন বিশ্বাস। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত দীপকই ভুয়ো তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি পাসপোর্টগুলি পোস্ট অফিস থেকে সংগ্রহ করত। তারপর ক্যুরিয়র করে সেগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় চালান করে দিত।
পুলিশ সূত্রে দাবি, পাসপোর্ট জালিয়াতির তদন্তে ভুয়ো ঠিকানাগুলো খতিয়ে দেখতে গিয়ে চোখ কপালে ওঠে তদন্তকারীদের। ঠিকানা আলাদা হলেও, পিনকোড আশ্চর্যজনকভাবে এক ছিল। অর্থাৎ, ঠিকানা চিৎপুরেই হোক বা বিডন স্ট্রিটে, পিন কোড ছিল একই। আর সেটা পঞ্চসায়র এলাকা। সেই সূত্রেই পঞ্চসায়র এলাকায় গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, ধৃত দীপক মণ্ডল আগে এখানে কাজ করতেন। তারপরই সামনে আসতে শুরু করে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।