কলকাতা: নির্বাচন  চলাকালীনই অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (OBC) সার্টিফিকেট নিয়ে জোর ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য। কলকাতা হাইকোর্ট তৃণমূল জমানায় দেওয়া সমস্ত OBC সার্টিফিকেট বাতিল করে দিয়েছে। সেই নিয়ে ফের আদালতের ভূমিকা নিয়ে সরব হলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে সব হয়েছে, রাজ্য বিধানসভায় অনুমোদন পাস হয়েছে, এই রায় বিজেপি-র রায় বলে দাবি করলেন মমতা। (Mamata Banerjee)


বুধবার খড়দায় সভা করেন মমতা। সেখান থেকেই কলকাতা হাইকোর্টের রায় নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। মমতা বলেন, "এটা লোকসভা নির্বাচন, বিধানসভা নির্বাচন নয়। অথচ বিজেপি বলছে, এখানে হারিয়ে রাজ্যের দখল নেবে। আমি বলছি, পারবে না। আমরা দিল্লির দখল নেব। আজ একজন বিচারপতি...অনেক ব্যাপারে বিখ্যাত। কাজ নেই, কর্ম নেই, ক'দিন ধরে প্রধানমন্ত্রী বলে বেড়াচ্ছেন সংখ্যালঘুরা তফসিলিদের সংরক্ষণ কেড়ে নেবে বলে। এটা কখনও হতে পারে? তাহলে তো সংবিধান ভেঙে দিতে হয়! মোদি কি দেশ, সংবিধান বিক্রি করে দিতে চাইছেন?" (Calcutta High Court)


মমতা এদিন আরও বলেন, "সংখ্যালঘুরা কখনও তফসিলি, আদিবাসীদের সংরক্ষিত আসনে হাত দিতে পারে না। কিছু বদমায়েশ লোক, এজেন্সিকে দিয়ে কাজ করায়। একজনকে দিয়ে অর্ডার করিয়েছে। কিন্তু তাঁর রায় আমি মানি না। যেমন ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাতিলের রায় আমি মানি না বলেছিলাম, আবারও বলছি, যেই রায় দিয়ে থাকুন, এটা বিজেপি-র রায়। আমরা মানব না। OBC সংরক্ষণ চলছে চলবে। কত বড় সাহস! কোর্টে, দেশে কখনও ভাগাভাগি হয় না। এটা একটা কলঙ্কিত অধ্যায়।"


আরও পড়ুন: OBC Certificate: ২০১০ সালের পরে তৈরি হওয়া প্রায় ৫ লক্ষ OBC সার্টিফিকেট বাতিল, নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের


অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদের সংরক্ষণের সুবিধা দিতে রাজ্যের সরকার যে শংসাপত্র বিলি করে, আজ সেই OBC শংসাপত্র বাতিলের নির্দেশ দেয় বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এবং তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চ। আদালত জানিয়েছে, ২০১০-এর পরে OBC সংরক্ষণের কারণে চাকরিপ্রাপকদের চাকরি যদিও বহাল থাকবে, কিন্তু এবার থেকে আর চাকরি পেতে সেই শংসাপত্র ব্যবহার করা যাবে না।


এদিন মমতা জানান, উপেন বিশ্বাস যখন চেয়ারম্যান ছিলেন, সেই সম এই সার্টিফিকেট দগেওয়া হয়। বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা করে সংরক্ষণের আওতায় আনা হয় মানুষজনকে। ১২ বছর ধরে সেই রীতি চলছে। আগে মামলা হলেও, সেটি খারিজ হয়ে গিয়েছিল আদালতে। তাঁর নির্বাচিত সরকার যেখানে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই নীতি খারিজের স্পর্ধা কোথা থেকে আসে প্রশ্ন তোলেন মমতা। বিজেপি শাসিত রাজ্যের নীতি-নিয়ম নিয়ে কথা বলার হিম্মত কি আছে, এই প্রশ্নও তোলেন মমতা।  


মমতা আরও বলেন, "কিছু দালাল  হঠাৎ করে...২৬ হাজার টাকরি খেয়ে নাও, OBC সংরক্ষণ বন্ধ করে দাও, তাও আবার ভাগ করে দিয়েছে। মুসলিমদেরটা একেবারে ভাগ করে দিয়েছে। কেন মুসলিমরা আমাদের দেশের নাগরিক নন? আমি হিন্দু ঘরের মেয়ে, মুসলিম, আদিবাসী, তফসিলি, বৌদ্ধ, জৈন সবে আছি। এটা বিধানসভায় পাস হয়েছে। আদালয়ের রায়ও আছে। নির্বাচনের সময় যাঁরা এসব নিয়ে খেলছেন...আগে সন্দেশখালি নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছেন, তার পর দাঙ্গা নিয়ে করেছেন। সব ফাঁস হয়েছে। সংখ্যালঘুরা সংরক্ষণ কেড়ে নেবেন, একথা বলতে পারেন না প্রধানমন্ত্রী। এটা সাংবিধানিতক অধিকার। সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে এই খেলা খেলছে। একদিনের ভোটের জন্য সংরক্ষণ নিয়ে রাজনীতি করছেন প্রধানমন্ত্রী। রায় আমি পেয়ে গিয়েছি। এবার খেলাটা আমার হবে।"


লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালীনই বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট তৃণমূল জমানায় দেওয়া সমস্ত OBC শংসাপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। আদালত জানিয়েছে, ২০১০ সালের পরে তৈরি হওয়া সব OBC তালিকা বাতিল। অর্থাৎ প্রায় ৫ লক্ষ OBC শংসাপত্র বাতিল হচ্ছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস কমিশন অ্যাক্ট ১৯৯৩ অনুযায়ী নতুন তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকা বিধানসভায় পেশ করে চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত।  সেই নিয়েই এবার সুর চড়ালেন মমতা।