কলকাতা: বছরভর শিরোনামে রইল যে যে খবর, তার মধ্যে অন্যতম নিয়োগ দুর্নীতি মামলা। নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকেও। গ্রেফতারির আগে কয়েক দফায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের মুখেও পড়তে হয় তাঁকে। এমনকী এই জল গড়িয়েছিল শীর্ষ আদালত পর্যন্ত। কিন্তু হয়নি সুরাহা। শেষ পর্যন্ত নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হন মানিক ভট্টাচার্য।
সিবিআইয়ের তলব: চলতি বছর জুন মাসে, ২০১৪’র প্রাথমিক টেট মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের মুখোমুখি হতে হবে তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচীকে। সেই মতো নির্ধারিত সময়ের আগে সিবিআইয়ের নিজাম প্যালেসের দফতরে পৌঁছে যান দু’জনে। অভিযোগ, ২০১৪’র টেটে দ্বিতীয় নিয়োগ তালিকায় থাকা ২৬৯ জনকে বেআইনিভাবে বাড়তি ১ নম্বর করে দেওয়া হয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, এই দু’জনের থেকে তদন্তকারীরা জানতে চান, কার নির্দেশে ২০১৪’র টেটে দ্বিতীয় নিয়োগ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, শুধু ২৬৯ জনকেই কেন ১ নম্বর করে বাড়ানো হল ? নম্বর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কে নিয়েছিল ? সরকারি ফাইলে তার কোনও তথ্য আছে কি না।
অপসারিত মানিক: প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদ থেকে অপসারণ মানিকের। তৃণমূল (TMC) জমানায় প্রায় একদশক ধরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya)। ২০ জুন মানিক ভট্টাচার্যকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
প্রশ্নের মুখে অপসারিত পর্ষদ সভাপতি: শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্টে (High Court) পরপর ২৮টি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় মানিক ভট্টাচার্যকে (Manik Bhattacharya)। স্ত্রী, পুত্র-সহ মানিক ভট্টাচার্যের পরিবারের সকলের সম্পত্তির (property) হিসেব তলব করা হয়। প্রাথমিকভাবে ডিভিশন বেঞ্চে সুরাহা মেলেনি, এমনকী সিঙ্গল বেঞ্চেও কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় মানিক ভট্টাচার্যকে। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় ২১ জুন কলকাতা হাইকোর্টে হাজির হন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সদ্য অপসারিত সভাপতি ও তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। সেখানে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে তাঁর, তাঁর স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ ও কন্যার সম্পত্তির হিসেব জমা দিতে বলা হয়।
ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মুখে: গত ২৭ জুলাই টেট মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের ( ED) জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি ও তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya )। তাঁকে সেদিন বেলা ১২টায় তলব করা হলেও তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছে যান সকাল ৯টা ৪৪ নাগাদ। তারপর চলে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ। ইডি সূত্রে খবর, মানিক ভট্টাচার্যের বাড়ি থেকে তল্লাশিতে মেলে একটি সিডি, যাতে ছিল সংশোধিত তালিকার ২৬৯ জনের নাম ও তাঁদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। মানিক ভট্টাচার্যকে ওই সংশোধিত তালিকা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে ইডি সূত্রে খবর। সিজিও কমপ্লেক্সের ৬ নম্বর ঘরে মানিক ভট্টাচার্যকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ফের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে: ১০ অগাস্ট টেট ( TET ) নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি ও তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে ( Manik Bhattacharya ) ফের তলব করে ইডি। সমস্ত নথি নিয়ে তাঁকে ইডি-র দফতরে আসতে বলা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর।
লুক আউট নোটিস: ২৫ অগাস্ট টেট (TET) দুর্নীতিতে মানিক ভট্টাচার্যের (Manik Bhattacharya) বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের লুক আউট নোটিস। কোথায় গেলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি? কোথাও কোনও খোঁজ না পাওয়ায় লুক আউট নোটিস, দাবি সিবিআইয়ের (CBI)। মানিকের খোঁজে সমস্ত বিমানবন্দরে লুক আউট নোটিস দিচ্ছে সিবিআই। সিবিআইয়ের (CBI) দাবি, এক সপ্তাহ ধরে মানিক ভট্টাচার্যের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে. কিন্তু যোগাযোগ করা যায়নি। মানিকের ফোন সুইচড অফ, কলকাতার ফ্ল্যাট ও নদিয়ার বাড়িতেও খোঁজ মেলেনি, দাবি সিবিআই সূত্রে।
লুকআউট নোটিসের পাল্টা প্রতিক্রিয়া: প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতির বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস(Lookout Notice) জারি করে সিবিআই (CBI)। গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ২৬ অগাস্ট এবিপি আনন্দকে ভিডিও কলে মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya) জানান, যাদবপুরের ফ্ল্যাটেই রয়েছেন তিনি। সিবিআইয়ের সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা করেছেন, আগামী দিনেও করবেন। ভিডিও কলে বলেন, “আমি আমার যাদবপুরের ফ্ল্যাটেই আছি। এখানেই আছি। কোথাও যাওয়ার প্রশ্ন নেই। কোথাও যাইনি। কেন এই বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, তার কোনও সদুত্তর আমার কাছে নেই। কারণ এই বিচারাধীন বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। কিন্তু যেসমস্ত সংস্থা আমাকে যখন যেভাবে, যা সহযোগিতার কথা বলেছে, সেগুলি আমার তরফ থেকে কখনও লঙ্ঘন করা হয়নি। কিন্তু কেন এই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে , আমি জানি না। আমার স্বাভাবিক জীবনটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’
গ্রেফতার মানিক ভট্টাচার্য: পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের পর নিয়োগ দুর্নীতি মামলা ইডির জালে মানিক। ১১ অক্টোবর নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) মামলায় গ্রেফতার করা হয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে (Manik Bhattacharya)। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পর মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করে ইডি (Enforcement Directorate)।
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI