কলকাতা: তাঁর হাতে এখন একাধিক কাজ। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে অন্যধারার ছবি 'টিকিল্যান্ড' (Tikiland)। এছাড়া মুক্তির অপেক্ষায় বেশ কিছু কাজ। যেমন রাজা চন্দের (Raja Chanda) পরিচালনায় ওয়েব সিরিজ 'কাটাকুটি' (Katakuti), রোহন সেনের (Rohan Sen) পরিচালনায় ফিচার ফিল্ম 'অপরাজিতা' (Aparajita)। শ্যুটিং চলছে 'ড. বক্সী' (Dr. Bakshi) ছবিরও। এছাড়া মুক্তি পেয়েছে একাধিক মিউজিক ভিডিও (Music Videos)। আর সবকিছু নিয়ে এত ব্যস্ততার মাঝেও এবিপি লাইভকে (ABP Live) সময় দিলেন অভিনেতা দেবতনু (Devtanu)। একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন তাঁর অভিনয় সফরের কথা।


প্রশ্ন: প্রথমেই তো এতগুলো কাজের জন্য শুভেচ্ছা রইল। এই পর্যন্ত সিনেমা জগতে আপনার যাত্রাপথটা কেমন ছিল?
দেবতনু: স্কুলে পড়ার সময় থেকে আমি থিয়েটার করি। এরপর বেশ কিছুদিন এক সফ্টওয়্যার কোম্পানিতে 'ইস্টার্ন রিজিয়ন ম্যানেজার' হিসেবে বেশ কিছুদিন চাকরি করেছি। বেশিরভাগ সময়েই দিল্লিতে থাকতে হত। তারপর হঠাৎই মনে হতে লাগল যে এই চাকরিটা আমার দ্বারা ঠিক হবে না। অনেকটা 'স্বদেশ'-এর কনসেপ্টে অনুপ্রাণিত আমি। বাংলা খুব টানত। ফলে ফিরে আসি নিজের জায়গায়। তারপরে শুরু হয় কাজ।


প্রশ্ন: যে যে কাজ আপনার হাতে রয়েছে এখন, সেখানে অনেক বড় বড় নামের সঙ্গে অভিনয় করতে হয়েছে। কিন্তু পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় এঁদের তুলনায় তো আপনি একেবারেই নতুন। কী কী শিখলেন?
দেবতনু: সকলের সঙ্গেই কাজ করার অভিজ্ঞতা ভীষণ ভাল। এঁর বহুদিন ধরে অভিনয় করছেন, অভিনয় নিয়ে চর্চা করেছেন। বিশেষত আমি উল্লেখ করব পরমদার (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) কথা। দেখুন, আমি একটা দর্শনে বিশ্বাস করি, যে অভিনয় অনেকটা ফুটবল খেলার মতো। পরমদার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে, ওঁর ভাবনাও খানিকটা তেমনই। পরমদা সেটে যে ব্যক্তিত্ব, যে ভাব নিয়ে চলেন, সেটা আমাদের মতো নতুন প্রজন্মের কাছে প্রচণ্ড অনুপ্রেরণামূলক। সহ-অভিনেতাকে তাঁর প্রাপ্য জায়গাটা দেওয়া, 'বল পাস' করার মতো অভিনয় করা, এই বিষয়গুলো ওঁর মধ্যে আছে। পরমদার সঙ্গে খুব কানেক্ট করতে পেরেছি। অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।


অন্যদিকে শান্তি জ্যেঠুর (শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়) ব্যাপারে আমার তো বলার কোনও স্থানই নেই। উনি এতটাই সিনিয়র এবং এত ভাল একজন অভিনেতা। 


এছাড়া শুধু অভিনেতারা নন, ছবি তৈরি যেহেতু একটা টিম-ওয়ার্ক, ফলে পরিচালক-চিত্রগ্রাহক-অভিনেতা সকলকে একসঙ্গে মিলে কাজটা করতে হয়। তাঁদের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকাটা খুব জরুরি। ফলে আমি চেষ্টা করি সেটে পৌঁছে তাঁদের সঙ্গে আগে কমফর্টেবল হয়ে নেওয়ার। কারণ আমাকে তাঁদের সঙ্গে অভিনয় করতে হবে।


আরও পড়ুন: ABP Exclusive: দাদুর পথেই পৃথা, বড়পর্দায় আত্মপ্রকাশ পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতনির, প্রকাশ্যে ফার্স্ট লুক


প্রশ্ন: 'টিকিল্যান্ড'-এর গান মুক্তি পেয়েছে। প্রথম 'ভিএফএক্স' গান...
দেবতনু: পশ্চিমবঙ্গের প্রথম ভিএফএক্সে তৈরি হওয়া গান। মানে গোটা গানটাই ভিএফএক্সে শ্যুট করা হয়েছে। আমি, আমার অভিনেত্রী অর্থাৎ শুভস্মিতা এবং বাকি নৃত্যশিল্পীরা, গ্রিন স্ক্রিনে শ্যুট করেছি। বাকি গোটা সেট, প্রপ, আমাদের হাঁটাচলা ইত্যাদি যা কিছু দর্শক দেখবেন সবটাই ভিএফএক্সে ডিজাইন করা। ছবিটাও ভিএফএক্স। চেষ্টা ছিল কিছু আলাদা করার। ফলে এই আইটেম গানের জন্য 'লার্জার দ্যান লাইফ' সেট তৈরি করতে আমরা ভিএফএক্স বেছে নিই।


প্রশ্ন: ২০২০-তে 'মনের মানুষ' ও ২০২১ সালে 'হৃদ মাঝারে'। পরপর দুবছর দুটো মিউজিক ভিডিওই মিলিয়ন ভিউ ক্রস করেছে...
দেবতনু: হ্যাঁ। দুটোই ভাইরাল। প্রথম কাজটা করি যখন এতটা আশা করিনি। তবে সেটা ভাইরাল হওয়ার পর অনেক মিউজিক ভিডিওর অফার আসতে থাকে। কিন্তু ওই একটা ভাইরাল হলে যে সেটাই করে যেতে হবে, আমি সেই ট্রেন্ডে বিশ্বাসী নই। মিউজিক ভিডিওর ঠিকঠাক গল্প হলে তবেই তাতে আগ্রহী হই। যেমন 'মনের মানুষ' ও 'হৃদ মাঝারে' দুটোই গল্প বলে। এছাড়া আরও একটা মিউজিক ভিডিওর কাজ শেষ করলাম। সেটা 'হিমু' ও 'রূপা' চরিত্র দুটিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তৈরি। আমি সবসময় এক্সপেরিমেন্ট করতে বেশি পছন্দ করি। 


প্রশ্ন: অর্থাৎ ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন হওয়া সত্ত্বেও এক্সপেরিমেন্ট করতে দ্বিধা বোধ করেন না?
দেবতনু: একদম। নিঃসন্দেহে। আমি ট্রেন্ড মানি না। আমি দর্শকদের অনুরোধ করব 'কাটাকুটি' মুক্তি পেলে সেটা যেন তাঁরা দেখেন। আমি এযাবৎ যে রোমান্টিক ইমেজ আমার বজায় রেখে এসেছি, সেটা ভেঙে নতুন কিছু পাবেন তাঁরা। 


প্রশ্ন: অসফল হওয়ার ভয় হয় না?
দেবতনু: এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমার বাবা-কাকা বা কোনওরকমের সাপোর্ট কেউ ছিল না। যখন আমি চাকরি ছেড়েছি তখন সামনের রাস্তাটা পুরোটাই অন্ধকার ছিল। তখন রিস্ক নিতে পেরেছি মানে আগামীতেও পারব, এখনও পারছি। 'ফুল যদি ভাল হয়, গন্ধ ছড়াতে বেশি সময় লাগে না', এটা আমি বিশ্বাস করি। ভাল কাজ করলে সাফল্য আসবেই।


প্রশ্ন: 'টিকিল্যান্ড' সম্পর্কে যদি বিস্তারিত জানান।
দেবতনু: আমি আমার গোটা জীবনের স্ট্রাগলটাকে ফ্রেমে বেঁধে স্ক্রিপ্টে পরিণত করে ছবি বানিয়েছি। আমার মনে হয় প্রত্যেক 'স্ট্রাগলিং' অভিনেতা এই ছবির সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করতে পারবেন। 


প্রশ্ন: রাজা চন্দের প্রথম ওয়েব সিরিজে আপনি রয়েছেন বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্রে...
দেবতনু: হ্যাঁ। সিরিজে প্রধান চরিত্রে সৌরভদা (সৌরভ দাস) রয়েছে। আমার চরিত্রটাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেটা সম্পর্কে বেশি কিছু বলা যাবে না। তাহলে সিরিজের মজাটাই নষ্ট হয়ে যাবে। 


প্রশ্ন: মার্চ জুড়ে তোমার একাধিক কাজের মুক্তি। তারপর?
দেবতনু: মার্চের পরে কী আমি সত্যিই জানি না। তবে একটা কাজের কথা চলছে। প্রযোজনা সংস্থার আমি নাম নেব না, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় প্রযোজনা সংস্থা তারা। একটা ফিচার ফিল্মের মুখ্য চরিত্রের জন্য কথা হচ্ছে। দেখা যাক, কী হয়। এছাড়া বেশ কিছু সিরিজের কাজ আছে।


আরও পড়ুন: Kaushik Sen Exclusive: নাটকের দলের ৩০ বছর, থিয়েটারকে সময় দেব বলেই ধারাবাহিক করার সিদ্ধান্ত: কৌশিক সেন