Kali Puja 2021: মেষ-ছাগ বলিতে পুজো নিবেদন, বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠের ডাকাত ভবানী পাঠকের কালীপুজো সাক্ষী ইতিহাসের
ডাকাত ভবানী পাঠকের কালীপুজো এখন হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতির উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রথা মেনে এখনও সাড়ে তিনশো বছরের গোবরজন্না কালীপুজো হয়ে ওঠে সম্প্রীতির উৎসব।
করুণাময় সিংহ, মালদা: কথিত আছে আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দমঠ-এর চরিত্র ডাকাত সম্রাট ভবানী পাঠক প্রথম এই পুজো শুরু করে। তিনি কালিন্দী নদী দিয়ে পূর্ববঙ্গের ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন, তার আগে এই পুজো করেন বলে জানা যায়।
তবে ডাকাত ভবানী পাঠকের কালীপুজো এখন হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতির উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রথা মেনে এখনও সাড়ে তিনশো বছরের গোবরজন্না কালীপুজো হয়ে ওঠে সম্প্রীতির উৎসব। এই পুজোর ইতিহাস জানায় এটি ডাকাতদের পুজো বলেই খ্যাত ছিল আগে। দিনের পরিবর্তনের তা হয়ে দাঁড়িয়েছে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের পুজো। পুরনো প্রথা মেনে এবারও হতে চলেছে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি ইতিহাস বিজড়িত মালদার গোবরজন্নার কালীপুজো। এই পুজোতে এখনো মেষ ও ছাগ বলি দিয়ে কার্তিক মাসের অমাবস্যায় পৃর্ণতিথিতে এই পুজো হয়ে থাকে। হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বহু মানুষ এই পুজোতে অংশগ্রহণ করেন।
কথিত আছে আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে ভবানী পাঠক কালিন্দী নদী দিয়ে পূর্ববঙ্গের ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। পথে বর্তমানে মালদার পুখুরিয়া থানার আড়াই ডাঙ্গা এলাকার নদীর ধারে তাঁর বজরা থামান। সেই সময় সেখানে আম বাগানের মধ্যে শিবির বানিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেই সময় তিনি স্বপ্নাদেশ পান মা কালীর। স্বপ্নে মা কালী এসে তাকে এই আমবাগানে থান তৈরি করে কালী পূজা করার নির্দেশ দেন। এরপরই কালিন্দী নদীর মাটি ও গোবর দিয়ে মূর্তি তৈরি করেন এবং পুজো শুরু করেন।
দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতরা এই পুজো করত বলে শোনা যায়। এমনকি মুসলিম ও ব্রিটিশ আমলেও একই প্রথায় পূজো হত। পরবর্তী সময়ে এই জনপদে জনবসতি বিস্তার হয়। এরপর থেকে গ্রামবাসীরা দীর্ঘ সময় ধরে এই পুজো করে আসছে। ভোগ হিসাবে বাতাসা অন্ন ভোগ দেওয়া হয়।
এই পূজার উদ্যোক্তা শান্তি চৌধুরী জানান, আমরা ন' পুরুষ ধরে এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত। চিরাচরিত প্রথা মেনে কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে এই পুজো হয়ে থাকে। এছাড়াও সারা বছর ধরে মন্দিরে পুজো হয়। এখনো জেলার বহু মানুষ মায়ের কাছে মানত করে। এখানে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ মায়ের কাছে প্রার্থনা করে। প্রথমে প্রচুর পরিমাণে ছাগ বলি হয়। মেষও বলি দেওয়া হয়। এখানে মেলা বসে। তবে এ বছর করোনা আবহে সরকারি নির্দেশ যা আসবে তা মেনে পুজার্চনা করা হবে।