'সুন্দরী মেয়ে ভোগ খেতে এলে খিচুড়ি পরিবেশন নিয়ে প্রতিযোগিতা চলত'
ছোটবেলার দুর্গাপুজোর স্মৃতি এখনও একেবারে ঝকঝকে সঙ্গীতশিল্পী উপল সেনগুপ্ত-এর কাছে।
কলকাতা: 'পুজোর সময় ব্লকে সুন্দরী মহিলা খেতে এলে ইচ্ছা করত, তাঁর পাতে খিচুড়ি অথবা পায়েস দিতে। কিন্তু ছোট বলে ভরসা করত না কেউ। দায়িত্ব পড়ত নুন, লেবু, জল দেওয়ার। তখন খুব মনখারাপ হত। তারপর যখন আস্তে আস্তে বড় হচ্ছি, আমরাও ছোটদের ওপর নুন, লেবুর দায়িত্ব দিয়ে নিজেরা খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে থাকতাম। ছোটদের তখন কী রাগ!' কাজের সূত্রে কলকাতার পুজোয় থাকা হয় না গত ১৫ বছর। তবে ছোটবেলার দুর্গাপুজোর স্মৃতি এখনও একেবারে ঝকঝকে সঙ্গীতশিল্পী উপল সেনগুপ্ত-এর কাছে।
ছোটবেলার পুজো কেটেছে সল্টলেকে। সেসময় এত থিম পুজোর চল ছিল না। ব্লকে ব্লকে ছোট ছোট পুজো হত। ৪ দিন ধরে সেখানে আয়োজন করা হত খাওয়া দাওয়া, নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। উপল বলছেন, 'সেসময় ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যেত গোটা ব্লক। কোনওটা বয়স্কদের দল, কোনওটা মহিলাদের, কোনওটা মাঝবয়সীদের। আর সবচেয়ে ছোটদের দলটা ছিল আমাদের। সবাই নাটক করত। রিহার্সাল চলত অনেকদিন থেকে। অনুষ্ঠানের দিন কী উত্তেজনা! কাদের নাটক সবচেয়ে ভালো হবে, কারা বেশি প্রশংসিত হবে.. সেসময়ের পুজোর একটা অদ্ভুত বাঁধন ছিল। ছোটবেলার সেই পুজোর দিনগুলোর কথা এখনো খুব মনে পড়ে।'
পুজো আর ভোগ, একেবারেই অবিচ্ছেদ্য। অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া দাওয়ার আয়োজনও হত উপলের পাড়াতে। সঙ্গীতশিল্পী বলছেন, 'পুজোর সময় ব্লকে সুন্দরী মহিলা খেতে এলে ইচ্ছা করত, তাঁর পাতে খিচুড়ি অথবা পায়েস দিতে। কিন্তু ছোট বলে ভরসা করত না কেউ। বড় দাদারা বলত, খিচুড়ি দিতে পারবি না, পড়ে যাবে। তারাও তখন হয়ত কাউকে আকর্ষণ করতে চাইছে। সেইটা প্রায় প্রতিযোগিতার মত। আমাদের ওপর দায়িত্ব পড়ত নুন, লেবু, জল দেওয়ার। তখন খুব মনখারাপ হত। মনে হত, নুন, লেবু, জল যারা দেয়, তাদের কোনও মান-সম্মান নেই। তারপর যখন আস্তে আস্তে বড় হচ্ছি, আমরাও ছোটদের ওপর নুন, লেবুর দায়িত্ব দিয়ে নিজেরা খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে থাকতাম। ছোটদের তখন কী রাগ!'
তবে গতবছর করোনা পরিস্থিতিতে বহু বছর বাদে কলকাতার পুজোয় শহরেই ছিলেন শিল্পী। মনখারাপ করা গলায় বললেন, 'এবার দেখলাম, পুজো খুব বানিজ্যিক হয়ে গিয়েছে। আমাদের পুজোটা তো বেশ নাম করে গিয়েছে। অনেক পুরষ্কারও পাচ্ছে। তবে ছোটবেলার সেই ঘরোয়া পুজোটা আর হয় না।'